ছোট ছোট বাস, যাত্রীবাহী গাড়ি বা জাল দিয়ে ঘেরা ভ্যান। কোনওটার ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ে। কোনওটার আবার জানালা নেই। চলন্ত গাড়ির জানলা দিয়ে মাথা বের করে ইতিউতি দেখতে দেখতে স্কুলে যাতায়াত করে খুদে পড়ুয়ারা। কাটোয়া শহরের রাস্তায় স্কুল চালু বা ছুটির সময়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে হামেশাই।
কাটোয়া শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বেসরকারি স্কুল। বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম এই সব স্কুলগুলিতে পড়ুয়ারা যাতায়ত করে পুলকারে চড়েই। সরকারি স্কুলের অনেক ছাত্রছাত্রীও ভ্যানে করেই যাতায়াত করে। পুলকার হিসেবে ব্যবহৃত হয় বাস, ছোট গাড়ি বা ভ্যান। অধিকাংশ গাড়িরই অবস্থা বেশ খারাপ। প্রশাসনের অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই বলে দাবি অভিভাবকদের।
গত সোমবার দুর্গাপুরের হেতেডোবায় স্কুলবাস থেকে ছিটকে পড়ে মৃত্যু হয় চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর। এর পরে জেলার শিল্পাঞ্চলে পুলকারগুলির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। বর্ধমান শহরে পুলকারের ব্যাপারে সক্রিয় হওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। কাটোয়ায় অবশ্য এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও উদ্যোগ হয়নি। পুরনো যে সব গাড়ি পুলকার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাতে শিশুদের নিয়ে যাতায়াত কতটা নিরাপদ, সে প্রশ্নও তুলেছেন অভিভাবকেরা। কাটোয়া বাস ইউনিয়নের নেতা নারায়ণচন্দ্র সেনের অভিযোগ, “স্কুল বাস চালকের একাংশের ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। তবু তাঁরা খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন।” |
ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার সময়ে অনেক সময়ে গাড়ির চালককে মোবাইল ফোনে কথা বলতেও দেখা যায়। অনেক সময়ে খুদে পড়ুয়ারা জানলা দিয়ে মাথা বা শরীর বের করে বাইরে দেখতে থাকে। সে সব দিকে নজর রাখার কেউ নেই। এক চালক বলেন, “আমরা কী করব? শিশুরা তো কথা শুনতেই চায় না। এক সঙ্গে এত জন পড়ুয়ার উপরে নজর রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভবও হয় না।” এই সব পুলকারগুলি ধারণক্ষমতার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক পড়ুয়া নিয়েই চলাচল করে।
কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামের বাসিন্দা, অভিভাবক পূজা ঠাকুর, দাঁইহাটের দেবপ্রসাদ অধিকারীরা বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষই তো পুলকারের ব্যবস্থা করে দেয়। নিরাপত্তার দিকেও তাঁদেরই নজর রাখা উচিত।” প্রতি দিন ২৮ কিলোমিটার দূর থেকে কাটোয়া শহরের কাছে জাজিগ্রামে এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সন্তানকে পাঠান কান্দরা গ্রামের বাসিন্দা অমিয় মণ্ডল। তিনি বলেন, “ওই সব স্কুলগাড়ির অবস্থা খুব খারাপ। বৃষ্টির সময়ে ছাদ দিয়ে জল পড়ে। বিকল্প না থাকায় এই রকম গাড়িতেই পাঠাতে বাধ্য হই।” কাটোয়ার বাসিন্দাদের দাবি, জনবহুল এলাকা দিয়ে যে ভাবে স্কুলগাড়িগুলি যাতায়াত করে, যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কালনা মহকুমার মন্তেশ্বর, সমুদ্রগড়, বাঘনাপাড়া-সহ বেশ কিছু এলাকায় এই সব ভ্যানে ঠাসাঠাসি করে পড়ুয়াদের স্কুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভ্যানগুলি বেশ জীর্ণ। মন্তেশ্বরের বাসিন্দা পতিতপাবণ চৌধুরীর অভিযোগ, “বর্ষার রাস্তায় এই ভ্যানে যাতায়াত করা বেশ বিপজ্জনক।”
কাটোয়ার পুরপ্রধান শুভ্রা রায় বলেন, “গাড়িগুলির অবস্থা বেশ খারাপ। পুরসভার অনুমতি ছাড়াই গাড়িগুলি পার্কিং করা হয়। মহকুমাশাসককে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাব।” কাটোয়ার মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম এ প্রসঙ্গে বলেন, “পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে কাটোয়ায় অভিযানের ব্যাপারে আশ্বাস মিলেছে।” বর্ধমান আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনির্বান কোলেও বলেন, “আমাদের ইন্সপেক্টর কম রয়েছে। তবে শীঘ্রই কাটোয়ায় নজরদারি চালানো হবে।”
যত দিন তা না হচ্ছে, ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াতই ভবিতব্য পড়ুয়াদের। |