নেই-রাজ্যেই পড়ে কলিঙ্গ গ্রাম
মোবাইল-এ চার্জ দিতে আর ঠিক কত দিন পাশের গ্রামে পাড়ি দিতে হবে? চাপড়ার কলিঙ্গ গ্রাম জানে না।
প্রাক বর্ষায় হাঁটু ভাঙা কাদা, পানীয় জলের জন্য নলকূপে বুক বেঁধে থাকা, নেই-এর এই দীর্ঘ তালিকায় হাসপাতাল থেকে বিদ্যুৎকলিঙ্গ তবু স্বপ্ন দেখে গ্রামের ছেলে মেয়েদের বর্ষা-দিনে কোমরে গামছা জড়িয়ে ধানের খেত পার হয়ে পাকা রাস্তার খোঁজ করছে না। অসুস্থকে ঘাড়ে বয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন না পড়শিরা। আলোর অভাবে রাত একটু বাড়লেই বই বন্ধ করে ঘুমোতে যাচ্ছে না পড়ুয়ারা।
বর্ষার দিনে বাকি পৃথিবী থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন এমনই এই গ্রাম, কলিঙ্গ। গ্রামবাসী আসাদুল শেখ বলেন, “ভাবতে পারেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও গ্রামের একটি বাড়িতে বিদ্যুৎ ঢোকেনি! ছাত্রছাত্রীদের কোমরে গামছা জড়িয়ে কাদা ভেঙে স্কুলে যেতে হয়!”
চাপড়া থানার কলিঙ্গ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে অন্যতম বড় ও জনবহুল গ্রাম কলিঙ্গ। গ্রামে অন্তত পাঁচশো পরিবার। অথচ একটি মাত্র প্রাথমিক স্কুল আর একটি মাত্র শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। লক্ষ্মীপুরে একটি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র আছে। হাই স্কুল বলতে চাপড়া আর দইয়েরবাজার। চাপড়া যেতে হলে বাঙালঝি চৌরাস্তা থেকে কলিঙ্গ পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার রাস্তার পুরোটাই মাটির। আবার ৭ কিলোমিটার দূরে দইয়েরবাজার যেতে হলে মাধবপুর পর্যন্ত ৪ কিমি রাস্তাও মাটির। পাশের লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ৩ কিমি রাস্তাটিও মাটির। অর্থাৎ গ্রাম থেকে বের হওয়ার প্রতিটি রাস্তাই নেঠো পথ। বর্ষায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা। সেই কাদা মেখেই গ্রামের বাইরে যেতে হয় সকলকে।
বিকল্প বলতে গ্রামের পাশের চাষের মাঠের উল্টো দিকে ন’মাইল গ্রাম। প্রায় ৩ কিলোমিটার সেই মাঠ পার হলেই কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়ক। দৈয়েরবাজার বিদ্যামন্দিরের ছাত্র সঞ্জীব বিশ্বাস বলে, “বর্ষার দিনে বেশির ভাগ দিনই স্কুলে যেতে পারি না। রাস্তায় হাঁটুসমান কাদা।” সঞ্জীব বলে, “তার ওপর গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। কেরোসিনের দামও এখন প্রচণ্ড বেশি। সকলের কেনার ক্ষমতা নেই। তাই সন্ধে নামলেই অনেককে পড়া বন্ধ করে দিতে হয়।”
যদিও চাপড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের অপর্ণা বিশ্বাস বলেন, “আমরা কিন্তু সত্যি সত্যিই আন্তরিক ভাবে ওই গ্রামের উন্নয়নের চেষ্টা করছি। কলিঙ্গ খালের উপরকার সেতুটির কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। চাপড়া থেকে কলিঙ্গ গ্রামে যাওয়ার রাস্তাটি পাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বার্ষিক অ্যাকশন প্ল্যানে তোলা হয়েছে। কাজ শুরু হবে খুবই তাড়াতাড়ি। বিদ্যুতেরও পোলও ফেলা হচ্ছে।” কিন্তু এত দিন কেন হয়নি? অপর্ণা দেবী বলেন, “ওই গ্রামটি খুবই নিচু। সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে। পিচের রাস্তা করলেও থাকত না। তাই আমরা এ বার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে মাটি ফেলে রাস্তাগুলো উঁচু করছি।” শুনে গ্রামবাসীরা বলেন, “অনেক দিন ধরেই শুনছি।” সেই প্রতিশ্রুতিতেই তবু ভরসা রাখেন তাঁরা!
First Page Murshidabad Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.