সামনে নীল সমুদ্র, যেন কোনও শেষ নেই, পা ডুবে যাচ্ছে সাদা বালিতে, ক্রিসক্রস পেরিয়ে যাচ্ছে কিছু লাল কাঁকড়া, পাশের ঝাউ বন থেকে ঝিঁঝিঁদের নন-স্টপ কনসার্ট আর যে দিকে দু’চোখ যায়, শুধুই আপনি। আর হয়তো আপনার স্পেশাল কেউ। এই হল তাজপুর। বাঙালি দীঘাকে তো হাতের তালু করে ফেলেছে, মন্দারমণিও হবে হবে করছে, কিন্তু এই দুইয়ের মাঝে অবস্থিত তাজপুর এখনও অত অত্যাচার দেখেনি। ভাগ্যিস। এখানে সমুদ্র প্রায়ই অনেকটা করে পিছিয়ে যায় আর তখনই আপনি কত আজব সব জিনিসের দেখা পাবেন বালিতে। জল নিয়েছিল এক সময়, এখন ফিরিয়ে দিয়ে গেল। পাশের ঝাউ বনে অনেক রকম পাখি এসে ভিড় জমায়। সূর্যাস্তের ঠিক আগের লগ্নে এদের কিচিরমিচির যখন তুঙ্গে উঠবে, তখনই আপনিও রেডি হয়ে যান, সি-বিচে টেন্ট খাটিয়ে রাত কাটানোর জন্যে। পূর্ণিমার রাত হলে তো কথাই নেই। ভয় নেই হোটেলও আছে। গাড়ি নিয়ে দীঘা যাওয়ার পথে চাউলখোলা, সেখান থেকে বালিসাহি আর তার পরই তো...আপনি একলা! |
শিলং থেকে বাস কিংবা গাড়ি করে ৫৪ কিমি, চেরাপুঞ্জি। যেখানে নাকি বৃষ্টি থামেই না। বৃষ্টি এখানে দু’ভাবে পড়ে, মে থেকে সেপ্টেম্বর প্রবল তোড়ে, যেন প্রতি মুহূর্তেই ঝাঁঝাচ্ছে আর তার পর থেকে তেজ হারিয়ে কিন্তু ক্রমাগত। বৃষ্টি যখন ফুল ফর্মে, তখন চেরাপুঞ্জি অসংখ্য খুচরো নদী-নালা’র আসর। সে জলে পা ডুবিয়ে ঘুরে আসুন মওসমাই জলপ্রপাত আর গুহা। অন্ধকার গুহার মধ্যে জলের স্রোত ঠেলে এগিয়ে যাওয়া এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। মেঘ সরলেই সামনে সবুজ বাংলাদেশ। চেরাপুঞ্জি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে লাইকিনসু গ্রামে ট্রেক করে অবশ্যই দেখে আসুন জীবন্ত গাছের শেকড় দিয়ে তৈরি ‘লিভিং রুট ব্রিজ’। আর একটা কথা জেনে রাখা ভাল, চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টির ফাঁকে বেশ এলাহি এক চোট রোদ্দুরও ওঠে। আর সেই রোদে প্রাণ পায় এখানকার বিখ্যাত আনারস, কমলালেবু আর অর্কিড। |
সমুদ্র থেকে প্রায় ৮০০০ ফুট উঁচু এই পাহাড়ি অঞ্চল, একেবারে অন্য মুডে নিয়ে গিয়ে ফেলবে আপনাকে। চিনের বর্ডার ঘেষে থাকা বমডিলায় আসতে হলে আসামের তেজপুর থেকে বাস বা গাড়ি ধরুন। আর নয় তো রাঙাপাড়া রেল স্টেশনে নেমে বমডিলার যাত্রা শুরু করুন। তেজপুর থেকে হেলিকপ্টার চড়ে মেঘ আর পাহাড়চুড়ো ছুঁয়েও এখানে আসা যায়। বৌদ্ধ গুম্ফা ছড়িয়ে থাকার ফলে বমডিলায় যেন সব সময়ই শান্তির পরিবেশ। এখানে দাঁড়িয়ে প্রকৃতিকে আপনার পড়শি মনে হবে। কামেং উপত্যকায় রোদ্দুর আর মেঘের ছায়া’রা একে অন্যকে ছাপিয়ে যখন প্রেজেন্ট প্লিজ বলছে ঠিক তখনই হয়তো শীতল হাওয়া কানে ফিসফিসিয়ে যাবে, পিছনে বরফ-মোড়া কাংতো, গোরিচান পিক আপনার জন্যেই ঝলমলাচ্ছে তো! |
উত্তরবঙ্গের এক মাত্র প্ল্যান্ড সিটিতে এসেই সব্বাই ছুট লাগায় রাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের রাজবাড়ি দেখতে। ইয়োরোপীয় ধাঁচে তৈরি এই প্যালেস বেশ ছিমছাম, কোথাও কোনও বাহুল্য নেই কিন্তু একই সঙ্গে রাজবাড়ির আড়ম্বরও তরতাজা। কোচবিহারে শহুরে সব রকম আরাম খুঁজে পেলেও শহরের উদ্দাম ব্যস্ততা দেখতে পাবেন না। রাজবাড়ি ছাড়াও অবশ্যই দেখবেন মদনমোহন বাড়ি। এই মন্দিরে মদনমোহন ছাড়াও মা কালী, মা ভবানী, মা তারা ও বড়দেবী’র প্রতিমা আছে। দুর্গা পুজোর ঠিক পরে, এখানে খুব বড় রাসের মেলা বসে। এই সময়ে কোচবিহারকে যেন চেনাই যায় না। হাওয়ায় তো উৎসব তখন। সে উৎসবের রেশ পাবেন পাখিদের মধ্যেও, এখান থেকে খানিক দূরে, রসিকবিল-এ। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের বাংলোয় বসে বিরাট লেক-এর পাড়ে চেনা-অচেনা পাখির মেলা মন ভরাবেই। গ্যারান্টি। |