|
|
|
|
জেলার সব ব্লকে হবে পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা• পুরুলিয়া |
অপুষ্ট শিশুদের স্বাস্থ্যোদ্ধারে ইউনিসেফের সহযোগিতায় পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে উদ্বোধন হয়েছে এই পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রের। এই নিয়ে জেলায় তিনটি এ রকম কেন্দ্র চালু হল। রাজ্যের স্বনিযুক্তি প্রকল্প ও স্বনির্ভর গোষ্ঠী দফতরের মন্ত্রীর শান্তিরাম মাহাতো, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিলাসীবালা সহিস, পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়, জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মধ্যপ্রদেশের অনুন্নত এলাকায় ছড়িয়ে থাকা এ ধরনের কেন্দ্রের অনুকরণে অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে ঝালদা ২ ব্লকের বেগুনকোদর গ্রামে জেলার প্রথম পুনর্বাসন কেন্দ্র গত বছর সেপ্টেম্বরে চালু করে জেলা প্রশাসন তথা স্বাস্থ্য দফতর। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) হৃষিকেশ মুদি বলেন, “ঝাড়খণ্ডেও এমন পুনর্বাসন কেন্দ্র আছে। এই কেন্দ্রগুলিতে কী ভাবে অপুষ্ট শিশুদের ন্যূনতম পুষ্টিমাত্রার উপরে তুলে আনা হয়, সরেজমিন তা দেখে এসেছিলাম। ওই সব কেন্দ্রের অনুকরণে এই জেলায় পরীক্ষামূলক ভাবে বেগুনকোদরে প্রথমে একটি কেন্দ্র চালু করা হয়।” ঝালদা ১ ব্লকেও একটি পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু হয়েছে।
|
|
পুরুলিয়া হাসপাতালে শুক্রবার উদ্বোধন হল কেন্দ্রের। নিজস্ব চিত্র। |
জেলা প্রশাসন আরও ছ’টি ব্লকে এ ধরনের কেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্লকগুলি হল: মানবাজার ২, বান্দোয়ান, আড়শা, বরাবাজার, বাঘমুণ্ডি ও বলরামপুর। অতিরিক্ত জেলাশাসক জানান, বেগুনকোদর ছাড়াও বাঁকুড়ার জেলাশাসক এখানে এসে কেন্দ্রগুলি দেখে গিয়েছেন। অন্য কিছু জেলাও খবর নিচ্ছে। বাঁকুড়াতেও এ ধরনের কেন্দ্র চালু হবে। এ দিন পুরুলিয়ার সাংসদ নরহরি মাহাতো অযোধ্যা পাহাড় সংলগ্ন ব্লক ও জঙ্গলমহলের ব্লকগুলিতে এই ধরনের আরও কেন্দ্র খোলার জন্য অনুরোধ করেন। জেলাশাসক বলেন, “জেলার মোট ২০টি ব্লকেই এমন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। সদর হাসপাতাল ও রঘুনাথপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল-সহ মোট ২২টি কেন্দ্র খোলা হবে। তবে জঙ্গলমহলের ব্লকগুলিতে এই কেন্দ্র গড়ে ওঠায় অগ্রাধিকার পাবে।”
প্রকল্পের নোডাল অফিসার তথা জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আজিজুর রহমানের কথায়, “এটা দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন ব্লকে পাঁচ বছরের নীচের অনেক শিশুই বেড়ে ওঠার সময় যা খাদ্য পাওয়া দরকার, তা পায় না। চরম অপুষ্টিতে ভুগে তাদের ওজন কমে যায়, স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না। এই সব শিশুকেই পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে এসে পরিচর্যা করা হবে।” বেগুনকোদর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক বিল্লেশ্বর চট্টরাজ জানিয়েছেন, যে-সব শিশুর ওজন কম, মধ্য বাহুর মাপ কম, শরীর ফোলা রয়েছে, তাদেরই ‘অপুষ্ট’ বলে ধরে নেওয়া হয়। ইউনিসেফের কর্মী, এই প্রকল্পের জেলা সংযোজক স্বাতী দত্ত বলেন, “কোন শিশু অপুষ্ট, তা ওই সব প্রত্যন্ত এলাকার অভিভাবকেরা বুঝবেন না। এলাকার সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের আওতাধীন যে-সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলির কর্মীরাই অপুষ্ট শিশুদের চিহ্নিত করে পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাবেন।” যতদিন না ওই শিশুদের ওজন ১৫ শতাংশ বাড়বে, ততদিন তাদের ওই কেন্দ্রে ভর্তি রাখা হবে বলেও জানান স্বাতীদেবী। মায়েরাও বাচ্চাদের সঙ্গে থাকবেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এই কেন্দ্রে আসা মহিলারা খুবই গরিব পরিবারের। সে কথা মাথায় রেখে যত দিন তাঁরা শিশুর সঙ্গে কেন্দ্রে থাকবেন, তত দিনের হিসাবে একশো দিন কাজের প্রকল্পের দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে তাঁদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। তবে মায়েদের খাবারের জন্য যে টাকা খরচ হয়, তা কেটে রেখে বাকি টাকা যে দিন তিনি শিশু-সহ কেন্দ্র থেকে ছাড়া পাবেন, সে দিন তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। |
|
|
|
|
|