সম্পাদকীয় ১...
ভুল পথ
শ্চিমবঙ্গে যখন ক্রমশ বন্ধ-ধর্মঘটের অচলাবস্থা সৃষ্টির রাজনীতি অচল হইয়া পড়িতেছে, প্রতিবেশী বাংলাদেশে কিন্তু তখন সেই পুরানো রাজনীতিতেই ফিরিবার আগ্রহ বর্ধমান। অন্তত সেখানকার বিরোধী পক্ষের রাজনীতির গতিবিধি তেমনই ইঙ্গিত দেয়। নির্বাচনী বিপর্যয়ের জেরে কয়েক বছর চুপচাপ থাকার পর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট সেখানে কেবল ছত্রিশ ঘণ্টার বন্ধ পালন করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই, তাহাতে যোগদানকারী দলীয় সমর্থকদের নৈরাজ্য ও উচ্ছৃঙ্খলতা পত্রপাঠ দণ্ডিত হওয়ার প্রতিবাদে আরও দুই দিনের আন্দোলন কর্মসূচিও জুড়িয়া দিয়াছে। বাংলাদেশে অতএব নূতন করিয়া অশান্তির আগুন জ্বলিবার উপক্রম। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওয়াজেদের সরকার কড়া হাতে বিশৃঙ্খলার মোকাবিলা করিতেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার বি এন পি ও তাহার সহিত জোটবদ্ধ জামাতপন্থীরা হাসিনা সরকারকে অন্তর্বর্তী নির্বাচন মারফত নূতন করিয়া জনাদেশ যাচাই করিতে হইবে বলিয়া আব্দার জুড়িয়াছে। এই আবদার শিরোধার্য করার প্রশ্ন নাই, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত কোনও বৈধ সরকারই ইহা মানিবে না।
বিরোধী নেত্রী খালেদার প্রধান দাবি অবশ্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন রদের বিরোধিতা। তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করিতে হইবে, এই সংশোধনীটি খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বের কালেই পাশ হয়। তদনুযায়ী দুই-দুইটি সাধারণ নির্বাচনও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে ওই বন্দোবস্তটিকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়াছে এবং তাহার পরই প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সংশোধনীটি রদ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়াছেন। বিরোধীরা সরকারের সেই প্রয়াস বানচাল করিতেই আগাম আন্দোলনে। আপাতদৃষ্টিতে একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের অনুষ্ঠানকে পক্ষপাতমুক্ত বলিয়া মনে হইলেও মনে রাখা দরকার, ওই তদারকি সরকার কিন্তু আপনা-আপনি গঠিত হয় না, বিদায়ী সরকারই তাহা নিয়োগ করে। স্বভাবতই সেই বিদায়ী সরকার তথা শাসক দলের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার তাগিদ গঠনপ্রক্রিয়ায় নিহিত থাকিতে পারে। সর্বশেষ তদারকি সরকারের কাজকর্ম একেবারেই আদর্শ ছিল না। সেনাপ্রধানরাই যে তাহার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়িতেছিলেন, তাহা অস্পষ্ট ছিল না। নির্বাচনের অনুকূল পরিস্থিতি বিদ্যমান নাই, এই অজুহাতে দীর্ঘ দুই বছর ওই তদারকি সরকার ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়াটিকে মুলতুবি রাখিয়াছিল। আরও বড় কথা, যে গণতন্ত্রে জনাদেশ মারফত ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করিতে একটি অনির্বাচিত তদারকি বন্দোবস্তের প্রয়োজন হয়, তাহা সম্পূর্ণ পরিণত নয়। ভারতের মতো যে-দেশ সারা বিশ্বে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বন্দিত, সেখানে নির্বাচন কমিশনই মসৃণ ভাবে এমন সুবৃহৎ একটি গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করিয়া থাকে। রাজনৈতিক ভাবে মেরুকৃত, অতীব স্পর্শকাতর, তীব্র উত্তেজনাপ্রবণ ভোটারদের জন্যও কেমন করিয়া একটি অবাধ, পক্ষপাতমুক্ত রায়দানের পদ্ধতি প্রবর্তন করা যায় এবং সেই পদ্ধতি ও তাহার সঞ্চালক কমিশনকে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ দ্বারা সুসজ্জিত করা যায়, তাহা নিঃসন্দেহে ভারতের কাছে শিক্ষণীয়। প্রধানমন্ত্রী হাসিনার তদারকি সরকার রদ করার অভিপ্রায়কে তাই কোনও ভাবেই একটি স্বৈরতান্ত্রিক অভিপ্রায় বলা যাইবে না। বরং তাহার বিরোধিতার নামে একটি বৈধ, নির্বাচিত সরকারকে যে-ভাবে রাস্তার আন্দোলনের বিশৃঙ্খলা দ্বারা বিব্রত ও বিপর্যস্ত করার অপপ্রয়াস চলিতেছে, তাহার মধ্যে স্বেচ্ছাচারের যাবতীয় লক্ষণ বর্তমান। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওয়াজেদ কঠোর ভাবে সে অপপ্রয়াসের মোকাবিলা করার ইঙ্গিত দিয়াছেন। নির্বাচন পরিচালনায় তদারকি সরকার রদ করিয়া নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক অনাক্রম্যতা দানের ক্ষেত্রেও, আশা করা যায়, তিনি সমান দৃঢ়তা অবলম্বন করিবেন।
First Page Editorial Next Item



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.