সম্পাদক সমীপেষু
জলের স্মৃতিশক্তি
রবিবাসরীয়তে পথিক গুহ-র ‘জলের স্মৃতিশক্তি’ (১৫-৫) লেখাটির কয়েক জায়গায় কিছুটা বিভ্রান্তির অবকাশ রয়েছে।
(১) ‘ব্যাসোফিল’ ও তার ‘ডিগ্র্যানিউলেশন’ পদ্ধতি সম্বন্ধে লেখকের ব্যাখ্যাগুলি যথাযথ মনে হয় না। যে সব শ্বেতকণিকায় প্রাণিদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মুখ্য ভাবে পরিচালিত করে তাদেরকে ‘লিম্ফোসাইট’ বলা হয়। আর ব্যাসোফিল গোত্রীয় শ্বেতকণিকারা আমাদের রক্তে খুব কম পরিমাণেই থাকে এবং শরীরের কয়েকটি বিশেষ ধরনের রোগ ও তার পার্শ্ববিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এই ব্যাসোফিল কোষের মধ্যে (সাইটোপ্লাজম) ছোট ছোট দানাকৃতি বা ‘গ্র্যানিউলার’ বস্তু থাকে, যার মধ্যে কয়েকটি বিশেষ ধরনের রাসায়নিক যৌগ (যেমন, ‘হিস্ট্যামিন’ ইত্যাদি) আমাদের শরীর বিক্রিয়ার পক্ষে ক্ষতিকারক। কয়েকটি বিশেষ প্রক্রিয়ার দ্বারা এই ব্যাসোফিল কোষগুলিকে উদ্বুদ্ধ করা যায়। যার ফলে, কোষের মধ্যস্থিত ক্ষতিকারক পদার্থগুলি ওই দানার আকার ছেড়ে কোষের বাইরে বেরিয়ে আসে। এই পদ্ধতিকে আমরা ডিগ্র্যানিউলেশন বলি। কোষের গায়ে লেগে থাকা ‘ইমিউনোগ্লবিউলিন-ই’ (সংক্ষেপে আই জি ই) প্রোটিন ও তার অ্যান্টিবডির (অ্যান্টি আই জি-ই) বিক্রিয়া এমন এক পদ্ধতি, যার দ্বারা ব্যাসোফিল কোষের ডিগ্র্যানিউলেশন আমরা পরীক্ষাগারেও ঘটাতে পারি এবং বিভিন্ন রাসায়নিক/জৈব রাসায়নিক/বায়োলজিক পদ্ধতি ও কয়েক ধরনের যন্ত্রের মাধ্যমে তার ফল গুণগত ভাবে (কোয়ালিটেটিভলি) অথবা পরিমাণগত ভাবে (কোয়ান্টেটিভলি) নথিবদ্ধ করতে পারি।
(২) নেচার পত্রিকার গড়া তিন সদস্যের কমিটির দেওয়া রিপোর্ট নিয়ে লেখক প্রবন্ধে এক জায়গায় দু’-এক কথা বলেছেন। কিন্তু কী কী বিজ্ঞানভিত্তিক কারণে ‘বেনভেনিস্ত’ ও তাঁর সহযোগীদের পরীক্ষালব্ধ ফল এই রিপোর্টে মানা হয়নি, তার একটু পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। অনেক গবেষক আছেন, যাঁরা কোনও নির্দিষ্ট অথচ অপ্রমাণিত তত্ত্ব প্রমাণ করতে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষার সময় অনেক ক্ষেত্রে পদ্ধতির সঠিক অনুসরণে ফলাফল যথাযথ ভাবে নথিভুক্ত করায় ও তাদের ব্যাখ্যায় গবেষকের নিজস্ব চিন্তাধারার প্রতিফলন হতে পারে। বেনভেনিস্ত ও তাঁর সহযোগীদের পুরনো খাতাপত্র পরীক্ষা করে এই তিন সদস্যের কমিটি এই রকম একটা আভাসই পেয়েছিলেন। যার ফলে সমস্ত পরীক্ষা আবার নতুন করে করতে বলা হয়েছিল।
(৩) বেনভেনিস্তের পরে বেশ কিছু বিজ্ঞানী ‘জলের স্মৃতিশক্তি’র উপর নানা সময়ে ও জায়গায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন যেটা এই প্রবন্ধে অনুল্লেখিত থেকে গেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ পরীক্ষার ফলাফলই বেনভেনিস্তের দাবিকে সমর্থন করেনি। তবে ২০০৪ সালে ইনফ্লামেশন রিপোর্ট জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় যাতে জলের স্মৃতিশক্তির সমর্থনে কিছু ফলাফল ছিল। এই গবেষকরা দেখিয়েছিলেন যে, অ্যান্টি আই জি-ই প্রোটিনের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে হিউম্যান ব্যাসোফিল কোষের ডিগ্র্যানিউলেশন প্রক্রিয়াকে হিস্ট্যামিন যৌগ দ্বারা কমানো বা বন্ধ করা যায়। অতি তরলীকৃত হিস্ট্যামিন দ্রবণের দ্বারাও করা সম্ভব।
