সম্পাদকীয় ২...
ময়দানের দোহাই
লিকাতা ময়দান হইতে মেলাকে নির্বাসিত করা হইয়াছে, এমনটাই এত দিন জানা ছিল। বস্তুত ২০০৭ সাল হইতে এই ময়দান বামপন্থীদের রাজনৈতিক সমাবেশ ছাড়া আর কোনও কাজে ব্যবহৃত হয় নাই। নাগরিকদের আবেদন অগ্রাহ্য করিয়াই ওই মহাসমাবেশগুলি আয়োজিত হয়। তবে আদালত নিয়োজিত কমিটির কড়া নজরদারির কারণে সভাভঙ্গ হইতে না হইতেই জমিয়া থাকা আবর্জনা সরানো, পলিথিন-প্লাস্টিকের মতো দূষণকারী সামগ্রী অপসারিত করিয়া ময়দানের সবুজকে পূর্বাবস্থায় ফিরাইয়া দিতে সংগঠকরা তৎপর থাকিয়াছেন। এই সমাবেশ বাদ দিলে পক্ষকালব্যাপী বিভিন্ন মেলা ময়দান হইতে কার্যত নির্বাসিতই হইয়াছে। বইমেলা, শিল্পমেলা, হস্তশিল্প ও কারিগরি মেলা, চর্মজাত দ্রব্যের মেলা, এমনকী গঙ্গাসাগর-মেলা উপলক্ষে সমাগত পুণ্যার্থীদের জন্যও ময়দান ব্যবহারের অনুমতি মেলে না। কিন্তু সেই ময়দানেই ইসকন-এর রথের মেলা বসাইবার আয়োজন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমোদন পাইয়াছে।
ইহা অবাঞ্ছিত, আপত্তিকর, বিপজ্জনক। প্রথমত, ইহা কলিকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী, কারণ পরিবেশবিদদের আর্জি শিরোধার্য করিয়া আদালতের গ্রিন বেঞ্চ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কলিকাতার এই ফুসফুসটিকে রক্ষা করার নির্দেশ দিয়াছে। এ জন্যই মেলা-নিষেধ। এ জন্যই শহরের অন্যত্র বিকল্প মেলা-প্রাঙ্গণের সন্ধান এবং সায়েন্স সিটির বিপরীতে ‘মিলনমেলা’ প্রাঙ্গণের খোঁজ ও পরিকাঠামো নির্মাণ। কলিকাতার মতো জনবহুল, ঘিঞ্জি শহরে পার্ক-বাগান-মাঠ-ময়দানের আবশ্যকতা এতই বেশি যে প্রতিটি ফাঁকা জায়গাকে রক্ষা করা এখানকার নাগরিক ও পুর কর্তৃপক্ষের দায়। নাগরিক সচেতনতা জাগাইবার কাজে পরিবেশবিদরা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করিয়াছেন। আদালতকে পরিবেশ সচেতন করিয়া গ্রিন বেঞ্চ খুলিতেও তাঁহারাই প্রাণিত করিয়াছেন। তাঁহারা তৎপর না হইলে এত দিনে হয়তো গোটা ময়দানটাই বহুতল নির্মাণের জন্য বিক্রয় হইয়া যাইত। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত বামফ্রন্ট সরকারের যে একটি আস্ত পরিবেশ মন্ত্রক ও মন্ত্রী ছিলেন, নিষ্ক্রিয়তার জন্য তাঁহাদের অস্তিত্বও প্রায় কখনও টের পাওয়া যায় নাই। যখন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছ হইতে বিশেষ অনুমতি আদায় করা হইত, তখনই কেবল সরকারের তৎপরতা টের পাওয়া যাইত। বই মেলার আয়োজন আদালত নিষিদ্ধ করিয়া দিবার পরও ময়দানের মালিক ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ঘোষিত আপত্তিকে পাশ কাটাইয়া প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অনুমোদন আনাইয়া পরিবেশ সংহারের মানসিকতা সেই সরকার দেখাইয়াছে।
এ বার অবশ্য সরকার নয়, একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান একই কৌশলে ময়দানে পক্ষকালব্যাপী মেলা আয়োজনের অনুমতি আদায় করিয়াছে। ইহা কেবল এক যাত্রায় পৃথক ফলের দৃষ্টান্ত হইয়া থাকিবে না, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষপাতিত্বের নজির হিসাবেও ভবিষ্যতে উদ্ধৃত হইবে। সকলের জন্য যাহা বন্ধ বা নিষিদ্ধ, তাহা কেন একটি প্রতিষ্ঠানের বেলায় ছাড় পাইবে, এই অস্বস্তিকর প্রশ্নটি থাকিয়াই যাইবে। আর মেলা উপলক্ষে যে সব মণ্ডপ, লঙ্গরখানা, বিকিকিনির স্টল ও নাগরদোলার মতো সাড়ে সাতশো মজার আয়োজন হইবে, মেলা-শেষে তাহা যে ময়দানকে বিধ্বস্ত করিয়াই বিদায় লইবে, তাহা নিশ্চিত বলা যায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ময়দানকে দূষিত করার ছাড়পত্র দিয়া কেবল অন্যায় করেন নাই, ভবিষ্যতে আরও অনেক অন্যায়ের আশঙ্কা সৃষ্টি করিলেন।
Previous Item Editorial First Page


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.