দিল্লির মাটিতে ১৫ দিন পা না রাখার ‘নির্দেশ’ দিয়েছিল সরকার। তার ২১ দিন পরে আজ রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন ঘটল রামদেবের। আর ফিরেই দুর্নীতি, কালো টাকা, লোকপাল, ডিজেল-কেরোসিন-রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি থেকে তাঁকে খুনের ষড়যন্ত্র পর্যন্ত যাবতীয় বিষয়ে রামদেব মনমোহন-সরকারের দিকে আক্রমণ শানালেন।
কংগ্রেস নেতৃত্ব একে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা বলে মনে করলেও, আজ রামদেবের জন্য দিল্লি পুলিশের তৎপরতা ছিল দেখার মতো। যে দিল্লি পুলিশ গত ৪ জুন মধ্যরাতে রামলীলা ময়দান থেকে রামদেবকে ‘জোর করে’ তুলে হরিদ্বারে পাঠিয়েছিল। আজ প্রথমে জি বি পন্থ হাসপাতাল, তার পরে কনস্টিটিউশন ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন, মাঝে কিছু ক্ষণের জন্য গুরুদ্বারা বাংলা সাহিব ও আর্য সমাজ মন্দির, যেখানেই রামদেব গিয়েছেন, গোটা চত্বর কার্যত পুলিশ ছাউনির চেহারা নিয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনের সময়েও ছিল খাকি ও সাদা পোশাকের পুলিশের ভিড়। পাল্লা দিয়ে ভিড় করেছেন ‘বাবা’র অনুগতরাও। প্রতি মুহূর্তে ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি তুলেছেন গলা ফাটিয়ে।
তাঁর ঝটিকা সফর ঘিরে এই পুলিশি তৎপরতার মধ্যেই আজ রামদেব কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লি পুলিশের দিকে তাঁকে খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। রামলীলা ময়দানে মহিলাদের ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছিল দাবি করেছেন। বলেছেন, পুলিশ রামলীলার মঞ্চে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল। তবে ‘এখন এ সবের কোনও প্রমাণ দেবেন না’ বলেও জানিয়ে দিয়েছেন যোগগুরু। যুক্তি, এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মামলা চলছে। রামদেব-প্রসঙ্গে যা নিয়ে মনমোহন-সরকার ও কংগ্রেসের মধ্যেই মতভেদ দেখা দিয়েছিল, সেই স্পর্শকাতর জায়গাতেই আঘাত করেছেন তিনি। প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি যদি সাম্প্রদায়িক বা ‘বিজেপি-আরএসএসের মুখোশ’ হবেন, তা হলে সরকারের চার শীর্ষমন্ত্রী কেন বিমানবন্দরে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন? কেনই বা প্রধানমন্ত্রী ও প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁকে চিঠি লিখেছিলেন? কেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তাঁর সঙ্গে হোটেলে দেখা করতে যান? |
রাজধানীতে সাংবাদিকদের
মুখোমুখি। রবিবার। রয়টার্স |
এর জবাবে অবশ্য কপিল সিব্বলের যুক্তি, বিমানবন্দরে না গেলে তাঁরা রামদেবের মুখোশ খুলে দিতে পারতেন না। সিব্বল বলেন, “উনি আমাদের সঙ্গে দর কষাকষি করছিলেন, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন, এ দিকে রামলীলা ময়দানে অনুমতি না নিয়েই অনশনে বসেছিলেন।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমও জানিয়েছেন, “রামদেবকে শান্তিপূর্ণ পথে ময়দান ছাড়তে বলা হয়েছিল। তিনি তা না করাতেই গণ্ডগোল বাঁধে।” আর রামদেবের দাবি, “আমি কোনও দলের মুখোশ নই। আমি দু’টি মাত্র বস্ত্রে শরীর ঢেকে দিন কাটাই। সেই দিন তো নেংটি ছাড়া পুলিশ আর কিছু বাকি রাখেনি।” |
|
প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সাম্রাজ্যের মালিক রামদেবের কালো টাকা নিয়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে। রামদেবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বালাকৃষ্ণের বিরুদ্ধে একাধিক পাসপোর্ট রাখার অভিযোগেরও সরকারি ভাবে তদন্ত শুরু করতে চলেছে সিবিআই। রামদেব অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “আমি গত ১৫ বছর ধরে এক গেলাস দুধ ও এক বাটি তরকারি খেয়ে থাকি। বিছানায় শুই না। সরকার আমার এক পয়সা আয়ও কালো টাকা বলে প্রমাণ পেলে তা জনসাধারণের সম্পত্তি বলে ঘোষণা করুক।”
হরিদ্বার থেকে সোজা সড়কপথে দিল্লি পৌঁছে আজ প্রথমেই জি বি পন্থ হাসপাতালে যান রামদেব। রামলীলা ময়দানে পুলিশি হানায় গুরুতর আহত রাজবালার সঙ্গে আইসিইউ-তে গিয়ে দেখা করেন। তার পর সাংবাদিক সম্মেলন করেন। দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ধরম কুমারের বক্তব্য, “রামদেবকে কোথাও বাধা দেওয়া হয়নি। সাংবাদিক সম্মেলনেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।” তবে রামদেবের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর কড়া নজর রেখেছে দিল্লি পুলিশ ও আইবি। একই ভাবে তাঁর পিছন পিছন ছুটেছেন সব বয়সের ভক্তরা। সাংবাদিক সম্মেলন সেরে পুলিশের গাড়ির বনেটে উঠেই তাঁদের ‘দর্শন’ দিয়েছেন রামদেব।
অনেক প্রশ্নের তবু উত্তর মেলেনি। দুর্নীতি ও কালো টাকা বিরোধী আন্দোলনে এর পর রামদেব কোন আন্দোলনে নামবেন, তা জানাননি তিনি। তাঁর আগামী কর্মসূচিতেও দুর্নীতির বদলে শুধুই ‘স্বনির্ভর গ্রাম’ ও ‘আধ্যাত্মিক ভারত’ গড়ে তোলার কথা। আগের মতো ‘ভারত স্বাভিমান ট্রাস্ট’-এর বদলে আজ সাংবাদিক বৈঠক সেরেছেন ‘গ্রামোদ্যোগ এবং সশক্ত ভারত’-এর ব্যানারে। এমনকী আগামী ১৬ অগস্ট থেকে মজবুত লোকপালের দাবিতে আন্না হাজারের অনশনে তিনি যোগ দেবেন কি না, সে কথাও খোলসা না করেই পুলিশ আর ভক্তদের ভিড়ে মিশে গিয়েছেন ‘বাবাজি’। |