এই পরীক্ষাগুলি ইউরোপের কয়েকটি জায়গায় করা হয়েছিল। এবং গবেষকদের মধ্যে কয়েক জন নন হোমিয়োপ্যাথও ছিলেন। যাঁদের মধ্যে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মেডেলিন ইনিস অন্যতমা।
তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী এই সব পরীক্ষার কিছু কিছু ফল জলের স্মৃতিশক্তি তত্ত্বের সমর্থনে পাওয়া যায়। যদিও তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা ব্যাখ্যা তাদের জানা নেই। বেনভেনিস্তের গবেষণার আর একটা দাবি ছিল যে, জলের স্মৃতিশক্তিকে টেলিফোন বা ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতির মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো সম্ভব। আমেরিকার প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার আর্থিক সাহায্যে সম্পাদিত এক গবেষণায় এই দাবির সমর্থনে কোনও তথ্য মেলেনি।
(৪) বেশির ভাগ গবেষকই চান যে, তাঁদের গবেষণালব্ধ ফল কোনও সম্ভ্রান্ত জার্নালে ছাপা হোক। আর গবেষণার অভিনবত্ব থাকলে তো কথাই নেই।
এ ব্যাপারে জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের একটা ভূমিকা থাকে। বেনভেনিস্তের গবেষণার ফল যে বিশ্বময় একটা আলোড়ন তুলেছিল, তার অন্যতম কারণ হল এটা ‘নেচার’ পত্রিকায় ছাপা ও সমালোচিত হয়েছিল। কিন্তু ‘জলের স্মৃতিশক্তি’ নিয়ে মঁত্যানিয়ে-র নতুন গবেষণার ফল চিন থেকে সদ্য প্রকাশিত একটি ই-জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে। যে জার্নালের কোনও ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরও জানা নেই। এর কারণ কী? মঁত্যানিয়ে ভাল ভাবেই জানতেন যে, এই পেপারটি কোনও নামকরা জার্নালে পাঠালে তার খুবই কঠোর সমালোচনা হবে। প্রকাশনারও কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই তিনি তাঁর গবেষণার ফল তাড়াতাড়ি করে এই নামগোত্রহীন জার্নালে প্রকাশ করতে বাধ্য হন। পেপারটি জার্নালে পাঠানো ও ছাপানোর জন্য গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হওয়ার তারিখগুলি দেখলে এ কথা মনে হতেই পারে যে, এটির তেমন কোনও পর্যালোচনাই হয়নি ছাপাবার আগে।

সাথী নয়, স্বাতী

রবিবাসরীয়-র ‘রবিফোড়ন’ বিভাগে (৫-৬) সঙ্গীতশিল্পী অরুন্ধতী হোমচৌধুরী জানিয়েছেন, ‘সাথী’ ছবিতে ‘যেতে যেতে কিছু কথা’ হেমন্ত মুুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ডুয়েট জীবনটা ভাগ্যের জোরে বদলে গেল অনেকটাই। এ তথ্য ঠিক নয়। আসলে, ছবিটির নাম হল ‘স্বাতী’ (১৯৭৭)। ‘যেতে যেতে কিছু কথা’ গানটি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে নয়। মান্না দে’র সঙ্গে তিনি ডুয়েট গেয়েছিলেন। ছবিতে গানটি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের একক কণ্ঠেও ছিল। ‘স্বাতী’ (১৯৭৭) ছবিটি সুরারোপ করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
Previous Iten Editorial First Page


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.