|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
তবু ভাল |
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা হইতে বস্ত্রশিল্পমন্ত্রী দয়ানিধি মারানের ইস্তফার সহিত বস্ত্রশিল্প মন্ত্রকের কাজকর্মের কোনও সম্পর্ক নাই। টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে তাঁহার নাম জড়াইয়া যাওয়াতেই তাঁহাকে পদত্যাগ করিতে হইল। একই ভাবে টেলিকম মন্ত্রী ডি এম কে-র এ রাজার নামও জড়াইয়া গিয়াছিল। কিন্তু তিনি সহজে ইস্তফা দিতে চাহেন নাই। ক্রমাগত নিজেকে নির্দোষ ঘোষণা করিয়া মন্ত্রিত্বের পদ আঁকড়াইয়া প্রকারান্তরে তিনি এক দিকে যেমন সুষ্ঠু তদন্তের কাজে পরোক্ষ বাধা সৃষ্টি করিতেছিলেন, অন্য দিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা তথা ইউ পি এ-২-এর ভাবমূর্তিও কলঙ্কিত করিতেছিলেন। জোট রাজনীতির বাধকতার কাছে নত হইয়া প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের পক্ষেও আপসহীন মনোভাব লইয়া অভিযুক্ত মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা সম্ভব হইতেছিল না। আর যত দিন যাইতেছিল, ততই ইউ পি এ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতিপরায়ণতার অভিযোগ জমা হইতেছিল। দয়ানিধি মারান ডি এম কে’র প্রতিনিধি হইলেও তাঁহার পূর্বসূরি রাজা’র ন্যায় একগুঁয়েমি করেন নাই। অভিযোগ উঠিবামাত্র সরিয়া দাঁড়াইবার সিদ্ধান্ত লইয়াছেন। ইহা শুভবুদ্ধির পরিচায়ক। ইউ পি এ সরকার ও তাহার প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তির পক্ষেও অনুকূল একটি সিদ্ধান্ত।
অভিযোগ প্রমাণিত না-হওয়া অবধি অভিযুক্তকে নির্দোষ বলিয়া গণ্য করিতে হইবে, ইহা সাধারণ ভাবে সত্য হইলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিপত্তির অধিকারী হন, তবে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেই তাঁহার সরিয়া দাঁড়ানো উচিত। তাহাতে আপন পদাধিকার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া সাক্ষীদের ভয় দেখানো বা তদন্তপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়। এ ভাবে তদন্তে সহায়তা করিলে অভিযুক্তের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়। টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা প্রাণপণে মন্ত্রিত্ব আঁকড়াইয়া থাকায় এবং তাঁহার দলের শীর্ষ নেতৃত্বও তাঁহার সততা লইয়া শংসাপত্র জারি করিতে থাকায় বিরোধীদের পক্ষে ইউ পি এ সরকার ও মনমোহন সিংহকে সংসদের ভিতরে-বাহিরে কোণঠাসা করা অপেক্ষাকৃত সহজ হইয়া পড়ে। সরকার দুর্নীতিগ্রস্তকে আড়াল করিতে উদ্গ্রীব, প্রধানমন্ত্রী নিজেও কেলেঙ্কারি ও অনিয়মের শরিক, তাই তিনি কঠোর অবস্থান গ্রহণে অপারগ ইত্যাকার বিভিন্ন কলঙ্কবাণ সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে বিদ্ধ করিতে থাকে। এ রাজার ক্ষেত্রে দক্ষিণী শরিক ডি এম কে-র নেতা করুণানিধির চাপের কাছে যে-অসহায়তায় প্রধানমন্ত্রীকে নতিস্বীকার করিতে হইয়াছিল, তাহার পিছনে তামিলনাড়ু সহ পাঁচটি রাজ্যে ঘনায়মান বিধানসভা নির্বাচনের পরিণামভয় থাকিলেও দয়ানিধি মারানের ক্ষেত্রে তেমন শঙ্কা ছিল না। প্রতিপক্ষ এ ডি এম কে-র কাছে নির্বাচনে বিপর্যস্ত ও রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত ডি এম কে নেতৃত্বের পক্ষে কেন্দ্রের সহিত দরকষাকষি করার ক্ষমতাই করুণানিধি হারাইয়া ফেলেন। এই পরিস্থিতি যেমন সরকারকে তাঁহার কন্যা কানিমোজির প্রতি কঠোর হইতে সাহসী করে, তেমনই মারানের ক্ষেত্রেও কড়া মনোভাব গ্রহণে উৎসাহিত করে। দ্বিতীয় ইউ পি এ-র মেয়াদের অর্ধেকও পার হয় নাই। এখনই নানাবিধ আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে সরকার জর্জরিত। সব কিছু ছাপাইয়া উঠিয়াছে টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ইহার নিষ্পত্তি করিয়া যাইতে হইবে। জনাদেশে নির্বাচিত হইয়া কোনও রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী যে শাসনক্ষমতা হাসিল করে, তাহাতে আসীন থাকার নৈতিক বৈধতা কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে অর্জন করিতে হয়। উপর্যুপরি দুর্নীতির অভিযোগে বারংবার কাঠগড়ায় দাঁড়াইতে হইলে, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিবার দায়ে নিয়মিত বিচারবিভাগের তীব্র ভর্ৎসনা হজম করিতে হইলে জনচক্ষে সেই বৈধতা আংশিক ভাবে হ্রাস পায় বইকী! শাসনপ্রণালীতে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখিতেও যাবতীয় অনিয়ম দৃঢ়ভাবে উৎপাটন করা তাই জরুরি। |
|
|
|
|
|