ফের সিপিএম নেতা খুন বাঁকুড়ায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বিষ্ণুপুর |
বাঁকুড়ায় ফের খুন সিপিএম নেতা।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বিষ্ণুপুর থানার জন্তা গ্রামে পিটিয়ে মারা হয় সিপিএমের বিষ্ণুপুর (উত্তর) লোকাল কমিটির সদস্য সীতারাম কুণ্ডুকে (৪৮)। তাঁর বাড়ি ওই গ্রামেই। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের দাবি, “এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। তৃণমূলের কর্মীরা আমাদের দলের ওই নেতাকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মেরেছে। তার আগে রাধানগর ও জয়কৃষ্ণপুরে আমাদের পার্টি অফিসেও তৃণমূল ভাঙচুর করেছে।” জয়কৃষ্ণপুরে সিপিএমের শাখা অফিসে বসে থাকা ডিওয়াইএফের জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কাজল বিশ্বাসও আক্রান্ত হন হামলাকারীদের হাতে। গুরুতর জখম অবস্থায় তিনি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে এই নিয়ে তিন জন সিপিএম নেতা খুন হলেন বাঁকুড়ায়। |
|
বিষ্ণুপুর থানায় নিহত সিপিএম নেতার দেহ। |
প্রত্যেককেই পিটিয়ে মারা হয়েছে। গত ১২ জন কোতুলপুরের সাইমনি গ্রামে সিপিএমের স্থানীয় শাখা কমিটির সদস্য অলক বেওড়াকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গত মাসে তালড্যাংরায় খুন হন সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক অজিত লোহার। অমিয়বাবুর অভিযোগ, “জেলা জুড়ে তৃণমূল প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছে। আমাদের বহু নেতা-কর্মী তৃণমূলের সন্ত্রাসে ঘরছাড়া।” রবিবার বিষ্ণুপুর থানায় ৮ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত সীতারামবাবুর স্ত্রী মিঠুদেবী। যদিও অভিযুক্তদের নাম জানায়নি পুলিশ। |
সীতারাম কুণ্ডু। |
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায় অবশ্য সিপিএমের অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তাঁর দাবি, “জমিজমা সংক্রান্ত পারিবারিক আশান্তির জেরে এই খুন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। সিপিএম অযথা রাজনৈতিক রং লাগাতে চাইছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, বছর পনেরো আগে সীতারামবাবুর জেঠতুতো দাদা খুন হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছিল। |
সিপিএমের পার্টি অফিস ভাঙচুর প্রসঙ্গে শ্যামবাবু বলেন, “শনিবারই বিকেলে রাধানগর গ্রামে একটি পুকুরে বস্তাবন্দি বোমা উদ্ধার হয়। তার জেরে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে সিপিএমের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছি। ওই ঘটনার সঙ্গেও আমাদের দলের কর্মীদের কোনও সম্পর্ক নেই।” মিঠুদেবীর অভিযোগ, “উনি সিপিএমকে ভালবেসে রাজনীতি করতেন। বারণ করলেও শোনেননি। তাই তৃণমূল লোকেরাই ওঁকে খুন করেছে।” স্থানীয় সূত্রের খবর, অন্য দিনের মতো শনিবারও জন্তা গ্রামে একটি বালিখাদানের অফিসে আড্ডা মারছিলেন সীতারামবাবু। হঠাৎ রড-লাঠি চড়াও হয় জনা ২০-২৫ দুষ্কৃতী। ওই সিপিএম নেতা দৌড়ে আশ্রয় নিতে যান সামনের একটি বাড়িতে। কিন্তু দুষ্কৃতীরা টানতে টানতে চৌমাথায় নিয়ে এসে তাঁকে পিটিয়ে মারে। ওই বাড়ির মালিক এবং চৌমাথায় থাকা একটি চায়ের দোকানের মালিক-সহ তিন জনকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রাজা বলেন, “তদন্ত চলছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।” |
|
ভাঙচুরের পরে। রাধানগর গ্রামে সিপিএমের বিষ্ণুপুর (উত্তর)
লোকাল কমিটি অফিস ও জয়কৃষ্ণপুরে দলের শাখা অফিস। |
এ দিন জন্তা গিয়ে দেখা গেল, সিপিএমের শাখা কমিটির অফিসের বাইরে পড়ে আছে ভাঙা চেয়ার ও ছেঁড়া দলীয় পতাকা। যথেষ্ট সম্পন্ন পরিবার সীতারামবাবুদের। পাকা বাড়ি। সামনে দু’টি ট্রাক্টর, মোটরবাইক। মেজো ভাই রাধেশ্যাম কুণ্ডু বলেন, “রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে গ্রামে দলের সবাই চুপচাপই ছিল। দাদাও চুপ করে ছিলেন। তবু দাদাকে এ ভাবে মরতে হল!” জন্তা লাগোয়া রাধানগর গ্রামে বিষ্ণুপুর (উত্তর) লোকাল কমিটির অফিসেও তাণ্ডবের চিহ্ন স্পষ্ট। এখানেই বাড়ি বিষ্ণুপুরের সদ্য প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক স্বপন ঘোষের। তাঁকে গ্রামে পাওয়া যায়নি। লোকাল কমিটির সম্পাদক-সহ অনেকেই গ্রামছাড়া। তৃণমূলের কার্যালয়ে হামলার অভিযোগে ধৃত সিপিএমের আরামবাগ জোনাল কমিটির সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেনের জামিনের আবেদন নাকচ করে তাঁকে জেল-হাজতে পাঠাল আদালত।
|
ছবি: শুভ্র মিত্র |
|