|
|
|
|
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা, চিদম্বরমকে আক্রমণ |
কংগ্রেস-বিজেপিতে ভারসাম্য রাখলেন জয়া |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভা নির্বাচনের আরও তিন বছর বাকি। তার আগে, হাতের তাস লুকিয়ে রেখে সর্বভারতীয় রাজনীতির দুই যুযুধান প্রতিপক্ষের কাছেই তাঁর ‘রাজনৈতিক দর’ উঁচু তারে বেঁধে দিলেন জয়ললিতা। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে তাঁর বৈঠক সন্তোষজনক হয়েছে বলে যেমন আজ ব্যাখ্যা করলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী। তেমনই পরক্ষণেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো আক্রমণ করে জানিয়ে দিলেন, গত লোকসভা ভোটে উনি জালিয়াতি করে জিতেছেন। একই সঙ্গে স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি প্রশ্নে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে দয়ানিধি মারানের ইস্তফা দাবি করে বার্তা দিয়ে রাখলেন কেন্দ্রের বিরোধী শিবিরকেও।
তামিলনাড়ুর বিধানসভা ভোটে জয়ললিতার বিপুল জয়ের পর থেকেই তাঁর সঙ্গে ভবিষ্যৎ সমঝোতার দরজা খুলে রেখেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। ভোটের পর জয়ললিতাকে ফোন করে সনিয়া গাঁধীর শুভেচ্ছা জানানো, গত কাল দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের সৌজন্য সাক্ষাৎ বা আজ প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফ থেকে তাঁর জন্য বিশেষ গাড়ি পাঠানো এই ঘটনা পরম্পরা সে দিকেই ইঙ্গিত করে বলে মনে করছেন দিল্লি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেই সাক্ষাতের পরেই সাংবাদিক সম্মেলনে জয়ললিতা বলেন, “বৈঠক সন্তোষজনক হয়েছে। রাজ্যের জন্য যে সব বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে তাতে, ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।” সেই সঙ্গে এ-ও জানিয়ে দেন, কেন্দ্রের সঙ্গে কোনও রকম সংঘাতের সম্পর্ক তৈরি করতে তিনি চান না। তবে এর পরেই এক প্রশ্নের জবাবে চিদম্বরমের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, “২০০৯-এর লোকসভা ভোটে হারেন চিদম্বরম। এ ব্যাপারে মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টে চলছে। তা লঘু করারও প্রশ্নে নেই। সে দিক থেকে দেখলে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে তাঁর থাকাই উচিত নয়। দেশের সামনে এটা একটা জালিয়াতির ঘটনা।” |
 |
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জয়ললিতা। এ এফ পি |
স্বাভাবিক ভাবেই জয়ললিতার এই মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চিদম্বরম। বলেছেন, “জয়ললিতার এ রকম উল্টোপাল্টা কথা বলার প্রবণতা রয়েছে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী আজ যে মন্তব্য করেছেন, তাতে আদালতকে অবমাননা করা হয়েছে।” তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব এই বিতর্কে বিশেষ জড়াতে চাননি। বরং প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী বলেন, “এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত মন্তব্যের কোনও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল দেয় না।” কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, চিদম্বরম-জয়া বাগ্যুদ্ধ তামিলনাড়ু রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত। কংগ্রেস পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চায় না।
তবে কংগ্রেস দরজা খোলা রাখলেও জয়ললিতা আজ বলেন, “জোটের জন্য কেউ আমার সঙ্গে এখনও কথা বলেননি। তা ছাড়া কংগ্রেস এবং ডিএমকে এখনও জোট শরিক। এই জোট থাকবে বলেও জানিয়েছে তারা। তাই আমার সমর্থন জানানোর প্রশ্নও উঠছে না। আমার সমর্থন প্রয়োজন হলে কাউকে তো আমার সঙ্গে কথা বলতে হবে। এই সব কারণেই সনিয়ার সঙ্গে আমি এখনই দেখা করছি না।” তামিলনাড়ু বিধানসভা ভোটের আগে জয়ললিতা এক বার কেন্দ্রে ইউপিএ’কে সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি আজ বলেন, “সাত মাস আগে সমর্থন জানানোর বিষয়টি কোনও খোলা প্রস্তাব ছিল না। ওই প্রস্তাব ছিল সেই সময়কার জন্য। এখন পরিস্থিতি বদলেছে।”
কিন্তু ঘটনা হল, চিদম্বরমকে আক্রমণ করলেও সামগ্রিক ভাবে কংগ্রেসের সমালোচনা করেননি জয়ললিতা। বরং স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির জন্য শুধু ডিএমকেরই সমালোচনা করে বলেছেন, ওঁরা পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছেন। পাশাপাশি জয়ার বক্তব্য, “টু জি বণ্টন নিয়ে দয়ানিধি মারানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে এখনই তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। স্বাভাবিক ভাবেই জয়ললিতা মারান ও চিদম্বরমের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় উজ্জীবিত বিজেপি শিবির। গত কালই বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ দিল্লিতে তামিলনাড়ু ভবনে গিয়ে জয়ললিতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আজ তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিজেপি-ও চিদম্বরমকে আক্রমণ করেছে। দাবি করেছে মারানের ইস্তফা। জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, এডিএমকে নেত্রী এখন জল মাপছেন। লোকসভা ভোটের তিন বছর বাকি। তার আগে তিনিও বোঝার চেষ্টা করবেন, সর্বভারতীয় রাজনীতির কোন অক্ষে থাকলে সব থেকে বেশি লাভ। তত দিন পর্যন্ত কংগ্রেস, বিজেপি এমনকী বাম তথা সিপিএম সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট সকলের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে আগ্রহী আম্মা। |
|
|
 |
|
|