‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’, গ্রেফতার পায়েল
প্রতিটি ঘর খাঁ খাঁ করছে। এলোমেলো ছড়ানো রয়েছে মৃদুলাদেবীর শাড়ি, সঞ্জয়-সমরেশের বারমুডা মোবাইল জামা গেঞ্জি। তাঁরা আর ফিরবেন না।
তিন তলা প্রাসাদোপম বাড়ির এ ঘর ও ঘর ঘুরে বেড়াচ্ছেন একা পবিত্ররঞ্জন সাহা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে তাঁর পৃথিবীটাই গিয়েছে পাল্টে। দোতলায় তাঁদের শোওয়ার ঘর থেকে নিজেই উদ্ধার করেছেন স্ত্রী ও দুই ছেলের দেহ। পরপর তিনটি দেহ ঝুলছিল ঘরের কড়িকাঠ থেকে। সেই দিন তাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন বড় বৌমা পায়েল ও দুই নাতি নাতনি। কিন্তু গভীর রাতে পুলিশ পায়েলকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হয়েছে পায়েলের বাবা গোপাল সাহাকেও। তারপর থেকে পবিত্ররঞ্জনবাবু একা। শুক্রবার সেই বাড়ির এ ঘর সে ঘর করতে করতে তিনি বলেন, “আমার জমজমাট বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেল।”
নবদ্বীপের জমজমাট মোড় পোড়া মা তলায় এই বাড়ি যেন আশ্চর্য একটা দ্রষ্টব্যও হয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবারের পর থেকে। খুব বড়লোক এই পরিবার সম্বন্ধে পাড়ার লোকের ভালবাসা ছিল। পবিত্ররঞ্জনবাবু নিজে বস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর দুই ছেলেই ছিলেন খুব ভদ্র। এখন তাঁদের ব্যবসায় মন্দা শুরু হওয়ায় পাড়ার লোকজন সহানুভূতিশীল ছিলেন পরিবারটির প্রতি। কিন্তু একের পর এক ঘটনায় প্রতিবেশীরা হতবাক।
নবদ্বীপের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় শুক্রবার পায়েল ও তাঁর বাবা গোপাল সাহার জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন। তাঁদের তিনি ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই আদালতের সরকারি আইনজীবী নব্যেন্দু মণ্ডল বলেন, “প্রথমে পুলিশ মৃত সঞ্জয় সাহার পকেট থেকে একটি ছ’পাতার সুইসাইড নোট উদ্ধার করে। সঞ্জয়ের ভাই সমরেশের পকেট থেকেও পাওয়া যায় একটি দু’পাতার সুইসাইড নোট। তাঁদের মা মৃদুলাদেবীর জামার ভিতর থেকেও পরে পুলিশ দু’পাতার একটি সুইসাইড নোট পেয়েছে। তিন জনেই তাঁদের সুইসাইড নোটে সুনির্দিষ্ট ভাবে পায়েল সাহা ও তাঁর বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। ওই তিন জন জানিয়েছেন, পায়েলদেবী প্রায়ই হুমকি দিতেন যে, তাঁর কথা না শুনলে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করবেন।” নব্যেন্দুবাবু বলেন, “ধৃত পায়েল ও তাঁর বাবা গোপাল সাহার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬, ১২০ বি এবং ৩৪ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ।”
অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সতীশ দেবনাথ বলেন, “ওই পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই মামলা করেছে। অর্থাৎ পরিবারের পক্ষ থেকে পায়েল ও তাঁর বাবাকে দোষী ভাবা হচ্ছে না। এর অর্থ অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিচারক পুলিশের কাছে কেস ডায়েরি চেয়েছেন।”
পবিত্ররঞ্জনবাবুও মনে করেন, তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে সুইসাইড নোটে যে অভিযোগ করেছেন, তা ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “আমি ওই সুইসাইড নোটগুলো চোখেই দেখিনি। তবে যা লেখা রয়েছে বলে শুনছি, তার বেশিরভাগই মিথ্যা।” তাঁর কথায়, “সংসারে অশান্তি নেই, শাশুড়ি-বৌমায় গণ্ডগোল নেইএমন কোনও পরিবার পাওয়া যায় না কি!”
অভিযোগ উঠেছে, ব্যবসায় মন্দা চলতে থাকায় পবিত্ররঞ্জনবাবুর বাজারে কয়েক লক্ষ টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। তা শোধ করা যাচ্ছিল না। পবিত্ররঞ্জনবাবুর বক্তব্য, “বৌমা ও তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন কখনও কোনও নির্যাতন করেননি। বরং তাঁরা ছ’বছর ধরে বহু টাকা দিয়েছেন আমার ছেলেকে। কিন্তু আমার ছেলে কোনও কিছুই করে উঠতে পারেনি। সেটা তো ওঁদের দোষ নয়।” তা হলে কেন এই রকম ঘটনা ঘটল? পবিত্ররঞ্জনবাবু বলেন, “আমার দুই ছেলে সর্বদা মায়ের কথা শুনেই চলত। কী করত, কী না করত ইদানিং সে সবও আমাকে বলত না। আমাকে কোনও গুরুত্ব দিত না।” তিনি বলেন, “বড় ছেলেকে তার শ্বশুর ওড়িশার বালেশ্বরে গিয়ে তাঁর ব্যবসায় যোগ দিতে বলেছিলেন। ও তা মানতে চায়নি। তারপর থেকে ছেলের শ্বশুর আর তাকে টাকা দিতে চায়নি। এটুকু ছাড়া আর তো কিছুই অশান্তির কারণ ছিল না। কিন্তু শুধু তার জন্য কেন আত্মহত্যা করল তিন জনে, তা বুঝতে পারছি না।”
গোপালবাবু আগে নবদ্বীপেই থাকতেন। এখন তিনি বালেশ্বরে থাকেন। তাঁর কথায়, “মেয়ের এত বড় দুর্ঘটনা শুনে ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু আমাকে যে ধরা হবে, তা বুঝতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সে সব পুরোপুরি মিথ্যা। নির্যাতনের প্রশ্নই নেই বরং আমিই টাকা দিয়েছি বারবার। সব টাকা নষ্ট করেছে। তাই আমি আর টাকা দিতে রাজি হইনি। সেই রাগ চরিতার্থ করতেই মিথ্যা অভিযোগ করে গিয়েছেন তাঁরা। নিজেরা মরে আমাদেরও মেরে গেলেন তাঁরা।”
First Page Murshidabad Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.