|
|
|
|
বর্ধমান মেডিক্যাল |
লেবার রুমে ঢোকানো হল না, প্রসব মেঝেতেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা• বর্ধমান |
প্রসব যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছিলেন নাসিমা। বারবারই চলে যাচ্ছিলেন লেবার রুমের সামনে। কিন্তু তাঁর অবস্থা বোঝার মতো ধৈর্য ছিল না সেখানে উপস্থিত কারও। প্রত্যেক বারই ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। শেষমেশ ওয়ার্ডের মেঝেতেই সন্তান প্রসব হয়ে গেল। কোনও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়। এই ঘটনা বৃহস্পতিবার দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের।
কেন তাঁর আসন্নপ্রসবা স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়া হল, জানতে চেয়ে শুক্রবারই হাসপাতাল সুপারের কাছে চিঠি দিয়েছেন মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুয়াদ শেখ। লেবার রুম থেকে ওই প্রসূতিকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সুপার সুবোধ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “ওই প্রসূতিকে লেবার রুম থেকে ফিরিয়েই দেওয়া হয়েছিল। কেন এমন ঘটেছে তার কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে ওই বিভাগের কর্তব্যরত নার্সদের কাছ থেকে। ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের সাজার সুপারিশ করা হবে।” |
|
নিজস্ব চিত্র। |
মঙ্গলকোটের ওই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন সুয়াদ। তাঁর কথায়, “মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে ভরসা রাখতে পারিনি। ওখানে শিশু প্রসবের পরে অনেক সময়ে সমস্যা দেখা দেয়। তাই সরাসরি মঙ্গলকোট থেকে বর্ধমানে চলে এসেছিলাম, যাতে স্ত্রীর প্রসব নির্বিঘ্নে হয়। কিন্তু সেখানেও এই বিপত্তি!” তবে স্বাভাবিক ভাবে প্রথম পুত্র সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে নাসিমা এখন সুস্থ। শুক্রবার হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। গ্রামে ফেরার পথে নাসিমা বলেন, “তখন প্রচণ্ড ব্যথা। কাতর হয়ে বার বার লেবার রুমের কাছে চলে যাচ্ছিলাম। নার্সদের বলছিলাম, দিদি, আমার সময় হয়ে গিয়েছে। ছেলে হবে। আপনারা একটু দেখুন। কিন্তু আমাকে বকেঝকে, গালিগালাজ করে বেডে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। শেষে আর সহ্য করতে পারিনি। বেডের পাশে মেঝেতেই যন্ত্রণার চোটে বসে পড়ি। সেখানেই আমার প্রসব হয়ে যায়। আমি জ্ঞান হারাই।”
এ দিনের ঘটনায় অভিযোগ, মেঝেতে প্রসবের পরেও সদ্যোজাত বা প্রসূতির দিকে নজর দেননি ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সরা। ওই সময়ে ওয়ার্ডে হাজির ছিলেন সাহানারা বিবি, রেখা দাস, অনিলা ঘোষেরা। তাঁদের অভিযোগ, “হাসপাতালের মেঝেতে ওই মহিলার প্রসব হয়ে যেতেই আমরা ভয় পেয়ে যাই। চিৎকার করে নার্সদের ডাকতে শুরু করি। অনেক ডাকাডাকির পরে এক নার্স এসে ঘটনাটি দেখেন। তার পরে শিশু-সমেত ওই বধূকে লেবার রুমে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু এই আধঘণ্টার দেরিতে দুধের শিশুটার তো প্রাণও যেতে পারত!”
দিন কয়েক আগেই গর্ভযন্ত্রণা নিয়ে আসা এক প্রসূতিকে কাটোয়া হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দিয়েছিল অগ্রদ্বীপ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স জানিয়েছিলেন, চিকিৎসক বর্ধমান শহরে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছেন। তাই প্রসব করানো সম্ভব নয়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পথেই কাটোয়া স্টেশনের ওভারব্রিজে প্রসব হয়ে যায় সন্তান।
বর্ধমান মেডিক্যাল হাসপাতালের সুপারের কাছে সুয়াদ শেখ এ দিন যে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাতে সাক্ষ্য দিতে সই করেছেন ১৯ জন। তাঁদের মধ্যে নারায়ণ মাঝি, সহদেব মালিকেরা এক বাক্যে বলেন, “হাসপাতালের বেড থেকে ঠিক সময়ে এক প্রসূতিকে যে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়নি, সেটা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়।” স্থানীয় একটি সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানের সদস্য অমিতাভ ঘোষ বলেন, “একটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছ থেকে এই ধরনের গাফিলতি আশা করা যায় না। কর্তৃপক্ষের উচিত গাফিলতিতে জড়িতদের সাজা দেওয়া।”
হাসপাতালের সুপার এ দিন বলেন, “এখানে স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগে অনেক সমস্যা। মাত্র ৬০টি শয্যা। বছরে প্রায় ২০ হাজার শিশু এখানে জন্মায়। প্রসূতিরা আসেন কাছাকাছি পাঁচ-সাতটি জেলা থেকে। কলকাতার বহু হাসপাতালেও বছরে সাত-আট হাজারের বেশি শিশুর জন্ম হয় না। সেদিক থেকে আমরা অনেক এগিয়ে। তবে আগামী দিনে আমরা ওই ওয়ার্ডে নতুন একটি তল নির্মাণের চেষ্টা করছি। সেক্ষেত্রে এক সঙ্গে প্রায় ২০০ শয্যা বেড়ে যাবে।”
তবে নতুন তল নির্মাণের কথা এখনও যে শুধু প্রস্তাবেই সীমাবদ্ধ, তা কবুল করেছেন তিনি। |
|
|
|
|
|