নিজের সাফল্যের জন্য পুরো কৃতিত্ব দিয়ে আগেই তাঁকে কুর্নিশ করেছিলেন সুরেশ রায়না।
বুধবারের সাবাইনা পার্ক দেখাল, তাঁকে এখন কুর্নিশ করতে পারে ধোনির গোটা দলই। এমনকী রায়নার মতোই এক রকম ‘গুরু’ বলে নিতে পারে টিম ইন্ডিয়ার তরুণ প্রজন্মও।
যখন তাঁর অবসর নেওয়া নিয়ে মাঝে মধ্যেই আওয়াজ উঠছে, তখন তিনি রাহুল দ্রাবিড় আরও এক বার দেখিয়ে দিলেন কঠিনতম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মতো রসদ তাঁর মধ্যে এখনও আছে।
ফিডেল এডওয়ার্ডসের বল গালির দিকে ঠেলে শততম রান নেওয়ার মধ্যে শিল্পের ছোঁয়া হয়তো ছিল না, কিন্তু ছিল এমন একটা মানুষের লড়াইয়ের ছবি, যে কখনও হারতে জানে না।
এটা কি তাঁর অন্যতম সেরা সেঞ্চুরির মধ্যে একটা হবে? বলা যাবে না। তবে এটা অন্তত বলা যাবে, চোয়াল চাপা লড়াইয়ের বিচারে অবশ্যই লেটার মার্ক পাবে দ্রাবিড়ের ৩২ নম্বর সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় ইনিংসের সেঞ্চুরির সব সময় একটা আলাদা তাৎপর্য থাকে। তার উপর ক্রমে খারাপ হতে থাকা পিচে সেটা হলে তো কথাই নেই। দ্রাবিড় যখন সেঞ্চুরি করেন, তখন স্কোরবোর্ডে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরারের নাম রায়না (২৭)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এটা তাঁর চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি।
দ্রাবিড়ের এই ইনিংসের পরে সাবাইনা পার্কে দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ভারত। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভারত করেছে ২২৩-৮। দ্রাবিড় ব্যাট করছেন ১০১ (২৫৩ বলে, ১০টা চার) রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত এগিয়ে ২৯৬ রানে।
সাবাইনা পার্কের উইকেটে প্রথম দিন থেকেই বল ঘুরেছে। বাউন্স তো আছেই। আজ তৃতীয় দিনে বিশুর একটা বল তো গুড লেংথ স্পট থেকে লাফিয়ে উঠে উইকেটকিপারের মাথার উপর দিয়ে স্লিপের হাতে চলে গেল। রামপল যখন তখন বল কাট করে ভিতরে ঢুকিয়ে এনেছেন। দু’জনের সামনেই বার কয়েক অস্বস্তিতে পড়েছেন দ্রাবিড়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ‘দ্য ওয়াল’-এ এর থেকে বেশি চিড় ধরানো যায়নি।
ধোনির এই দলটায় তরুণ প্রজন্মের চার ব্যাটসম্যান রয়েছেন। বিজয় (০), মুকুন্দ (২৫), কোহলি (১৫) এবং রায়না (২৭)। চার জনের মিলিত রানও এই ইনিংসে দ্রাবিড়ের ব্যক্তিগত রানের চেয়ে অনেক কম। আর ক্রিকেটীয় বিচারে চার তরুণের ব্যাটিং তো কয়েক শো মাইল পিছনে থাকবে দ্রাবিড়ের থেকে। ‘গুরু’ দ্রাবিড়ের জমানা যে এখনও চলছে, সেটা আরও একবার দেখা গেল সাবাইনা পার্কে।
রায়না বিতর্কিত আউট হয়ে যাওয়ার পর এ দিন ভারত পর পর উইকেট হারিয়েছে। ধোনি (১৬) এসেই মারতে শুরু করেন। টেকেননি বেশি সময়। হরভজনের কাছে সব সময় বড় রান চাওয়া মুর্খামি। দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচের বেশি পাওয়া যায়নি তাঁর কাছ থেকে। প্রবীণ কুমার করেন শূন্য। ওই সময় অমিত মিশ্রকে সঙ্গী করে দ্রাবিড় ভারতকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কাজটা করতে থাকেন।
গোটা ইনিংস ধরে যে সাবলীল ব্যাটিং করে গিয়েছেন, তা নয়। কিন্তু ইনিংসের শুরুতে ছয় রানে ক্যাচ তুলে বেঁচে যাওয়ার পর থেকে এক বারের জন্যও দ্রাবিড়ের মনঃসংযোগ নষ্ট হতে দেখা যায়নি। টিভি ধারাভাষ্যকাররা বার বার বলছিলেন, কী ভাবে একটা লোক বলের পর বল, ওভারের পর ওভার ধরে এই মনঃসংযোগ ধরে রাখতে পারে, সেটাই আশ্চর্যের।
আসলে দ্রাবিড়রা তো সব সময় গোটা দুনিয়াকে অবাক করে দিতেই ভালবাসেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত প্রথম ইনিংস ২৪৬। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ১৭৩। ভারত দ্বিতীয় ইনিংস (মধ্যাহ্নভোজের দেড় ঘণ্টা পরে): ২২৩-৮ (দ্রাবিড় ব্যাটিং ১০১, রায়না ২৭, ধোনি ১৬। বিশু ৩-৪১)।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.