|
|
|
|
ট্রেনের ধাক্কায় জখম হাতির মৃত্যু, ক্ষুব্ধ বনমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি ও মালবাজার |
ট্রেনের ধাক্কায় জখম হয়ে ডায়নার জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল একটি হাতি। শুক্রবার ভোরে বছর পঁয়ত্রিশের ওই স্ত্রী হাতিটির মৃত্যু হল। গত ২৫ জুন রাতে ডুয়ার্সের রেডব্যাঙ্ক চা বাগান লাগোয়া এলাকায় দু’টি হাতি জখম হয়। এই হাতিটি দুর্ঘটনার পরে নিজেই ডায়নার জঙ্গলে ঢোকে। অন্য হাতিটিকে বনকর্মীরা গরুমারার জঙ্গলে নিয়ে আসেন। ডায়নার জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া হাতিটি প্রথমে দাঁড়িয়েই ছিল। সোমবার সেটি শুয়ে পড়ে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন সেটির পিছনের বাঁ পায়ের হাড় কয়েকটি টুকরো হয়ে গিয়েছে। শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণও হচ্ছিল। স্যালাইন দেওয়া ছাড়াও অন্যান্য ওষুধ দিয়ে সেটিকে বাঁচানোর চেষ্টা হয়। শুক্রবার মৃত হাতিটিকে পরীক্ষা করার পরে বন দফতরের গরুমারার চিকিৎসক অনুপম রক্ষিত জানান, হাড় ভাঙার প্রবল যন্ত্রণা এবং রক্তক্ষরণের জেরেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।
ট্রেনের ধাক্কায় ক্রমাগত হাতির মৃত্যু ও জখমের ঘটনায় উষ্মাপ্রকাশ করেছেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। গত ২৫ জুন রাতে রেল লাইনের ওপরে হাতির দল রয়েছে বলে রেলের কর্তাদের খবর দেওয়া হলেও চালক ট্রেনের গতি কমাননি বলে অভিযোগ করেছেন বনমন্ত্রী। ঘটনাটি রেলের প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়কে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন তিনি। রেল ও বন দফতরের কর্তাদের নিয়ে একটি যৌথ তদন্ত দল তৈরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এই দলটি খতিয়ে দেখবে কাদের গাফিলততে ২৫ জুন রাতের ঘটনাটি ঘটেছে। পাশাপাশি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় পরিবেশ দফতরেও রিপোর্ট পাঠানো হযেছে। বনমন্ত্রী বলেন, “ঘটনার পরদিন ২৭ জুন আমি নিজে নিজাম প্যালেসে গিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়কে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছি। ট্রেনের গতি কম থাকলে হয়ত দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।” |
|
যন্ত্রণার অবসান ট্রেনের ধাক্কায় জখম স্ত্রী হাতিটির মৃত্যু হল ডায়নার জঙ্গলে। শুক্রবার। দীপঙ্কর ঘটক |
এ দিকে, গরুমারায় চিকিৎসাধীন হাতিটিকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে কি না, খতিয়ে দেখতে তৈরি মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিনিধি দল আসছে। হাতিটিও গত দু’দিন ধরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বাঁ দিকের কোমর এবং পা ভেঙে যাওয়ায় আর সেটি উঠে দাঁড়াতে পারবে না বলে চিকিৎসকরা জানান। এই পরিস্থিতে হাতিটির যন্ত্রণা কমাতে না পারলে বাঁচিয়ে রাখা সঙ্গত হবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে। মেডিক্যাল বোর্ডকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বনমন্ত্রী গরুমারায় জখম হাতিটিকে দেখে আসেন। বনমন্ত্রী বলেন, “হাতিটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। যে ভাবে যন্ত্রণা পাচ্ছে সেটা আমাদের কাছেও বেদনাদায়ক। যন্ত্রণা কমানো যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে। যন্ত্রণা কমিয়ে এটিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের লক্ষ্য। কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সেটা ঠিক করতে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।”
বছর দুয়েক আগে সুন্দরবনের একটি জখম বাঘের ক্ষেত্রেও একই ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। তা মাথায় রেখে ভারত সরকারের প্রজেক্ট এলিফ্যান্টের এক বিশেষজ্ঞ, দিল্লির পরিবেশ মন্ত্রকের অসমের এক বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসক, স্থানীয় পশু চিকিৎসক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক প্রতিনিধিকে নিয়ে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। বন দফতরের মতে, হাতিটির যন্ত্রণা কমিয়ে দিলে বাঁচিয়ে রাখা যেতে পারে। কিন্তু অসহ্য যন্ত্রণা অব্যাহত থাকলে সেটিকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত হবে কি না, তা ঠিক করবে মেডিক্যাল বোর্ড। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বন্যপ্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বিরোধী’ আইনে এই ব্যাপারে নির্দেশ রয়েছে। |
|
|
|
|
|