|
|
|
|
এসএসকেএমে রোগীর মৃত্যু,
ছ’বছরে চার কমিটি, তবু তদন্ত চলছেই সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
মমতা দেখুন  |
|
একটি মৃত্যু। একটি অভিযোগ। ছ’টি বছর। চার-চারটি তদন্ত কমিটি। আর নিট ফল? শূন্য!
এসএসকেএম হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগে চিকিৎসায় গাফিলতিতে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের এই পরিণতিই এ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর আসল ছবিটা পরিষ্কার করে দেয়। আশ্চর্যের বিষয়, সব ক’টি ক্ষেত্রেই তদন্ত-রিপোর্ট পেশ হয়েছে। কিন্তু তার পরে সামান্য ব্যবস্থাটুকুও নেওয়া হয়নি। বরং এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “ঠিক মনে করতে পারছি না।”
কলকাতার বাসিন্দা, ৪৪ বছরের দেবজ্যোতি মজুমদারের এই ঘটনা আরও একটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। তা হল, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন কি স্রেফ কথার কথা? কোনও ভুল হয়ে থাকলে তা চিহ্নিত করে সংশোধন করার কোনও সদিচ্ছাই কি স্বাস্থ্যকর্তাদের নেই? সৌমেন্দ্রনাথবাবু অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “বহু ক্ষেত্রেই অপরাধ প্রমাণিত হলে যথাযথ শাস্তি হয়েছে।”
এ ক্ষেত্রে তা হলে চারটি তদন্ত কমিটির প্রয়োজন পড়ল কেন? তাঁর জবাব, “কবেকার কথা! আমার ঠিক মনে নেই।” হৃদ্রোগ চিকিৎসক সুধাংশুশেখর চট্টোপাধ্যায় (যিনি বর্তমানে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে রয়েছেন) স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার সুরেই বলেছেন, “আমার এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। ঘটনাটা মনেই করতে পারছি না।”
দেবজ্যোতিবাবুর পরিবারের লোকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা হাল ছাড়বেন না। চারটি তদন্ত কমিটি হয়েছে, তবু ‘সুবিচার’ পাওয়া যায়নি, তাতে কী? তাঁরা লড়ে যাবেন। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি তাঁরা মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগ জানিয়েছেন মেডিক্যাল কাউন্সিলেও।
২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এসএসকেএমের কার্ডিওলজি বিভাগে মারা যান দেবজ্যোতিবাবু। চিকিৎসার গাফিলতিতেই মৃত্যু ঘটেছে বলে তাঁর ভাই দীপঙ্কর মজুমদার ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরে তদন্ত শুরু করে স্বাস্থ্য দফতর। দীপঙ্করবাবুর অভিযোগ, বুকে ব্যথা নিয়ে এসএসকেএমে যাওয়ার পর থেকেই চিকিৎসকেরা নানা রকম অবহেলা শুরু করেছিলেন। এমনকী, ভর্তিও নেওয়া হয়নি। বাড়ি ফেরত আনার পরে দেবজ্যোতিবাবুর অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় তাঁরা এক চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে যান। তিনি পরীক্ষা করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিলে ফের তাঁকে এসএসকেএমে আনা হয়। সেখানে প্রথমে ইমার্জেন্সি এবং পরে আইসিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। দীপঙ্করবাবুর অভিযোগ, “চিকিৎসক সুধাংশুশেখর চট্টোপাধ্যায় দাদাকে পরীক্ষা করে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন বলে জানান। সেই বাবদ দু’লক্ষ টাকা এক এজেন্টের কাছে জমা দিতে বলেন। আমরা বিষয়টি বুঝতে পারিনি। হাসপাতাল সুপারের কাছে জানাই। তিনি তৎক্ষণাৎ বিভাগীয় প্রধানকে ফোনে বিষয়টি জানান এবং আমাকে ওই টাকা দিতে নিষেধ করেন।” এই ঘটনার পর থেকেই সুধাংশুবাবু চিকিৎসায় টালবাহানা শুরু করেন বলে অভিযোগ।
দীপঙ্করবাবু জানিয়েছেন, গোড়ায় তাঁর দাদার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন। কিন্তু সুপারের নির্দেশে সুধাংশুবাবুর স্থির করা ‘এজেন্ট’কে টাকা না দিয়ে তাঁরা নিজেরা সরঞ্জাম কিনে আনেন। আর সেই ‘অপরাধেই’ তাঁর দাদার চিকিৎসা কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় কয়েক দিন পরে তিনি মারা যান।
এই ঘটনার পরে স্বাস্থ্য দফতর এসএসকেএমের ফরেন্সিক বিভাগের তৎকালীন প্রধান অজয় গুপ্তের নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিটি গঠন করে, তাদের প্রথম রিপোর্টটি পেশ হয় ২০০৯-এর জানুয়ারি মাসে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই রিপোর্টে অজয়বাবু স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, চিকিৎসায় বড় ধরনের গাফিলতি ঘটেছে। দেবজ্যোতিবাবুর চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাঁর অর্জিত বিদ্যা-বুদ্ধির প্রায় কিছুই প্রয়োগ করেননি। আশ্চর্যের বিষয়, ওই কমিটির রিপোর্টের পরেও নীরব ছিল স্বাস্থ্য দফতর। তার পরে দু’দফায় আরও দু’টি কমিটি গঠিত হয়। সেই দুই রিপোর্টেও চিকিৎসায় গাফিলতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
এ বার চতুর্থ কমিটি। দীপঙ্করবাবু বলেন, “নতুন সরকার। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দিকে আশায় বুক বেঁধে তাকিয়ে রয়েছি। আশা করি, এ বার সুবিচার মিলবে।” |
|
|
 |
|
|