|
|
|
|
‘বিপন্ন’ তকমা ঘুচল মানসের |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
দীর্ঘ ১৯ বছর পর বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের তালিকায় ফিরে এল অসমের মানস অভয়ারণ্য। মুছল ‘বিপন্ন’ তকমা।
গত কাল প্যারিসে, ওয়র্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৩৫ তম অধিবেশনে, সর্বসম্মতভাবে মানসকে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের তালিকায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই সঙ্গে ‘ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট’, ‘বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ’, ‘টাইগার রিজার্ভ’ এবং ‘এলিফ্যান্ট রিজার্ভ’-এর শিরোপা বিশ্বের আর কোনও অরণ্যের নেই। তবুও মানস বিপন্ন ছিল এতদিন। ১৯২৮ সালের ১ অক্টোবর অভয়ারণ্যের মর্যাদা পাওয়া মানস ১৯৮৫ সালে ‘বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাঘ, হাতি, গন্ডার, পিগমি হগ, কালো চিতাবাঘ, মেঘলা চিতাবাঘ, গোল্ডেন ও লেপার্ড ক্যাট, সিভেট, বেঙ্গল ফ্লোরিকান, হরেক হরিণ, কালারড ফ্যালকনের মতো প্রথম তফসিলভুক্ত ২১ রকম বিপন্ন পশুপাখি রয়েছে এখানে। ইউনেসকোর মতে, ‘ভারতের সবচেয়ে বেশি বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির প্রাণীকে আশ্রয় দিয়েছে মানস।’ ১৯৭৩ সালে মানস টাইগার রিজার্ভ তৈরি হয়। তখন এর আয়তন ছিল ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৯০ সালে কাহিতমা, কোকিলাবাড়ি ও পানবাড়ি সংরক্ষিত অরণ্য মানসের সঙ্গে যুক্ত করে মানস জাতীয় উদ্যানের জন্ম। কিন্তু জঙ্গি সন্ত্রাস ও চোরাশিকারের ধাক্কায় মানসের পতন শুরু। ১৯৯২ সালে মানসকে ‘বিপন্ন’ বলে ঘোষণা করা হয়। জঙ্গল থেকে উধাও হয়ে যায় গন্ডার ও বাঘ। |
 |
নিজস্ব চিত্র |
‘বিপন্ন’ ঐতিহ্যক্ষেত্রের অন্তর্গত থাকার দু’টি দিক রয়েছে। এক দিকে, এলাকাটির গুরুত্ব ও সঙ্কটের প্রতি বিশ্বের নজর পড়ে। অন্য দিকে, দীর্ঘদিন বিপন্ন তালিকায় থাকলে ঐতিহ্যক্ষেত্রের তালিকা থেকে হঠে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। ২০০৭ সালে আরবের ওরিক্স অভয়ারণ্য ও ২০০৯ সালে জার্মানির ড্রেসডেন এলবে ভ্যালির ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছে। কিন্তু বিএলটি জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ, বড়ো চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর থেকেই দিন বদল শুরু। হাগ্রামা মহিলারির নেতৃত্বে জঙ্গিরা সরকারের শরিক হওয়ার পরে তারাই অরণ্যরক্ষার ভার হাতে তুলে নেয়। চোরাশিকারির দল আত্মসমর্পণ করে। অরণ্য রক্ষায়, পর্যটন সম্প্রসারণে ও চোরাশিকার রোধে তারাই জোটবদ্ধ হয়। সেই সঙ্গে মানসের হারানো প্রাণীদের ফিরিয়ে আনতে মাঠে নামে আইএফএডব্লিউ, ডব্লিউটিআই। কাজিরাঙা, পবিতরা থেকে গন্ডার, বাঘ মানসে ফেরে। দফায় দফায় হাতি আনা হয়েছে কাজিরাঙা থেকে। তবুও প্রতি বছরই কিছু না কিছু খামতির জন্য মানসের বিপন্নতা যেন আর কাটছিল না। নিয়ম করে অরণ্য সংরক্ষণ নিয়ে হেরিটেজ কমিটিকে রিপোর্টও দেয়নি রাজ্য সরকার।
এই বছর, হেরিটেজ দলের প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকদের মানস আসার আগাম খবর পেয়েই কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ অসমের মুখ্যমন্ত্রী, বনমন্ত্রীকে চিঠি লিখে নির্দেশ দেন, “যে করেই হোক, প্রতিনিধিদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। মানসের ‘বিপন্ন’ তকমা হঠাতে হবে।” শেষ পর্যন্ত, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ২২ জন সদস্যের ভোটে মানসের বিপন্নতা কাটল। |
|
|
 |
|
|