|
|
|
|
জম্বুদ্বীপের কাছে ট্রলার ডুবে মৃত ১, উদ্ধার ৯ মৎস্যজীবী |
শুভাশিস ঘটক • কাকদ্বীপ |
দিন কয়েক আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ট্রলার ডুবির ঘটনার পর ফের ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটল। মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জম্বুদ্বীপের কাছে ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক মৎস্যজীবীর। তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই উদ্ধারকারী দল নিয়ে ঘটনাস্থলে রওনা হয় ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানার পুলিশ। ওইদিনই রাত ১২টা নাগাদ ওই ট্রলারের ৯ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে আনা হয়। তাঁদের দ্বারিকানগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এম ভি মা সাবিত্রী নামে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রলারটিও উদ্ধার করে নামখানায় আনা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে এম ভি মা সাবিত্রী নামে ওই ট্রলারটি মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে রওনা হয়। ট্রলারটিতে ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানা এলাকার দেবনিবাস, অমরাবতী ও বিজয়বাটি এলাকার মৎস্যজীবীরা ছিলেন। ট্রলারের মাঝি নানুগোপাল দাস পুলিশকে বলেন, “মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ ট্রলার নিয়ে রওনা দিই। রাত তখন ৮টা হবে। তখন ভাটা চলছে। জম্বুদ্বীপের কাছে লাটিমের চরায় আচমকাই ট্রলারটা আটকে যায়। ওখান থেকে ট্রলার সরাতে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করা ছানা কোনও উপায় ছিল না। ভাবলাম জোয়ারে জল বাড়লে দেখা যাবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জোয়ার আসে। কিন্তু জলের ধাক্কা এতটাই প্রবল ছিল যে আচমকা ট্রলারটা একদিকে অনেকটাই কাত হয়ে পড়ে। অনেকটা জল ঢুকে যায়। আমরা সবাই তখন প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছি। আমি ও কয়েকজন পাইলট কেবিনের উপরে উঠে পড়ি। কিন্তু একজন কেবিনের মধ্যে ঢুকে পড়ে। খানিক পরে কেবিনেও জল ঢুকে যায়। এরই মধ্যে কোনওরকমে ফ্রেজারগঞ্জ থানার বড়বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি জানিয়ে সাহায্য চাই।” |
|
উদ্ধার হওয়া সেই ট্রলার। ফ্রেজারগঞ্জে দিলীপ নস্করের তোলা ছবি। |
রাত তখন আটটা। থানায় বসেছিলেন ওসি অসিতবরণ কুইলা। হঠাৎই তাঁর মোবাইলে ফেন আসে, ‘আমি মা সাবিত্রী ট্রলারের পাইলট বলছি। আমরা জম্বুদ্বীপের লাটিমের চরে আটকে গিয়েছি। ট্রলারে জল ঢুকেছে। আমাদের উদ্ধার করুন’। অসিতবাবু জানান, খবর পেয়েই তিনি কাকদ্বীপের সিআই তারাশঙ্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওয়্যারলেসে দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্য ট্রলারগুলিকেও খবর পাঠান। এরপরেই জনা দশেক লোকজন, কয়েকটি লাইফ জ্যাকেট এবং কয়েকটা টর্চ নিয়ে একটি ট্রলারে করে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হন। রাত ১০টা নাগাদ তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছন। টর্চের আলোয় দেখেন মা সাবিত্রী নামে ওই ট্রলারটি একদিকে বিপজ্জনকভাবে হেলে রয়েছে। কেবিলের উপরে জড়সড় হয়ে বসে রয়েছেন কয়েকজন। কয়েকজন আবার ট্রলারটির যে দিকটি উঁচু হয়ে রয়েছে, সেদিক আঁকড়ে ধরে রয়েছেন। একে একে ৯ জনকে উদ্ধার করে তাঁদের ট্রলারে তোলেন। কেবিন থেকে ওই যুবককেও অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রাত ১২টা নাগাদ তাঁরা নামখানা ঘাটে ফিরে আসেন। ওই যুবক-সহ অন্য মৎস্যজীবীদের দ্বারিকানগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা ওই যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ট্রলারের পাইলট জানিয়েছেন মৃত যুবকের নাম হরিপদ সামন্ত। তিনি রামনগর থানার নৈনান এলাকার বাসিন্দা। যদিও সেখানে খবর পাঠানোর পরে লোকজনেরা এসে হরিপদ সামন্ত নামে ওই যুবককে শনাক্ত করতে পারেননি। বুধবার অন্য ট্রলারের সাহায্যে এম ভি সাবিত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে ফ্রেজারগঞ্জে। |
|
|
|
|
|