|
|
|
|
ধর্মঘট ভাঙতে ভিন্ রাজ্যের
কর্মী এনে কাজ করাল জেট
নিজস্ব সংবাদদাতা |
 |
|
আচমকা ধর্মঘট ডেকে কাজ বন্ধ করে কর্মীরা অনেক সময়েই কর্তৃপক্ষকে চাপে ফেলে দেন। কিন্তু এ বার তার এক উপযুক্ত ‘দাওয়াই’ দিল একটি বেসরকারি বিমানসংস্থা। কলকাতার কর্মীরা কাজ করতে অস্বীকার করায় মুম্বই, বেঙ্গালুরু এবং চেন্নাই থেকে ৩০ জন কর্মীকে কলকাতায় উড়িয়ে এনে কাজ করাল তারা। পাল্টা চাপ দিয়ে বানচাল করে দেওয়া হল আচমকা কাজ রুখে দেওয়ার কৌশল।
মঙ্গলবার সারা দিন বিমানবন্দরের বাইরে দাঁড়িয়ে ধর্মঘট করে গেলেন কলকাতার ঠিকাকর্মীরা। কোনও রাজনৈতিক দলের ট্রেড ইউনিয়ন এগিয়ে এল না তাঁদের পাশে। আর বিমানবন্দরের ভিতরে তিন ভিন শহর থেকে আসা কর্মীরা সারা দিন ৭৩টি উড়ানে যাত্রীদের মালপত্র ওঠানো-নামানোর কাজ করে গেলেন। সঙ্গে রইলেন সংস্থার অফিসারেরা। এর ফলে কার্যত ভেস্তেই গেল স্থানীয় ঠিকাকর্মীদের ধর্মঘট ডেকে চাপ দেওয়ার কৌশল। বাইরে দাঁড়িয়ে কলকাতার কর্মীরা প্রশ্ন তুললেন, কী করে ভিন রাজ্য থেকে শ্রমিক এনে কলকাতায় কাজ করাল জেট এয়ারওয়েজ? কর্তৃপক্ষের পাল্টা প্রশ্ন, আগাম নোটিস ছাড়া কেন আচমকা ধর্মঘট করলেন ঠিকাকর্মীরা?
মঙ্গলবার ভোর থেকে কাজ বন্ধ করে দেন জেট-এর প্রায় ৩৬০ জন ঠিকাকর্মী। এর ফলে সংস্থার বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। বাস চালানো, বিমানে মাল ওঠানো-নামানোর কাজ করেন এই ঠিকাকর্মীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেট কর্তৃপক্ষ জরুরি বার্তা পাঠান মুম্বই, চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুতে। সকালেই ৩০ জন শ্রমিককে উড়িয়ে আনা হয় ওই তিন শহর থেকে। কর্মী কম থাকায় কয়েকটি বিমান ছাড়তে বিলম্ব হয়। বন্ধ রাখতে হয় পণ্য পরিবহণ। সংস্থার এক অফিসারের আক্ষেপ, “শুধু পণ্যটাই পাঠাতে পারলাম না। সারা দিন ধরে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতি হল অনেক।”
কেন এই আন্দোলন? ধর্মঘটে সামিল মালবাহক দিলীপ রায়ের অভিযোগ, অন্য বিমানসংস্থার চেয়ে জেট-এর মজুরি কম। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে এই ধর্মঘট। দিলীপবাবু বলেন, “কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থন আমরা চাই না। দাবি মেনে মজুরি বাড়িয়ে দিলেই আমরা কাজে যোগ দেব।” জেট-এর এক অফিসারের কথায়, “ধর্মঘট করার আগে লিখিত ভাবে কর্তৃপক্ষকে তা জানানোর কথা। কর্মীরা কিন্তু কিছুই জানাননি। ফলে এই ধর্মঘট পুরোপুরি বেআইনি।” ঠিকাদার শ্যামল পোদ্দার, যাঁর অধীনে এই কর্মীরা কাজ করেন, তাঁরও একই মত। কিন্তু কর্মীদের দাবি, তাঁরা আগেই ধর্মঘটের নোটিস দিয়েছিলেন। জেট কর্তৃপক্ষ এবং ঠিকাদার শ্যামল পোদ্দার তা নিতে অস্বীকার করেন। শ্যামলবাবুর বক্তব্য, মজুরি নয়, ঠিকাকর্মীদের নিয়মিত বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয় জেট। কোনও আলোচনা ছাড়াই কর্মীরা কেন ধর্মঘটে চলে গেলেন, তা তাঁর বোধগম্য হচ্ছে না।
বাইরে থেকে কর্মীদের উড়িয়ে এনে কাজ করানোর কড়া নিন্দা করেছেন সিটুর রাজ্য সম্পাদক কালী ঘোষ। তাঁর কথায়, “জেট এয়ারওয়েজের এই পদক্ষেপ অন্যায় ও অনৈতিক। গা-জোয়ারি করছেন তাঁরা। এ তো কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাওয়া! তা হলে তো কর্মীরা নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে কোথাও ধর্মঘট করলেই কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে লোক এনে কাজ করাতে শুরু করবেন।” তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেন অবশ্য দু’টি বিষয়েরই নিন্দা করছেন। তাঁর বক্তব্য, “আচমকা, কথায় কথায় ধর্মঘট ডাকা সমর্থনযোগ্য নয়। বহু ব্যবহারে ধর্মঘটের অস্ত্র এখন ভোঁতা হয়ে গিয়েছে।” পাশাপাশি ধর্মঘটের জন্য বাইরে থেকে শ্রমিকদের উড়িয়ে এনে কাজ করানোটাও ভাল চোখে দেখছেন না এই নেত্রী। তাঁর কথায়, “দু’পক্ষ আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করতে পারেন।”
ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ, আইআইএম জোকা-র অধ্যাপক ভি কে উন্নি-র অবশ্য মত ভিন্ন। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলের ট্রেড ইউনিয়নগুলির সমর্থন না পাওয়া এবং রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবাদল এই দুই ঘটনার কারণেই সম্ভবত বিমানসংস্থাটি এই পদক্ষেপ নিতে পেরেছে। এটা শ্রমিকদের উদ্দেশে একটা কড়া বার্তা।” উন্নি-র মতে, এই কৌশল এক-দু’বার চলতে পারে। কিন্তু এটা কোনও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। এই পদক্ষেপে বিমানযাত্রীরা দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাওয়ায় সাধারণ মানুষের সমর্থন কর্তৃপক্ষের দিকেই যাবে বলেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। ন্যূনতম বেতনের দাবিতে দিন কয়েক আগে কলকাতা বিমানবন্দরে স্পাইসজেটের ঠিকাকর্মীরাও আচমকা ধর্মঘট করেন। কিন্তু সিটু বা আইএনটিটিইউসি, কারও সমর্থন না পেয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধর্মঘট তুলে নিতে বাধ্য হন তাঁরা। |
|
|
 |
|
|