|
|
|
|
বাগডাঙায় খুনে অভিযুক্ত বালক থানাতেও নির্বিকার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ডোমকল |
প্রিয় বন্ধুকে খুনের পরেও খুব স্বাভাবিক দশ বছরের রাব্বিল শেখ। পুলিশের হাতে ধরা পড়েও শনিবার রাতে থানার লকআপে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে। আচরণে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। কিন্তু গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত ডোমকলের বাগডাঙা গ্রাম। গ্রামবাসীরা মানতেই পারছেন না যে, রাব্বিল সরিফুলকে খুন করেছে। তাঁরা মনে করেন, এই খুনের পিছনে রাব্বিলের বাবা-মায়ের হাত রয়েছে। ঘটনাটি বিশ্বাস করতে পারছে না পুলিশও।
পুলিশি জেরায় রাব্বিল বলেছে, “খেলার সময়ে সরিফুল আমায় খুব মারত। আমিও মারতাম। কিন্তু সেটা ও বাবা-মাকে গিয়ে বলত। ওর বাবা-মা ওর কথা শুনে আমায় খুব বকাবকি করত।” ডোমকলের এসডিপিও সুবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাব্বিলকে বারবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। সে ততবারই বলেছে, পাটের ছাল দিয়ে সে-ই বন্ধুর গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
তবে শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিরন্ময় সাহার মতে, এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, “প্রাপ্তবয়স্কদের মতো অনেক শিশুর মধ্যে মানসিক বৈকল্য থাকে। কিন্তু মুশকিল হল, শিশুদের সেই মানসিক সমস্যাগুলিকে বড়রা আমল দেন না বা অনেকসময় মানতে চান না। এর ফলে সকলের অজান্তে কোনও শিশুর মানসিক সমস্যা ভিতরে ভিতরে বাড়তে থাকে। একসময় তা এমন মারাত্মক আকার নেয় যে শিশুটি খুন করতে পারে। একে চিকিৎসা পরিভাষায় সাইকোপ্যাথিক পার্সোন্যালিটি বলা হয়। এটা এক ধরনের বিকার। যা ওই ছেলেটির ছিল।”
শুক্রবার দুপুরে নামসঙ্কীর্তন শুনতে যাওয়ার নাম করে রাব্বিল সরিফুলকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যায় রাব্বিল ফিরলেও সরিফুলের খোঁজ মেলেনি। শনিবার দুপুরে রাব্বিলের বাড়ির পিছনে পাটখেত থেকে উদ্ধার হয় সরিফুলের দেহ। সরিফুলের পরিবারের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ রাব্বিল ও তার মাকে গ্রেফতার করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাগডাঙা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাব্বিল ও সরিফুলের বাড়ি রাস্তার দুই পাড়ে। স্কুলের সময়টা ছাড়া দিনের বেশিরভাগ সময়েই দু’জনে একসঙ্গে থাকত। এমন কোনও শত্রুতা দু’জনের মধ্যে ছিল না। তা ছাড়া, দিনের বেলা বাড়ি লাগোয়া পাটখেতে এমন একটা ঘটনা ঘটলে তা এলাকার কারও নজর এড়িয়ে যাবে না।
সরিফুলের কাকা আকালি মণ্ডল অবশ্য বলেন, “রাব্বিল একা কখনও খুন করতে পারে না। ওর বাবা-মা ওই রাতে সরিফুলকে খুন করে দেহ বাড়ির পিছনে ফেলে রাখে। আমাদের সঙ্গে ওদের একটা পুরনো বিবাদ ছিল। তার জেরেই এমনটা করেছে।” বাগডাঙা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের মুখ্য সম্প্রসারক নজরুল ইসলাম বলেন, “রাব্বিল পড়াশোনায় দুর্বল। একটু চাপা স্বভাবের ছেলে। সে এমনটা করতে পারে না।”
কিন্তু খুন করার পরেও দশ বছরের বালক এত স্বাভাবিক? হিরন্ময়বাবুর কথায়, “এরা সাধারণত যতই অপরাধ করুক না-কেন, মানসিক অসুস্থতার জন্য নিজেদের অন্যায়ের পক্ষে নিজের মনেই এরা কোনও যুক্তি খাড়া করে নেয়। তাই নিজেদের মনেই হয় না যে কোনও অন্যায় করেছে। ফলে অপরাধ করেও এরা বিকারহীন থাকে। এ ধরনের শিশুদের আপাত ভাবে স্বাভাবিক মনে হলেও এদের চাওয়াপাওয়া, রাগ-জেদ অস্বাভাবিক প্রবল হয়। সেটা চরিতার্থ করতে এরা যে কোনও পর্যায়ে যেতে পারে।” |
|
|
|
|
|