|
|
|
|
সিঙ্গুর প্রশ্নে মমতাকে সমর্থন |
ফের বুদ্ধ-নিরুপমকে তুলোধোনা রেজ্জাকের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ক’দিন চুপ থাকার পরে ফের সরব তিনি। এ বারেও নিশানায় সেই জনাকয়েক নেতা আর তাঁদের নীতি। দলকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য যা যথেষ্ট। তিনি রেজ্জাক মোল্লা। রাজ্যের প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী।
নির্বাচনে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের বিপর্যয়ের পর থেকেই মুখ খুলে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন সিপিএমের এই কৃষক নেতা। মাঝে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর উপদেশ মেনে কিছু দিন চুপ ছিলেন তিনি। কিন্তু আবার যে কে সেই। এ বারে আবার রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে খাস রাজধানীতে! শুক্রবার সেখানে কৃষকসভার এক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-নিরুপম সেনের ‘টাটা-প্রেমে’র প্রতি কটাক্ষ করার সঙ্গে সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফেরত প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলাখুলি সমর্থন করেছেন তিনি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের শিল্পনীতিকে তুলোধনা করে তিনি বলেন, “টাটা-প্রেম দেখাতে গিয়েই তো সব বাটা হয়ে গেল!” অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরত দেওয়া নিয়ে টাটা-রা রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে আজ তাদের তুলোধনা করেন রেজ্জাক। টাটাদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের মামলায় তাঁর অবস্থান কী? এ প্রশ্নের জবাবে রেজ্জাক বলেন, “আমি গরিব কৃষকের পক্ষে। আমি চাই, গরিব চাষি জমি ফিরে পাক। টাটারা জাহান্নমে যাক!” রেজ্জাকের দাবি, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হলে অনিচ্ছুক চাষিদের জমি দেওয়ার বিষয়ে আরও তৎপর হতেন। কী করতেন? প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রীর কথায়, “আমি কারখানার জমির বাইরে পাঁচশো পুলিশ দাঁড় করিয়ে রাখতাম আর পিছন দিক দিয়ে চাষিদের ঢুকিয়ে দিয়ে বলতাম, যা, চাষ কর!”
প্রবীণ এই সিপিএম নেতার ব্যাখা, কমিউনিস্ট পার্টি পুঁজিবাদী পথ অনুসরণ করেছে। সেটাই বিধানসভা ভোটে হারের কারণ। এ ক্ষেত্রে দলের যে সরকারের উপরে নিয়ন্ত্রণ ছিল না, তা স্বীকার করে নিয়ে রেজ্জাক বলেন, “আমি রেজিমেন্টেড কমিউনিস্ট নই। আগে দল সংসদীয় শাখাকে নিয়ন্ত্রণ করত। এখন উল্টো দিকে যাচ্ছে।” সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টার্চাযের সরকারের কাজের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন রেজ্জাক। ভোট-বিপর্যয়ের পরে পলিটব্যুরো-কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে দলীয় কর্মসূচিতে বুদ্ধদেবের অনুপস্থিতি নিয়ে রেজ্জাকের মন্তব্য, “বুদ্ধবাবুর শরীর না মন খারাপ, বলতে পারব না! আমার সঙ্গে তো আর কথা হয় না!”
দল হিসেবে সিপিএম সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরতের বিরোধিতা করেনি। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ের আগে জমি বণ্টন নয় বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেওয়ার পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, তাঁরা আগেই সরকারকে তাড়াহুড়ো না করতে বলেছিলেন। আজ কার্যত কিন্তু রেজ্জাক সূর্যকান্তর মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নির্বাচনী ইস্তাহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। আমাদের তাতে গায়ে জ্বালা কেন?” এখনই যে মমতার সমালোচনায় তিনি আগ্রহী নন, তা স্পষ্ট করে দিয়ে রেজ্জাক বলেন, “উনি যখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বলেছেন, সমস্যার সমাধান করতে পারবেন, আমরা দেখব, পারেন কি না।”
পশ্চিমবঙ্গে ভোট বিপর্যয়ের পরে এই প্রথম কৃষক সংগঠনের সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার দিল্লি এসেছেন রেজ্জাক। নয়াদিল্লি স্টেশন থেকে অটো-রিক্সায় চেপে বঙ্গভবনে পৌঁছন তিনি। অটো-রিক্সাকে পঞ্চাশ টাকা ভাড়া মিটিয়ে তাঁর যুক্তি, “ভোটে হেরে গিয়েছি। মন্ত্রী নই, গাড়িও নেই। গাড়ির জন্য তদ্বির করতে পারব না।” কৃষক সংগঠনের সভায় রাজ্যের বর্গাদার-পাট্টাদারদের জমি কেড়ে নেওয়া নিয়ে সরব হতে চান তিনি। |
|
|
|
|
|