ফরাসি বিপ্লব থামল
কিন্তু নাদাল-রাজ নয়
ইম্বলডনে ফরাসি বিপ্লব শেষ! কিন্তু নাদাল-রাজের বিরাম নেই।
জো উইলফ্রেড সঙ্গার স্বপ্নের দৌড় সেমিফাইনালে ঘণ্টা তিনেকের যুদ্ধে থামিয়ে দিল নোভাক জকোভিচ। ৭-৬ (৭-৪), ৬-২, ৬-৭ (৯-১১), ৬-৩। রজার ফেডেরারকে তার দীর্ঘ গ্র্যান্ড স্লাম কেরিয়ারে প্রথম বার দু’সেট এগিয়ে থেকে ম্যাচ হারার তিক্ত স্বাদ দিয়েছিল সঙ্গা। কিন্তু জকোভিচের ধারাবাহিক অনবদ্য সার্ভিস রিটার্নের সামনে আগের দিনের সেই স্বপ্নের টেনিস খেলা আর সম্ভব হয়নি সঙ্গার।
অন্য সেমিফাইনালে অ্যান্ডি মারে গোটা বিলেতের প্রার্থনা, একশো দশ ভাগ ঠাসা সেন্টার কোর্টের প্রচণ্ড সমর্থন পিছনে নিয়েও রাফায়েল নাদালের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারল না। প্রথম সেটে অমন মোক্ষম সময়ে নাদালের সার্ভিস ব্রেক করে এক সেট এগিয়ে যাওয়ার পরেও পরের তিনটে সেটেই এক রকম উড়ে গেল! টেনিসের কোনও মেজর-এ এত উঁচু পর্যায়ের ম্যাচে এমন ‘চোক্’ করে যাওয়ার ঘটনা কমই দেখা যায়। পাঁচ-পাঁচ বার মারেকে ব্রেক করে নাদাল শেষ পর্যন্ত জিতল ৫-৭, ৬-২, ৬-২, ৬-৪। সেই ফ্রেড পেরির পর পঁচাত্তর বছরেও ব্রিটিশরা উইম্বলডনে আর দ্বিতীয় কোনও ব্রিটিশ ফাইনালিস্ট পাচ্ছে না। চ্যাম্পিয়ন তো দূরঅস্ত!
দুই ফাইনালিস্ট। নাদাল ও জকোভিচ।
অথচ মারেকে নিজের দেশের গ্র্যান্ড স্লামে গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বারই সবচেয়ে চাপমুক্ত দেখাচ্ছিল আগের রাউন্ডগুলোতে। অনেক বিশেষজ্ঞ এমনও বলছিল, নাদালের পায়ে চোট। মারে পুরুষদের সার্কিটে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভাল আর নিঁখুত র্যালি করে। দীর্ঘ র্যালি করে করেই নাদালকে ক্লান্ত করে দেবে। বাস্তবে সে সবের কিছুই ঘটতে দেয়নি নাদাল। নিজের ইচ্ছে মতো গতিতে ম্যাচটাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। দুটো পয়েন্টের মধ্যে প্রখর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে প্রয়োজনীয় বিশ্রামটাও খেলতে-খেলতেই নিয়ে নিয়েছে। মারে যেটা থামাতে পারেনি। নাদাল ক্লান্ত হবেটা কী ভাবে? টেনিস কিংবদন্তি বর্গের তিন বার একই মরসুমে ফরাসি ওপেন আর উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যে বিরল নজির আছে সেটা ছোঁয়ার থেকে মাত্র এক ম্যাচ দূরে এখন নাদাল।
তবে ফাইনালে জকোভিচের বিরুদ্ধে মানসিক ভাবে একটু হলেও পিছিয়ে থাকবে নাদাল। এ বছর ৪৯টা ম্যাচ খেলে ৪৮টা জিতেছে জকোভিচ। একমাত্র হেরেছে ফরাসি ওপেন সেমিফাইনালে ফেডেরারের কাছে। নাদালকে চার বারে চার বারই হারিয়েছে। তার মধ্যে দু’বার আবার নাদালের প্রিয়তম সারফেস ক্লে কোর্টে। সুতরাং ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম রাফায়েল নাদাল হলেও জকোভিচকে আমার টুর্নামেন্ট প্রিভিউয়ের মতোই ট্রফি জেতার ব্যাপারে এক নম্বর ফেভারিট বলা থেকে সরে যাওয়ার কোনও কারণ আমি দেখছি না। যদিও এ বারের উইম্বলডনে নাদালের একটা আকর্ষণীয় দিক দেখছি, প্রতিটা ম্যাচেই ও আগের রাউন্ডের থেকে উন্নতি করছে। তাই ফাইনালেই না সেরা খেলাটা খেলাটা খেলে দেয়!
