দলীয় বিরোধ মেটাতে উদ্যোগী মোর্চা
মন্ত্রীদের পাহাড়ে পাঠিয়ে উন্নয়নের বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
দার্জিলিং পাহাড়কে আরও বেশি স্বশাসন দেওয়া মানেই রাজ্যের দায়িত্ব ফুরিয়ে যাওয়া নয়। বরং পাহাড়বাসীর সার্বিক উন্নয়নের প্রত্যাশা পূরণে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা চালাবে রাজ্য সরকার। পাহাড়ের ‘ভাইবোনদের’ কাছে ওই বার্তা পৌঁছতে রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের যত বেশি সম্ভব দার্জিলিঙে গিয়ে নানা উন্নয়নের কাজে সামিল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে জন্য তিনি কাজে লাগাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও।
মহাকরণ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী দলের মন্ত্রীদের জানিয়ে দিয়েছেন, অতীতে যা হওয়ার হয়েছে, আগামী দিনে কোনও কারণেই পাহাড়বাসীরা যাতে নিজেদের ব্রাত্য মনে না-করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। এমনকী, অন্তর্বর্তী স্বশাসন দেওয়া হলেও মহাকরণের সঙ্গে লালকুঠির যাতে এতটুকুও দূরত্ব না-তৈরি হয়, সেই ব্যাপারেও অফিসারদের এখন থেকেই বাড়তি নজর রাখতে হচ্ছে।
এটা যে শুধু ‘কথার কথা’ নয়, তা বোঝাতে ইতিমধ্যে পাহাড়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দীনেশবাবু হাসপাতাল পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরানোর ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তাব-পরামর্শ নিয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী পাঠিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীকেও। তিনিও স্থানীয় ছাত্রছাত্রীদের নানা সমস্যার বিষয়টি জেনে দলনেত্রীকে জানিয়ে দ্রুত সমাধানের আর্জি পেশ করেছেন।
আগামী সপ্তাহের গোড়ায়, ২০ জুন পাহাড়ে যাচ্ছেন রাজ্যের তিন জন মন্ত্রী। বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন, উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিন মন্ত্রী পাহাড়ে অরণ্য সপ্তাহের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ফাঁকে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপনের প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত করবেন। পাশাপাশি, আগামী বর্ষায় ধস নামলে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য কী করা হবে, তা খতিয়ে দেখতে চলতি মাসেই একাধিক মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের অফিসারের যাওয়ার কথা। ইতিমধ্যেই মহাকরণ থেকে বর্তমান গোর্খা পার্বত্য পরিষদের প্রশাসক অনিল বর্মার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
বস্তুত, সার্বিক উন্নয়নের জন্য রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের দার্জিলিঙে পাঠানোর সিদ্ধান্তে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তো বটেই, দলমত নির্বিশেষে পাহাড়বাসীরা খুশি। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে হচ্ছে জিএনএলএফ, গোর্খা লিগ-সহ একাধিক দলের নেতা-কর্মীদেরও। কারণ, সুবাস ঘিসিংকে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের দায়িত্ব দেওয়ার পরে পাহাড়ের উন্নয়নের ব্যাপারে সরাসরি রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা সে ভাবে ‘মাথা ঘামাননি’। সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন বাম-মন্ত্রীদের একটা বড় অংশ কালেভদ্রে পাহাড়ে পা দিলেও ঘিসিংয়ের কাছ থেকে সব শুনে কার্যত অর্থ বরাদ্দ করেই দায়িত্ব সেরেছেন। সেই সময়ে বরাদ্দ টাকা ঠিকঠাক খরচ হয়েছে কি না, সেই ব্যাপারে লালকুঠির (যেখানে পার্বত্য পরিষদের সদর দফতর) রিপোর্ট প্রায় বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিয়েছে মহাকরণ।
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেছেন, “পাহাড়ে প্রচুর প্রকল্পের কাজ করেছে বাম সরকার। সে সব কিছু সরকারি নথিতেই রয়েছে। যাই হোক, এখন আমরা কিছু বলছি না। আমরা চাই পাহাড়ে আরও উন্নয়ন হোক।” তবে জিএনএলএফের এক প্রাক্তন নেতার কিন্তু মনে হচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের যা ধারা, তাতে ঘিসিং-জমানার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা খুব কম। ওই জিএনএলএফ নেতার কথায়, “রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের ঘনঘন পাহাড়ে পাঠানোর সিদ্ধান্তও দারুণ ব্যাপার। আগে তো গ্রীষ্মকাল কিংবা বড়দিন অথবা কোনও প্রকল্পের শিলান্যাস ছাড়া মন্ত্রীদের পা পড়ত না।” প্রায় একই সুরে ‘দার্জিলিং প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’, ‘হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’, ‘হিল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর বেশ কয়েকজন প্রবীণ সদস্য জানিয়েছেন, মহাকরণ ও লালকুঠির মধ্যে সমণ্বয় থাকলে আগামী দিনে পাহাড়-সমতলের বিভেদ নতুন করে মাথা চাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে না।
এত দিন যাই-ই হোক না কেন, সব দূরত্ব দূরে সরিয়ে পাহাড় ও সমতলের বাসিন্দারা যে মিলেমিশে থাকতে চান, তা সামান্য সুযোগ মিলতে উভয় পক্ষই বুঝিয়ে দিতে চাইছেন। এখনও ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়নি। সইয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি হতেই পাহাড়ের চেহারা বদলে গিয়েছে। যে দার্জিলিঙে দু’সপ্তাহ আগেও দিনের যে কোনও সময়ে মসৃণ ভাবে গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করা যেত, সেখানে এখন প্রায় উদয়াস্ত যানজট। অর্থাৎ, মোর্চার আন্দোলন শুরুর আগে পর্যটন মরসুমে দার্জিলিং স্টেশনের সামনে থেকে ক্লাব সাইড রোডে ঢুকতে যে যানজট পেরোতে হত, তা আবার দেখা যাচ্ছে। যানজট হলেও জেরবার নন দার্জিলিঙের মানুষ! উল্টে, যানজটের পরিচিত দৃশ্য দার্জিলিংকে জমজমাট করায় হাসি ফুটেছে পাহাড়ের সকলের মুখেই। হাসি মুখে বেড়াচ্ছেন সমতল থেকে যাওয়া পর্যটকেরাও। দেখা যাচ্ছে সেই সব ছবি-- পাহাড়ি রাস্তায় যানজটে গাড়ি আটকে পড়লে রাস্তার ধারে বাড়ির জানালা অথবা বারান্দায় দাঁড়ানো শিশুকে পর্যটকদের উদ্দেশে হাত নাড়তে বলছেন মা। কখনও গাড়ি থেকে নেমে দক্ষিণবঙ্গের প্রত্যন্ত জেলার পর্যটকেরা পাহাড়ি শিশুর গাল টিপে আদর করছেন।
পাহাড়-সমতলের এমন মেলবন্ধনের কথা জানেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা তথা রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বললেন, “এমন মিলেমিশে থাকার কথাই তো আমাদের মুখ্যমন্ত্রী গোড়া থেকে বলে চলেছেন। এবং তা তিনি করে দেখানো শুরু করেছেন। আগামী দিনে পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে মুখ্যমন্ত্রী বদ্ধপরিকর। তাই শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান-পর্যটন সহ নানা ক্ষেত্রে কাজের যে বিপুল সম্ভাবনা পাহাড়ে রয়েছে, তা দ্রুত চিহ্নিত করে বাস্তবায়িত করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমরা সেই মতো এগোচ্ছি।”
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.