সম্পাদকীয় ১...
শেষ কোথায়
গ্রিস এখন যে জায়গায় দাঁড়াইয়া আছে, তাহাকে স্বখাত সলিলের তলদেশ ভিন্ন আর কিছু বলা কঠিন। ঋণ করিয়া অপব্যয়ী জীবনযাপনের কু-অভ্যাসটি গ্রিসকে সেই অতলে টানিয়া লইয়া গিয়াছে। ২০১০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার গ্রিসের জন্য যে আর্থিক ত্রাণের ব্যবস্থা করিয়াছিল, বছর ঘুরিতে দেখা গেল, তাহা যথেষ্ট নহে। গ্রিসকে যদি দেউলিয়ার দশা হইতে বাঁচাইতে হয়, তবে আরও সাহায্যের প্রয়োজন। কিন্তু, ২০১০ সালের ঋ ণের যে শর্ত ছিল, গত এক বৎসরে গ্রিস তাহার অংশমাত্র পালন করিতে পারে নাই। যথা, সরকারকে ব্যয় সংকোচ করিতে হইবে এবং করের হার বাড়াইতে হইবে। এই শর্ত পালনের অনিবার্য ফল, আরও অনেক লোকের চাকুরি যাইবে, বেতন কমিবে। জর্জ পাপান্দ্রিউ-এর সরকার সেই শর্ত পালনের প্রয়াসও করে নাই। কারণ সহজ গ্রিসের আর্থিক সংকট সেই দেশের নাগরিকদের এমনই তিক্তবিরক্ত করিয়াছে যে, তাহার উপর কঠোর আর্থিক নীতি আরোপ করিলে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ অনিবার্য। শর্ত পালন না করায় আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার ঋণের কিস্তি বন্ধ করিয়া দিয়াছে। সেই কিস্তি হাতে না পাইলে গ্রিস তাহার বকেয়া ঋণ শোধ করিতে পারিবে না। অতএব তীব্র চাপে পড়িয়া গ্রিস সরকার এখন শর্ত পালনে উদ্যোগী। সংসদে দুই দফায় ভোট হইয়াছে। প্রথম দফায় কঠোর পথে হাঁটিবার সিদ্ধান্তটি নীতিগত ভাবে গৃহীত হইয়াছে, দ্বিতীয় দফায় সেই নীতি রূপায়ণের কার্যক্রম স্থির হইয়াছে। কিন্তু, দেশে গণবিক্ষোভ চরম সীমায়। দেশ জুড়িয়া ধর্মঘট, রাজপথে পুলিশের সহিত নাগরিকদের খণ্ডযুদ্ধ চলিতেছে। গ্রিস শেষ পর্যন্ত কঠোর আর্থিক নীতি গ্রহণ করিবে কি না, বা গ্রহণ করিতে পারিবে কি না, তাহা অনিশ্চিত। কিন্তু, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার যে আপাতত গ্রিসকে ত্রাণ করিবে, তাহা লইয়া সংশয় কম। আগামী কাল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলির বৈঠক, তাহার পর আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারও বৈঠকে বসিবে। ধরিয়া লওয়া যায়, অন্তত জুলাই মাসের কিস্তি মঞ্জুর হইবে। কেন? কারণ, গ্রিস ডুবিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিপদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপদ বৃহত্তর অর্থে, গোটা দুনিয়ার আর্থিক ব্যবস্থার বিপদ। বিভিন্ন দেশের ব্যাঙ্ক গ্রিসের সরকার এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ঋণ দিয়াছে, যদিও সেই ঋণের পরিমাণ এমন নহে যে গ্রিস যদি সেই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহাতে সেই ব্যাঙ্কগুলি দেউলিয়া হইবে। সমস্যা ভিন্ন। গ্রিস ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হইলে তাহা বাজারে একটি বার্তা বহন করিবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ দেউলিয়া হইতে পারে। আয়ার্ল্যান্ড, পর্তুগালের ন্যায় ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ এখন আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত। এই বার্তা তাহাদের সংকটকে গভীরতর করিতে পারে। স্পেন এবং ইতালির অর্থনীতিও খারাপ অবস্থায়। বাজারের সংকেত যদি তাহাদের, বিশেষত অর্থনীতির বিচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইতালিকেও বিপদে ফেলে, তাহার প্রভাব মারাত্মক হইবে। আরও সমস্যা, গ্রিস দেউলিয়া হইলে আর্থিক বাজারে আতঙ্ক ছড়াইতে পারে। তাহাতে সব ব্যাঙ্কই সাবধান হইবে। এই বিশ্বায়িত দুনিয়ায় কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানই ‘বিচ্ছিন্ন’ নহে। ফলে, সব ব্যাঙ্কই নিজেদের বাঁচাইতে চেষ্টা করিবে। তাহার ফলে ঋণের আদানপ্রদান কার্যত বন্ধ হইয়া যাইবে। তাহা আরও একটি আর্থিক সংকটের সূচনা করিতে পারে। অতএব, গ্রিসকে উদ্ধার করা ভিন্ন উপায়ান্তর নাই। কিন্তু, তাহা কত দিন সম্ভব? গ্রিসকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া লইয়া ইতিমধ্যেই জার্মানিতে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হইয়াছে। এই অসন্তোষ সংক্রামক। তাহা গোটা ইউরোপের পক্ষেই রাজনৈতিক ভাবে বিপজ্জনক হইয়া উঠিতে পারে। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বা ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি অর্থনীতির স্বার্থে কত দিন এই রাজনৈতিক বিপদ মানিয়া লইতে রাজি থাকিবেন, তাহাই এখন প্রধান প্রশ্ন।
First Page Editorial Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.