কামতেশ্বরী
ছবি: সন্দীপন নন্দী
কাঁটাতার বিধান মানে না। বাংলা থেকে বাংলাদেশের আজান শোনে এক দল। অতন্দ্র প্রহরাতেও মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি সীমানা পেরোয়। গোঁসানিমারি গ্রামের কামতেশ্বরী মন্দিরটি ঐতিহাসিক। কোচবিহারের দিনহাটা রেল স্টেশন থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে এ গ্রাম। সেই সঙ্গে কামতাপুর, ভিতর কামতা, জামবাড়ি-সহ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গোঁসানিমারি ইতিহাস বয়ে চলেছে। পুরাণ বলছে, কামরূপের পশ্চিমাংশ সোমরপীঠ ‘কামতা’ নামে খ্যাতি পায়। মহাভারতে প্রাগ্জ্যোতিষপুরের অধিপতি ভগদত্তের বীরগাথায় এর উল্লেখ আছে। তবে কোচ রাজবংশের উত্থানের আগে তিন খেনবংশীয় রাজা— নীলধ্বজ (১৪৪০-৬০ খ্রি), চক্রধ্বজ (১৪৬০-৮০ খ্রি) এবং নীলাম্বর (১৪৮০-৯৮ খ্রি) রাজত্ব করেন। এর মধ্যে নীলধ্বজই ছিলেন এই গোঁসানি মন্দিরের আদি প্রতিষ্ঠাতা। জনপ্রবাদ, নীলধ্বজ ‘কামতা’ বা ‘কামদা’-র উপাসক ছিলেন। সেই থেকেই রাজ্য হল কামতা এবং কামতাপুর রাজধানী। খেন বংশীয় এই রাজাদের উপাধি ছিল ‘কামতেশ্বর’। তবে বর্তমান ঐতিহাসিকরা নীলাম্বরকেই এ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ভাবেন। কেননা, ১৪৯৮-এ গৌড়ের পাঠান সুলতান হুসেন শাহ নীলাম্বরকে পরাস্ত করেই কামতাপুর দুর্গ এবং রাজ্য দখল করেন; ফলে খেন বংশের প্রদীপ নিভে যায়। আদি কামতেশ্বরী মন্দির বহুদিন আগে ধ্বংস হলেও, বীরনারায়ণের পুত্র প্রাণনারায়ণ ১৬৬৫-তে এখনকার দেউল গড়ে দেন। উচ্চতায় ৪৫ ফুট, এখনও মন্দিরের ভেতরে দেবীর সিংহাসন অটুট। গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গ, ব্রহ্ম গোপাল, নারায়ণশিলা এবং সূর্যমূর্তি প্রতিষ্ঠিত। দেবী ভগবতীর বিগ্রহ প্রস্তর নির্মিত। ১৯৬৪-র ১৯ ফেব্রুয়ারি সিংহাসন থেকে প্রায় দেড় মণ ওজনের রৌপ্যপাত অপহৃত হয়েছে, তবুও এ মন্দির স্থাপত্যের সৌকর্য্যে অনুপম। আজকের গোঁসানিমন্দিরে ধনাগার, ভোগঘর, হোমঘর অক্ষত আছে শুধু নেই পায়ের চলাচল। জীর্ণতার সংকটেও ভবানী পুজো পান প্রতিদিন। অম্বুবাচী, তালনবমী, রটন্তী চতুর্দশী, বাসন্তী পুজোর মতো পার্বণে বিশেষ পুজোর আয়োজন হয়। এখনও মাঘ মাসে দেবীর স্নান উৎসবে সব ম্লানতা ধুয়ে যায় বিশ্বাস করেন মানুষ।

