জেলার রেশন দোকানগুলিতে সরেজমিন তদন্ত চালিয়ে পাঁচ জন রেশন ডিলারকে সাসপেন্ড করল জেলা খাদ্য দফতর। প্রাথমিক তদন্তে ওই পাঁচ ডিলারের বিরুদ্ধে দোকান চালানোয় দুর্নীতি ও নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ার জন্যই তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ামক সুনয়কুমার গোস্বামী জানান, যে পাঁচ ডিলার সাসপেন্ড হয়েছেন, তাঁরা হলেন বরাবাজারের লক্ষ্মণপুর গ্রামের হরিপদ মাহাতো ঝালদা ২ ব্লকের গোয়ালাডি গ্রামের বাদলচন্দ্র গোপ এবং কাশীপুরের কল্লোলী গ্রামের বিজয় গঁরাই, মনিপুর গ্রামের তপন হালদার ও ফুসড়া গ্রামের নিরঞ্জন মাহাতো। পাশাপাশি বিজয়বাবু ও তপনবাবুর কেরোসিল ডিলারশিপের লাইসেন্সও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার পুরুলিয়ার বিভিন্ন রেশন দোকান পরিদর্শন করেছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। জেলা খাদ্য দফতরের আধিকারিক এবং রেশন ডিলার সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করেন মন্ত্রী। সফরে বেরিয়ে পুরুলিয়া ১ ব্লকের অকড়বাইদ গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের কাছ থেকে গণবণ্টন সংক্রান্ত নানা অভিযোগ শুনে এলাকার রেশন ডিলার ফটিক সর্দারের দোকানে উপস্থিত হন খাদ্যমন্ত্রী। ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখে তিনি তৎক্ষণাৎ ওই ডিলারকে বরখাস্ত করেন।
ওই দিনই গোয়ালডি গ্রামে রেশনের পণ্য ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে বাদলচন্দ্র গোপের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। এর পরেই তদন্ত চালিয়ে বাদলবাবু-সহ পাঁচ ডিলারকে সাসপেন্ড করেছে খাদ্য দফতর। সুনয়বাবু বলেন, “মন্ত্রী জেলা সফরে আসার আগেই আমরা ৯৪টি রেশন দোকানে সরেজমিন তদন্ত চালিয়েছিলাম। সেই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই বরাবাজার ও কাশীপুরের মোট চার ডিলারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।” জেলা খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, যে ৯৪টি দোকানে তদন্ত হয়েছে, সবে তার রিপোর্ট আসা শুরু হয়েছে। রিপোর্টে যেমন যেমন ত্রুটির উল্লেখ থাকবে, বিধি মোতাবেক সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অকড়বাইদ গ্রামে খাদ্যমন্ত্রী অনেক বাসিন্দার রেশন কার্ড নেই শুনে ওই দরিদ্র শবর সম্প্রদায়ের মানুষজনকে গ্রামে গিয়ে কার্ড পৌঁছনোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী সোমবারই দফতরের আধিকারিকেরা ওই গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের হাতে কার্ড তুলে দিয়েছেন। জেলা খাদ্য নিয়ামক বলেন, “ওই গ্রামে ১৭৭টি কার্ড ছিল, আমরা নতুন করে ৬৬টি কার্ড দিয়েছি। আরও ১৫টি কার্ড দেওয়া হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে।” ওয়েস্ট বেঙ্গল এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন মাহাতো বলেন, “সরকার দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের কাছে সঠিক রেশন কার্ড পৌঁছে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা সমর্থন করি। আমরা এতদিন সেই কাজই করে আসছি। তবে সাসপেন্ড করার ব্যাপারে আমাদেরও কিছু বক্তব্য রয়েছে।” তাঁর কথায়, “অকড়বাইদের ডিলার সম্পর্কে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু কোথাও কোথাও সামান্য ত্রুটিতেই সংশ্লিষ্ট ডিলারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আমরা চাই, ডিলারদের আর একটু সময় দেওয়া হোক। এ কথা খাদ্য নিয়ামককেও জানাব।” |