|
|
|
|
অভিযুক্ত দুই টিএমসিপি নেতা |
ফের র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
র্যাগিং-কাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ ছাত্র সাজা পাওয়ার পরে এক বছরও গড়ায়নি। ফের র্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে উত্তপ্ত উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর।
অভিযোগ, শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার হস্টেলের ঘরে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে আটকে জোর করে তাঁর মুখে মদ ঢেলে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। বেল্ট দিয়ে একপ্রস্ত মারধর করার পরে ব্লেড দিয়ে তাঁর কানের পাশের চুলও চেঁছে দেওয়া হয়।
‘নিগৃহীত’ ছাত্র রাজু সরকার উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার অসুরাগড়ের বাসিন্দা। ভূগোল স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজু তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) কর্মী বলে পরিচিত। র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত পঙ্কজ সিংহ ও তীর্থঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের পরিচিতিও টিএমসিপি নেতা হিসেবেই। পঙ্কজ টিএমসিপি-র বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের দায়িত্বেও আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ পৃথক ভাবে তদন্তে নেমেছে। অভিযুক্তেরা পলাতক বলে পুলিশের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদার বলেন, “অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিকে খতিয়ে দেখে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা জানান, রাজুর অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাগিংয়ের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। |
|
দেহে আঘাতের চিহ্ন দেখাচ্ছেন আক্রান্ত ছাত্র। বিশ্বরূপ বসাক |
বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া শিবমন্দির এলাকায় এক ছাত্র পরিষদ নেতার বাড়িতে ভাড়া থাকেন রাজু। তাঁর অভিযোগ, এলাকায় মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ী তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-নেতা পঙ্কজ সিংহ শনিবার রাতে তাঁকে ‘দরকার আছে’ বলে হস্টেলে এমবিএ-র ছাত্র তীর্থঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের ঘরে ডেকে নিয়ে যান। রাজুর দাবি, “কেন আমি ওদের কথা শুনি না, সেই প্রশ্ন তুলে ওরা প্রথমে ভয় দেখায়। আপত্তি করায় আমার মুখে মদ ঢেলে দেয়। গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকাও দেয়। বেল্ট দিয়ে মারধরের পরে, আমার কানের পাশের চুল ব্লেড দিয়ে চেঁছে দেয় ওরা।”
পঙ্কজ ও তীর্থঙ্কর--দু’জনেই টিএমসিপি নেতা। তা হলে, নিজেদের সংগঠনের সমর্থককে র্যাগিংয়ের অভিযোগে নাম জড়াল কেন? রাজুর বাড়িওয়ালা, ছাত্র পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভাপতি রোনাল্ড দে-র সন্দেহ, “রাজু তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করলেও আমাদের সঙ্গে মেলামেশা করত। সেটা পঙ্কজ, তীর্থঙ্করেরা ভাল চোখে দেখত না।” তাঁর দাবি, “হস্টেল ক্যাম্পাসে মদ, গাঁজার আড্ডা বসাত ওরা। সেখানে রাজুকে থাকতে বলত। রাজু তাতে রাজি হয়নি। তাই রাতে হস্টেলের ঘরে ডেকে রাজুর উপরে অত্যাচার চালানো হয়েছে।”
অভিযুক্ত পঙ্কজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর-শিক্ষা বিভাগ থেকে ২০০৯ সালে ইতিহাসে এম এ করেন। মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। হস্টেলের ঘরে রাজুকে ডাকব কেন? শিবমন্দিরে ওর সঙ্গে রাতে দেখা হয়েছিল। তখন কথা হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে।” আর এক অভিযুক্ত তীর্থঙ্করও জানিয়েছেন, হস্টেলে তাঁর ঘরে ‘এমন কোনও’ ঘটনা ঘটেনি। তীর্থঙ্করের দাবি, “হস্টেলে খেয়ে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ শিবমন্দির এলাকায় এক বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছিলাম। ভূগোল বিভাগের সামনে পঙ্কজ এবং রাজুকে দেখি। দু’জনের কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। আমি আর মাঝখানে ঢুকিনি।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, শনিবার রাতে হস্টেলের ঘরে বহিরাগতেরা ঢুকেছে বলে অভিযোগ পান হস্টেল সুপার রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শনিবার রাত ১২টা নাগাদ অভিযুক্ত ছাত্রের ঘরে গিয়ে দেখি, তালা বন্ধ। র্যাগিংয়ের অভিযোগ হয়েছে। প্রমাণিত হলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|