|
|
|
|
|
|
সুরাহা কবে |
দূরত্ব বিস্তর |
শান্তনু ঘোষ |
শিবপুর যাওয়ার বাস কোথা থেকে পাওয়া যাবে? বালিঘাট বাস স্ট্যান্ডে এক কন্ডাক্টরকে প্রশ্নটি করলেন বছর ষাটেরবৃদ্ধ। প্রশ্নটা শুনেই কন্ডাক্টর হেসে বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে এখানে নতুন এসেছেন! বালি থেকে শিবপুরের সরাসরি কোনও বাস নেই। এখান থেকে হাওড়া গিয়ে আবার বাস ধরতে হবে।’’ কথাটা শুনে চমকে উঠলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি। বালি থেকে শিবপুরের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। কিন্তু এই পথে সরাসরি কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থাই নেই!
যদিও এই সমস্যা সম্পর্কে আদৌ ওয়াকিবহাল নন হাওড়া শহরের বাইরে বসবাসকারী অনেকেই। শহরবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ ৫০ বছরেও হাওড়া শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং মধ্য এলাকায় যাওয়ার জন্য সরাসরি কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বহু বার আবেদন, অনুরোধ জানিয়েও প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাওড়ার প্রতিটি এলাকাতেই জনসংখ্যা ও বসতি ক্রমশ বেড়েছে। অফিস, শপিং মল থেকে কলেজ, স্কুল, হাসপাতাল, রেস্তোরাঁ সব কিছুই তৈরি হয়েছে। শহর জুড়ে প্রতি দিন অসংখ্য রুটের বাস চলাচল করে। কিন্তু শহরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তের যোগাযোগ ব্যবস্থা আজও সেই তিমিরেই। বেশ কয়েক বছর আগে সালকিয়া বাঁধাঘাট থেকে হাওড়া আদালত হয়ে একটি বাস বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে কলকাতার দিকে যেত। কিন্তু মাত্র ১৫ দিন চলার পরে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেই পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ উত্তর হাওড়ার বাসিন্দাদের। |
|
জিটি রোড ধরে এগলে হাওড়া শহরের উত্তর দিকের শেষ প্রান্ত বালি। তার আগে রয়েছে সালকিয়া। এর পরেই মধ্য ও দক্ষিণ হাওড়া। বাসিন্দাদের কথায়, বালি ও সালকিয়া থেকে হাওড়া স্টেশন হয়ে ধর্মতলা, শিয়ালদহের দিকে সরাসরি যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি রুটের বাস চলাচল করে। আবার বালি, বেলুড় থেকে বালি ব্রিজ, ডানলপ হয়ে কলকাতা, গড়িয়া, সল্টলেক এবং সোদপুর, টিটাগড়ের দিকে যাওয়ার বাস রয়েছে। হুগলির দিকে যাওয়ার বাসও বালি থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু শহরের ভিতরে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে সে রকম কোনও ব্যবস্থাই নেই। বালি বা সালকিয়া থেকে দক্ষিণ হাওড়া বা মধ্য হাওড়ার কোথাও যেতে হলে হাওড়া স্টেশন থেকে বাস পাল্টাতে হচ্ছে। কিংবা অটো ধরে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে।
সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে?
বালি বা সালকিয়ার দিক থেকে কেউ যদি শহরের প্রাণকেন্দ্র হাওড়া ময়দান বা জেলা হাসপাতাল, আদালত, পুরসভা কিংবা জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যেতে চান তবে তাঁদের হাওড়া স্টেশন থেকে বাস পাল্টাতে হয়। আবার কেউ শহরের উত্তর থেকে শিবপুর, আন্দুল, বি-গার্ডেন, মৌড়িগ্রাম, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, রামরাজাতলা, দাশনগর বা অন্য কোথাও যেতে চাইলে তাঁকে হাওড়া স্টেশন চত্বরে এসে নির্দিষ্ট গন্তব্যের বাস খুঁজতে হবে।
একই রকম সমস্যা উল্টো দিকেও। অর্থাৎ, মধ্য ও দক্ষিণ হাওড়া থেকে কেউ যদি সালকিয়া, বেলুড় মঠ, দক্ষিণেশ্বর বা উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুরের দিকে আসতে চান তবে তাঁকেও এক বার বা দু’বার বাস পাল্টাতে হবে। যেমন, বালি বা সালকিয়া থেকে কোনও ব্যক্তি যদি মধ্য হাওড়ার বাঙালবাবুর ব্রিজের কাছে সিইএসসি অফিসে যেতে চান, তা হলে তাঁর একমাত্র উপায় হাওড়া স্টেশন থেকে পায়ে হেঁটে ওই স্থানে পৌঁছনো। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর ফলে সময় যেমন নষ্ট হয়, তেমনই বাড়তি টাকা খরচ হয়। কিন্তু অন্য কোনও উপায় না থাকায় অফিসযাত্রী, স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, দর্শনার্থীদেরও ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়।
তবে জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, ২০০৩ সালে পরিবহণ দফতর বটানিক্যাল গার্ডেন ১ নম্বর গেট থেকে বালি হল্ট পর্যন্ত ৮২ ও ৮৩ এই দু’টি রুটের অনুমোদন করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউই আবেদন করেননি। তবে এ ব্যাপারে বাস মালিকদের দাবি, ওই রুটে লাভের পরিমাণ কম থাকায় কেউ আগ্রহ দেখাননি। কিন্তু নাগরিকরা আবার এই অভিযোগ মানতে নারাজ। |
|
শহরের অভ্যন্তরে এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে কোনও বাস পরিষেবা না থাকায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। যেমন, বালির বাসিন্দা সম্রাট করের অভিযোগ, “বালি থেকে হাওড়া হাসপাতাল বা আদালতে যেতে হলে হাওড়া স্টেশনে নেমে অন্য বাস ধরতে হয় কিংবা হেঁটে যেতে হয়। কেন যে আজও কোনও সরাসরি যোগযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠল না জানি না।” একই অভিমত শিবপুরের বাসিন্দা বাবু মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়: “মাত্র কয়েক কিলোমিটারের দূরত্ব উত্তর থেকে দক্ষিণের। এই দু’টি প্রান্তের মধ্যে বাস পরিষেবা চালু হলে অনেকেই উপকৃত হবেন।”
বাসিন্দাদের সঙ্গে একমত উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষও। তিনি বলেন, “সমস্যাটা দীর্ঘ দিনের। সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের প্রচণ্ড অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টি বিধানসভায় পরিবহণমন্ত্রীর নজরে এনেছি। কয়েকটি নতুন রুট চালু করার কিংবা উত্তরের পুরনো রুটগুলিকে দক্ষিণের দিকে বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।” অশোকবাবুর মতোই একই বক্তব্য বালির বিধায়ক সুলতান সিংহেরও। এ বিষয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সী বলেন, “সমস্যাটি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|