প্রত্নসামগ্রী সংরক্ষণে মমতার কাছে গবেষকেরা
গৌড়, আদিনা, পিছলি কাঁঠাল, কান্ডারন, রানিগঞ্জ ও বরিন্দ মাটির তলা থেকে বার হওয়া পাল, গুপ্ত ও সুলতানি আমলের মুর্তি ও প্রত্নসামগ্রী পাচার বন্ধে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করলেন মালদহের গবেষকেরা। জেলার গবেষকদের অভিযোগ, মূর্তি পাচার ও প্রত্নসামগ্রী বিক্রির কথা জেনেও তা বন্ধ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি মালদহের জেলা প্রশাসন, পুলিশ কর্তা থেকে শুরু করে ভারতীয় পুরাতত্ব বিভাগ ও পশ্চিমবঙ্গ পুরাতত্ব বিভাগের কর্তারা। বরং একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে মুর্তি পাচার ও প্রত্নসামগ্রী বিক্রির বন্ধের অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। মালদহের সবচেয়ে প্রবীণ পুরাকীর্তি সংরক্ষক ও গবেষক কমল বসাক। কমলবাবু আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, “১৯৬৪ সাল থেকে মালদহ জেলার প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছি। ১৯৭২ সাল থেকে জেলার মূর্তি ও প্রত্নসামগ্রী পাচার ও বিক্রি শুরু হয়েছে। আজও সেই মূর্তি পাচার ও প্রত্নসামগ্রী দেদার বিক্রি চলছে। প্রায়ই খবর পাই ওই এলাকা থেকে মূর্তি বেরিয়েছে। ছুটে গিয়ে দেখি সেই মূর্তি নেই। উধাও হয়ে গিয়েছে। পরে শুনতে পারি সেই মূর্তি মোটা টাকায় বাইরে পাচার হয়ে গিয়েছে।” গাজলের রানিগঞ্জে ১৪৪৩ খ্রীস্টাব্দে বাবা সিকন্দার শাহের সঙ্গে তাঁর ছেলে আজম শাহের যুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধক্ষেত্র বতর্মানে চাতরার বিল। সেই বিলের জল শুকিয়ে গেলেই বার হচ্ছে সুলতানি যুগের নানা অস্ত্রশস্ত্র। কমলবাবুর অভিযোগ, সেগুলি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। মূর্তি পাচার ও প্রত্নসামগ্রী বিক্রি বন্ধে বহু বার আর্জি জানিয়েও কিছু হয়নি। তিনি বলেন, “বাধ্য হয়েই জেলা থেকে মূর্তি পাচার ও প্রত্নসামগ্রী বিক্রি রুখতে রাজের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছি।” কমল বাবুর অভিযোগ যে অমূলক নয় তা কয়েকদিন আগে গৌড়ে হানা হাতেনাতে টের পায় পুলিশ। সুলতানি আমলে বাদশা ও প্রজাদের ব্যবহৃত ৪০টির বেশি পোড়ামাটির কলম-দোয়াত,পানপাত্র, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সামগ্রী ও শতাধিক পোড়ামাটির ভাঙা সামগ্রী পুলিশ উদ্ধার করলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, উদ্ধার করা প্রত্নসামগ্রী জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় ও পশ্চিমবঙ্গ পুরাতত্ত্ব বিভাগকে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠি পাওয়ার পরেও কেউ তা নিয়ে না যাওয়ায় সেগুলি ইংরেজবাজার থানায় বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধায় বলেন, “প্রত্নাসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে ঠিকই। গৌড়ে হানা দিয়ে প্রচুর প্রত্নসামগ্রী উদ্ধারও করা হয়েছে। কিন্তু প্রত্নসামগ্রী কেনার ব্যাপারে কেউ অভিযোগ না দেওয়ায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারিনি। গৌড় থেকে উদ্ধার করা প্রত্নসামগ্রী নিয়ে যাওয়ার জন ভারতীয় ও পশ্চিমবঙ্গ পুরাতত্ত্ব বিভাগকে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা না নিয়ে যাওয়ায় ওই প্রত্নসামগ্রীগুলি পুলিশি হেফাজতে রাখা আছে। এই বাপারে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের মালদহের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক দিলীপচন্দ্র দে বলেন, “গৌড়ের স্মৃতিসৌধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের। সৌধের বাইরের এলাকা থেকে কোনও কিছু পাওয়া গেলে তা জেলাশাসকের এক্তিয়ারভুক্ত। জেলাশাসকই ওই উদ্ধার হওয়া প্রত্নসামগ্রীর মালিক। সেই জন্য ওই প্রত্নসামগ্রী নিতে যাই নি। পশ্চিমবঙ্গ পুরাতত্ত্ব বিভাগের উপ অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “আমি এখনও পুলিশের কোনও চিঠি পাই নি। চিঠি পেলেই মালদহে যাব। গৌড় থেকে যে সমস্ত প্রত্নসামগ্রী পাওয়া গিয়েছে সেগুলির কিছু স্টেট মিউজিয়ামে ও বাকিটা মালদহ মিউজিয়ামে ডিসপ্লে করে রাখা হবে।” প্রত্নসামগ্রী উদ্ধারে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা দেখা গেলেও মূর্তি পাচার রুখতে ও মূর্তি উদ্ধারের বাপারে পুলিশের বিরুদ্ধে নিস্ত্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। বরিন্দ এলাকা থেকে উদ্ধার করা কষ্টিপাথরের কয়েক কোটি টাকা মূলের বিষ্ণু মূর্তি-সহ প্রায় ১২ টির বেশি গাজল, বামনগোলা ও হবিবপুর থানায় পড়ে রয়েছে। জেলা মিউজিয়ামে সেই মূর্তিগুলি না পাঠিয়ে থানা চত্বরের ভিতরেই তেল সিঁদুর মাখিয়ে পুজো করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পাল আমলের একটি মূর্তিকে বামনগোলা থানার ওসি চেম্বারের দেওয়ালে গাঁথা হয়েছে। এই বাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “যেদিন মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে ওই মূর্তিগুলি চাইবেন সেদিনই দিয়ে দেব।” যদিও এই বাপারে মালদহ মিউজিয়ামের কিউরেটর সাধন দেব বলেন, “থানার মূর্তিগুলি মিউজিয়ামে পাঠানোর জন বহুবার চিঠি পাঠিয়েছি। আজ পর্যন্ত সেগুলি মিউজিয়ামে জমা পড়েনি। জেলাশাসক রাজেশ সিংহ বলেন, “জেলা থেকে মূর্তি পাচার ও প্রত্নসামগ্রী বিক্রির অভিয়োগ শুনেছি। মূর্তি পাচার ও প্রত্নসামগ্রী বিক্রি রুখতে বাবস্থা নেওয়া হবে।”
First Page Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.