|
|
|
|
‘বন্ধ’ রানওয়েতে নামল বিমান, জোর রক্ষা ৭ কর্মীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
একমনে কাজ করছিলেন ওঁরা। আচমকা কান ফাটানো আওয়াজ শুনে মাথা তুলেই ভিরমি খাওয়ার জোগাড়! প্রায় ঘাড়ের উপরে এসে পড়েছে আস্ত একটা বিমান!
অসর্তক পথচারী গাড়ির সামনে পড়তে পারেন। অনেক সময়ে অসাবধানে লাইন পেরোতে গিয়ে যখন কারও সম্বিৎ ফেরে, ততক্ষণে হয়তো তাঁর ঘাড়ের উপরে এসে পড়েছে ট্রেন। আকাশে বিমানের ধাক্কায় পাখি মারা যায় হামেশাই। কিন্তু বিমানের মুখে পড়ে মাটিতে দাঁড়ানো মানুষের প্রাণসংশয়?
এমনই বিচিত্র ঘটনার সাক্ষী থাকল রবিবার ভরদুপুরের কলকাতা বিমানবন্দর। রানওয়েতে গর্ত বোজানোর কাজ করছিলেন সাত কর্মী-অফিসার। নিশ্চিন্তে। কারণ ওঁরা জানতেন, ওই রানওয়েতে কোনও বিমান নামবে না। কিন্তু হঠাৎই দেখেন, ক’হাত দূরে নেমে পড়েছে একটা মস্ত যাত্রীবিমান। পড়িমরি করে ছুটে শেষ মুহূর্তে প্রাণে বেঁচেছেন সাত জন। বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে বিমানটিও।
কী ভাবে ঘটল এই অঘটন?
বিমানবন্দর-সূত্রের খবর: যশোহর রোডের দিক থেকে বিমান নামার জন্য দু’টো রানওয়ে রয়েছে কলকাতায়। প্রধান রানওয়ে বন্ধ থাকলে দ্বিতীয়টা খুলে দেওয়া হয়। ‘মেন কিলো ট্যাক্সিওয়ে’-র
কাছে একটা গর্ত মেরামতির জন্য রবিবার
সকালে প্রধান রানওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সব
বিমানের প্রতি নোটিসও জারি করেছিলেন। কী বলা হয়েছিল তাতে?
কলকাতা বিমানবন্দর-সূত্রের খবর: সেই ‘নোটিস টু এয়ারম্যান’-এ পরিষ্কার বলা ছিল, গর্ত সারাইয়ের দরুণ রবিবার সকাল ১১টা ৩৮ মিনিট থেকে দুপুর ২টো ৩০ মিনিট পর্যন্ত প্রধান রানওয়ে বন্ধ থাকবে। তখন বিমান নামাতে হবে দ্বিতীয় রানওয়ে দিয়ে। এই সময়ের মধ্যে কলকাতা বন্দরে যে যে বিমানের নামার কথা ছিল, সেগুলোর পাইলটদেরও বার্তা পাঠানো হয়। বার্তা অনুসারে বেশ ক’টা বিমান দ্বিতীয় রানওয়ে দিয়ে নামে। কিন্তু দুপুর বারোটা নাগাদ ১৪০ জন যাত্রী নিয়ে ব্যাঙ্কক থেকে আসা এয়ার এশিয়ার বিমানটি ভুল করে প্রধান রানওয়েতে নেমে পড়ে রীতিমতো ত্রাসের সঞ্চার করে দেয়।
বিস্তারিত বিবরণ দিতে গিয়ে বিমানবন্দরের আধিকারিকেরা জানান, বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে এয়ার এশিয়ার বিমানটি যখন কলকাতা বিমানবন্দরের আকাশে আসে, তখন প্রধান রানওয়েতে গর্ত বোজাতে ব্যস্ত ছিলেন এক ইঞ্জিনিয়ার, এক মহিলা অফিসার ও জনা পাঁচেক কর্মী। আচমকা তাঁরা দেখেন, ওই রানওয়ে দিয়েই বিমান নামছে। কাজ ফেলে হুড়মুড়িয়ে কোনও মতে তাঁরা সরে যান। ওঁদের প্রায় মাথা ঘেঁষে বিমানটি অবশ্য নির্বিঘ্নেই অবতরণ করে। তবে গর্ত মেরামতির কোনও যন্ত্রপাতি সেই মুহূতে রানওয়েতে পড়ে ছিল না। থাকলে বড় বিপত্তি হতে পারত। কেননা তাতে ধাক্কা লেগে বিমানটির দুর্ঘটনায় পড়ার সমূহ আশঙ্কা ছিল বলে জনিয়েছেন বিমানবন্দরের অফিসারেরা।
আগাম নোটিস সত্ত্বেও বিমান প্রধান রানওয়েতে নামল কেন?
কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের বক্তব্য: এয়ার এশিয়ার বিমানটি কলকাতার চার মাইল দূরে থাকতেই পাইলটকে হুঁশিয়ার করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও উত্তর আসেনি। যদিও বিমানবন্দরের খবর: অবতরণের পরে পাইলট নিজের ‘ভুল’ স্বীকার করেছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্তও হবে।
|
|
|
|
|
|
|