জকোভিচ প্রথম বার উইম্বলডন ফাইনালে ওঠার পর রয়্যাল বক্সে গোরান ইভানিসেভিচকে সবচেয়ে বেশি হাততালি দিতে দেখলাম। খুব স্বাভাবিক। ২০০১-এ গোরান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এই প্রথম সাবেক যুগোস্লাভিয়ার কেউ উইম্বলডন ফাইনাল খেলবে। এ দিনই বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে জকোভিচ এক নন্বর প্লেয়ারও হয়ে গেল। ম্যাচ শেষের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সাউন্ড সিস্টেমে শুধু এই বিরল তথ্য ঘোষিতই হল না, মুহূর্তের ভেতর উইম্বলডনের সরকারি ওয়েবসাইটেও তা উঠে যেতে দেখলাম। বিরল-ই তো! কারণ পয়লা ফেব্রুয়ারি ২০০৪ থেকে গত সাত বছর পাঁচ মাস পুরুষদের টেনিসে ফেডেরার বা নাদালের মধ্যেই কেউ না কেউ বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে সব সময় এক নম্বর থেকেছে। এই প্রথম জকোভিচ সেই চিনের প্রাচীর ভাঙল।
উইম্বলডনের প্রাচীরটাও ভাঙতে পারে কি না সেটা রবিবার ফাইনালে জানা যাবে। ২০০৩ থেকে গত আট বছর ধরে উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফিটাও হয় ফেডেরার নয়তো নাদালের হাতে উঠছে। জকোভিচ নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বাদ বদল ঘটালে আমার কিন্তু ভালই লাগবে।
তবু যুদ্ধ কে বিজয়ী, কে বিজিত দেখে বোঝা দায়। সেমিফাইনালে জো উইলফ্রেড সঙ্গাকে হারিয়ে
প্রথম বার উইম্বলডন ফাইনালে নোভাক জোকোভিচ (বাঁ দিকে)। এএফপি-র ছবি।
প্রথম সেমিফাইনালটা শেষ হতেই সেন্টার কোর্টে আমার সমসাময়িক কয়েক জন টেনিস প্লেয়ার বন্ধু গজগজ করছিল, “ব্যাটা, নিজে ফাইনালে উঠলি না। ফেডেরারকেও উঠতে দিলি না!” বোঝাই যাচ্ছিল রাগের টার্গেট সঙ্গা। কিন্তু আমি বলব, ফেডেরার যেমন কোয়ার্টার ফাইনালে সঙ্গার বিরুদ্ধে খানিকটা ভাগ্যের হাতে মার খেয়ে হেরেছিল, সেমিফাইনালে তেমনই জকোভিচের সামনে সঙ্গার হাল হল। কলকাতা থেকে এক অনুজ সাংবাদিক বন্ধু ফোনে জানতে চাইল, কেন ফেডেরার পারল না কিন্তু জকোভিচ পারল সঙ্গাকে হারাতে? আমার মতে একটাই কারণফেডেরারের চেয়ে অনেক অনেক ভাল সার্ভিস রিটার্ন করেছে জকোভিচ। নিজের সার্ভেও অনেক বেশি বৈচিত্র ছিল। বিশেষ করে চতুর্থ সেটে। যেটায় প্রথমেই ৩-০ এগিয়ে যাওয়ায় জকোভিচের ফাইনালে ওঠা তারপরে ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
ম্যাচটার টানির্ং পয়েন্ট প্রথম সেটে ৫-৪ এগিয়ে সঙ্গা যখন সেটটা জেতার জন্য সার্ভিস করছিল। ০-৪০ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়লেও কয়েকটা দুর্ধর্ষ সার্ভিস আর স্লাইস গ্রাউন্ডস্ট্রোক মেরে ‘ডিউস’ করে পুরোপুরি লড়াইয়ে ফিরে এসেছিল সঙ্গা। কিন্তু পরের পয়েন্টটাতেই দ্বিতীয় সার্ভিসটাও ১৩০ মাইলে প্রচণ্ড জোরে করতে গিয়ে ‘ডাবল ফল্ট’ করে ফেলে। শেষমেশ সেটটাও টাইব্রেকারে হারে। সেই ধাক্কাটা প্রাণপণ চেষ্টা করেও বাকি ম্যাচে পুরো সামলে উঠে পারেনি। দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কী বলবেন? এত সুন্দর টেনিসের দিনটা অবশ্য ভারতীয় প্লেয়ারদের জন্য বেশ খারাপই গেল। সানিয়া মির্জা মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মেয়েদের ডাবলস সেমিফাইনাল আর মিক্সড ডাবলস কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিল। গতবারের মিক্সড ডাবলস চ্যাম্পিয়ন লিয়েন্ডার পেজ-কারা ব্ল্যাকও কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে গেল। শেষ দু’দিনের উইম্বলডনে ভারতের চ্যালেঞ্জ বলতে শুধু টিকে থাকছে মহেশ ভূপতি। সানিয়ার ডাবলস পার্টনার ভেসনিনাকে নিয়ে এ দিন মিক্সড ডাবলস সেমিফাইনালে পৌঁছল মহেশ। ইজরায়েলের জোনাথন এলিচ-শাহর পীরকে ৬-৪, ৬-১ হারিয়ে।
First Page Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.