সম্পাদক সমীপেষু...

লিয়াকত আলির হেঁশেল চালাত চারুকাকা

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর (১৮-৫) হিন্দু মুসলমানের হেঁশেলে দুই ভিন্নধর্মী মানুষের পেশাগত অনুপ্রবেশ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তিনি হিন্দুদের হেঁশেল নিয়ে বলেছেন,...‘রান্নাঘরে কোনও মুসলমানের হস্তক্ষেপ আজও মানা হয় না। মুসলমান পরিবারেও হিন্দুদের সম্পর্কে এ রকম সংস্কার আছে কী?’ এই প্রসঙ্গে আমার নিজের কিছু জানা ঘটনার কথা বলতে চাই। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের তালা থানার অন্তর্গত কাঠবুনিয়া গ্রামে আমাদের বাড়ি ছিল। ১৯৫০ সাল। বাবার শ্রাদ্ধে খুলনার বাইশ পরগনার সব মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রিত ব্যক্তিরা সমস্ত রান্নাকেই অসাধারণ সুস্বাদু বলে এক বাক্যে তারিফ করেছিলেন। মূল পাচক ছিলেন বিনোদ মণ্ডল। আমাদের পাশের হাজরাকাঠি গ্রামের রহুল আমিন সাহেব ছিলেন খাইয়ে লোক। বর্ধিষ্ণু পরিবারের কর্তা আমিন সাহেব বিনোদের হাতের রান্নার শুধু প্রশংসাই করলেন না, তাকে রান্নার লোক হিসেবে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। সেখানেই বিনোদ রান্নার চাকরিতে স্থায়ী ভাবে বহাল হয়ে গেল।
তালা থেকে মাইল পাঁচেক দক্ষিণে কপোতাক্ষ নদীর তীরে কপিলমুনির বাজার। এই বাজারেও সে সময়ে শনি ও মঙ্গল বার জমজমাট হাট বসত। নদীর তীরে অসংখ্য বড় বড় নৌকার ভিড়। এই সব নৌকায় থাকত ছোট বড় নানা ধরনের ব্যাপারি। তারা বরদল, বাজুয়া, আরোআড়িয়া এমনকী খুলনা সদর থেকেও বাণিজ্য করতে আসত।
প্রধানত ধান, চাল, পাট, আটা, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, আলু আর বাঁশের সওদা হত এখানে। কপোতাক্ষর কূলে সারি সারি ভিড় করা নৌকাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। দেখতাম, পাঁচ ছয় থেকে আট দশ জন লোক এক একটি নৌকার বাসিন্দা। তারা নৌকা থেকে কেউ ডাঙায় মালপত্র নিয়ে আসছে কেউ বা আবার খালি নৌকায় পসরা বোঝাই করছে। প্রত্যেক নৌকায় নির্দিষ্ট একজনের ওপর রান্নার দায়িত্ব থাকত। খুলনার রূপসা ঘাট থেকে আসা একটি নৌকায় রান্নার কাজ করত চারু বিশ্বাস। তার সঙ্গে আমার আলাপ ও ভাব হয়েছিল। আমাকে সে কাঠি লজেন্স জিলিপি বাঁশি এই সব কিনে দিয়েছিল। বহু দিন হল, চারুকাকার সঙ্গে আর দেখা নেই। আমার বড়দা জমিজমা সংক্রান্ত মামলার সুবাদে প্রায়ই খুলনায় যেতেন। আমিও মাঝে মাঝে সঙ্গী হতাম। উঠতাম বঙ্গশ্রী হিন্দু হোটেলে। একদিন অকস্মাৎ চারুকাকার সঙ্গে দেখা। কথায় কথায় চারুকাকা জানাল, সে এখন নৌকায় রান্না করে না, নৌকার মালিক বাগেরহাটের লিয়াকত আলির বাড়িতে নিয়মিত হেঁশেল সামলায়। সেখানে সে আমিষ ও নিরামিষ সব ধরনের রান্নাই করে।
উচ্চশিক্ষা
সুকান্ত চৌধুরীর ‘আমাদের উচ্চশিক্ষা: বদল নয়, সূচনা’ (৩১-৫/ ২-৬) লেখাটির সূত্র ধরে বলি, জেনারেল স্ট্রিমের কলেজে ভাল ছাত্রছাত্রী আর সে ভাবে আসছে না। বেশির ভাগ ভাল ছাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল স্ট্রিমে চলে যাচ্ছে। এর একটি বড় কারণ হল, কম সময়ের ব্যবধানে পড়া শেষ হচ্ছে এবং চাকরি অনেকটাই সুনিশ্চিত। ফলে, জেনারেল স্ট্রিমের আকর্ষণ অনেক আগেই কমতে শুরু করেছে।
কলেজ শিক্ষকদের কাজের প্রকৃতিরও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। পরীক্ষা নেওয়া ও বিপুল পরিমাণ খাতা দেখা এবং নানা রকম ক্ল্যারিকাল কাজ এত বেশি করতে হয় যে পঠন-পাঠন ও গবেষণামূলক কাজ স্বভাবতই ব্যাহত হয়ে পড়ে। উচ্চশিক্ষার অপকর্ষের কারণ হিসেবেই বিষয়টি গণ্য হওয়া উচিত।
তা হলে নেট পাশ করেও চাকরি নেই কেন
কয়েক দিন আগের একটি খবর দেরিতে আমার নজরে এসেছে। ওয়েবকুটা প্রদত্ত উচ্চশিক্ষা-মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সংবর্ধনাসভায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, মাত্র ২-৩ শতাংশ ছাত্র নেট-সেট পরীক্ষায় পাশ করায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য শিক্ষকের পদ পূরণ করা যাচ্ছে না।
কিন্তু তা-ই যদি হবে, তা হলে নেট-সেট পাশ করা ছাত্রদের অনেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের চাকরি না পেয়ে বসে আছে কেন? তাদের তো তা হলে ডেকে চাকরি দেওয়া উচিত। আর, নেট-সেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে যদি কলেজে পড়ানো না যায়, তা হলে অংশকালীন হিসেবে বা চুক্তি-ভিত্তিক হিসেবে বহু নেট-সেট পাশ-বর্জিতেরা কলেজে শিক্ষকতা করছেন কী ভাবে? আর উচ্চশিক্ষারই বা কী হাল যে উচ্চশিক্ষা প্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র ২-৩ শতাংশ নেট বা সেট-এ উত্তীর্ণ হয়!
Previous Item Editorial First Page


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.