খেলা
রিংয়ে উজ্জ্বল
বাবা বক্সার। মেয়েও রিংকেই বেছে নিলেন। শুধু তাই নয়, এ বারের রাজ্য বক্সিংয়ে সোনা জিতলেন সেই মেয়ে, প্রিয়াঙ্কা মাঝি। সম্প্রতি হাওড়া ময়দানে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল বেঙ্গল অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশন এবং ওয়েস্ট এন্ড ক্লাব। প্রিয়াঙ্কার মতোই সোনা জিতলেন উত্তরপাড়ার ফিরোজা আঞ্জুম সিদ্দিকি, হাওড়ার প্রদীপ গিমিরে, কলকাতার রাম সাহানিরা।
এ বারের রাজ্য বক্সিংয়ে অংশ নিলেন ১৫০ জন প্রতিযোগী। সাব জুনিয়রে ১৪টি বিভাগে, সিনিয়রে ৯টি বিভাগে এবং মেয়েদের তিনটি বিভাগে প্রতিযোগিতা হয়। হাওড়া, কলকাতা, উত্তরপাড়া, দুর্গাপুর, আসানসোল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও মালদহ থেকে প্রতিযোগীরা এসেছিলেন। সিনিয়রে ৫টি সোনা, সাব জুনিয়রে ৭টি সোনা এবং দু’টি বিভাগে সর্বাধিক পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হল ওয়েস্ট এন্ড ক্লাব। সিনিয়র বিভাগে রানার্স হল রাজ্য পুলিশ দল। অন্য দিকে, যৌথ ভাবে সাব জুুনিয়রে রানার্স হল উত্তরপাড়া প্রগ্রেসিভ সোসাইটি ও দুর্গাপুর সাব ডিভিশনাল অ্যামেচার বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন।
মেয়েদের ৪৪ কেজি বিভাগে বিজয়ী হলেন দুর্গাপুরের সুভাগ্যশ্রী পুর্তি, ৪৮ কেজিতে উত্তরপাড়ার ফিরোজা আঞ্জুম সিদ্দিকি ও ৫২ কেজি বিভাগে ওয়েস্ট এন্ড ক্লাবের প্রিয়াঙ্কা মাঝি। এমএ-এর প্রথম বর্ষের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কার কথায়: “বাবাকে দেখে বক্সিংয়ে এসেছি। কিন্তু নানা সমস্যা হচ্ছে। যেখানে শিখি সেখানে মেয়েদের কোনও ড্রেসিংরুম নেই। মেয়েদের সংখ্যাও হাতে গোনা। তেমন কেউ নেই যাঁর সঙ্গে অনুশীলন করব। জাতীয় প্রতিযোগিতায় অসম, মণিপুর, ঝাড়খণ্ডের মেয়েরা ফুল টিম নিয়ে আসে। আমাদের রাজ্য সেখানে অনেক পিছিয়ে। জাতীয় স্তরে খেলতে গেলে একটা ট্র্যাকস্যুটও মেলে না।” বাবা বাবলু মাঝি ছিলেন রেলের বক্সার। তিনিই নিধিরাম মাঝি লেনের বাড়ির ছাদে মেয়ের জন্য অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছেন।
প্রিয়াঙ্কার মতোই জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগচ্ছে উত্তরপাড়ার ফিরোজা। দ্বাদশ শ্রেণির এই ছাত্রীটি ৯ বছর বক্সিং করে। রাজ্য গেমসেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফিরোজার কথায়: “বাবার সামান্য দর্জির দোকান। বাড়িতে আমরা চার ভাই বোন। ভাল জুতো, ড্রেস, বক্সিং সরঞ্জাম কেনার সামর্থ্য নেই।” একই অবস্থা সাব জুনিয়রে ৩২ কেজি বিভাগের চ্যাম্পিয়ন প্রদীপ গিমিরের। বাবা রেলওয়ে আধিকারিকের গাড়ি চালান। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রটির কাছে ক্লাবই ভরসা। রাজ্য বক্সিং ফেডারেশন তথা হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট বক্সিং ফেডারেশনের সচিব অসীম দাসের কথায়: “গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরাই বক্সিং শিখতে আসে। আমরা যতটা পারি সহায়তা করি। বক্সিং শিখে এখন মেয়েরাও চাকরি পাচ্ছে।” পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য এর মধ্যেই ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে দেখা করে দশ দফা দাবি পেশ করেছে রাজ্য বক্সিং ফেডারেশন। প্রতিযোগিতার শেষে প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়, বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সচিব কমলেশ চট্টোপাধ্যায়, ওয়েস্ট এন্ড ক্লাবের সভাপতি নিমাই দত্ত প্রমুখ।

ছবি: রণজিৎ নন্দী

Previous Story

Howrah

Next Item




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.