লোকযন্ত্র
ঘানি তিল, সরিষার তেল করার একটি প্রাচীন যন্ত্র। একটি চার ফুট বেষ্টনীর এবং বারো ফুট দৈর্ঘ্যের নিমকাঠের দণ্ডকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। দণ্ডটি দশ ফুট মাটির নীচে এবং দুই ফুট মাটির উপরে স্থাপিত, যার সঙ্গে যুক্ত দুই ফুট উচ্চতার গোলাকার খাঁচা। গোলাকার নিমকাঠের উপরিতলে একটি ছয় ইঞ্চি গর্ত। ওই গর্ত থেকে তেল বেরিয়ে আসার জন্য একটি ফুটো থাকে। গর্তের মধ্যে থাকে ঘলু নামক লম্বা কাঠের দণ্ড। এটি কলু নামেও পরিচিত। সঙ্গে থাকে একটা কাতরি ও জোয়াল। কাতরির উপরে পঞ্চাশ কেজির পাথর চাপিয়ে একটি গরুর দু’টি চোখ কাপড়ে বেঁধে কাঁধে জোয়াল চাপিয়ে ঘোরানো হয়। সেই সময় বাঁশের খাঁচার মধ্যে রোদে শুকোনো পাঁচ কেজি সরিষা ঢেলে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে তিল, সরিষা ঘূর্ণায়মান কলুর সাহায্যে পেষাই হয়ে ফুটো দিয়ে তেল পড়তে থাকে। তেল তৈরি হতে বহু সময় লাগে। গরু ঘোরাতে এক জন মানুষকে থাকতে হয়। এই কাজ বাড়ির মেয়েরাও করেন। উৎপন্ন তেলের গুণমান উন্নত হলেও তার পরিমাণগত মান ভাল নয়, এই কারণে ধীরে ধীরে ঘানির ব্যবহার কমতে থাকে। নানা বাধাবিঘ্ন অগ্রাহ্য করে উত্তর দিনাজপুর জেলার কুইতোর ও দক্ষিণাল গ্রামের রাজবংশী কিছু মানুষ তিন পুরুষ ধরে ঘানিতে তেল তৈরি করছেন। জেলায় চাহিদা যথেষ্ট। এদের প্রতি বিশেষ নজর না দিলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ঘানি থেকে তেল উৎপন্ন হবে না। ঘানিও হারিয়ে যাবে যেমন করে হারিয়ে গেছে তেলঘানি গ্রামের ধনেশ্বর বর্মনের প্রসিদ্ধ ঘানি। গ্রামনামে তা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। ছবি: বৃন্দাবন ঘোষ

গম্ভীরার মুখো
শহরের নবীনা মাষাণ-গম্ভীরার অস্তিত্ব খুঁজতে যায় আর্কাইভে! তরুণ গবেষক খনগান বা গোরক্ষনাথের উপলব্ধি নিয়েছেন শহুরে বাতাসে। গ্রাম-নিকোনো উঠোনে বারোমাস্যার কাহিনিও কার্টুনে খুঁজছে আপনার ছোট। ঝরে পড়া পাতার উপেক্ষায় আজ গ্রাম বাংলার কালচার ব্লগের পাহাড়ে চাপা পড়ল। যাদের হৃদয় অবধি অন্ধকার, সেই আঙুলের নাড়ায় বাঁশের বুকে জন্ম নিল বেহুলা-লখাই। পুরাণনগরী মহিষবাথান। কখনও সমুদ্রমন্থন। রাতভর গল্প খুঁড়ে চলে দু’হাত। কলম দেয়নি জন্ম, তাই বিশ্বকর্মা ভরসা। লণ্ঠনের আলোয় বয়ে চলে গ্রামীণ সংস্কৃতির নদী! হাতের মোচড়ে সীতার বনবাস, বাঁশের ভাঁজে আটকে যায় কর্ণের রথের চাকা। প্রথম শ্রেণিতে মহাভারতের অনুবাদ ছিল না, তবুও কুশমণ্ডির সাঞ্জালু গল্প লেখে কাঠের পাতায়। বোশেখ থেকে আষাঢ়, ওরা গড়ে দেয় গম্ভীরার মুখো-- লোক বিশ্বাসে বুড়া-বুড়ানি। কালবৈশাখী ঝড়েও মুখোশ পরে মেঠো পথে মানবী দেবী। বলে দেন গ্রামের দুঃখ আসছে কবে কিংবা বিঘা-ভরা ধানের রহস্য! এ ভাবেই মানুষ দেবতার নান্দনিক যাতায়াতে দু’জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে শ্রদ্ধায় মানে রমলারা। শুধু নাগরিক সভ্যতায় ব্যাকডেটেড গ্রামীণ লোকাচার। সময়ে অসময়ে সে সংস্কারই থিম পুজোর প্রেক্ষিতে মহিষবাথানকে এনে বসায় শপিং প্লাজায়, গানের স্কুলে খনগান শেখায় দিদিমণি, গম্ভীরার সরকারি বিজ্ঞাপন!

ওরাও বাঁচুক
রায়গঞ্জের যুবক অভিজিৎ সরকার বহু গুণে গুণান্বিত। ছবি আঁকা, মডেল তৈরি, কবিতা লেখা, সংগীত রচনা কত কীই-না করেন! ছবি তোলাও তাঁর নেশা। নানা পোকামাকড়ের ছবি তুলে বেড়ান তিনি। এ পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচশো প্রজাতির দেড় হাজারেরও বেশি কীট-পতঙ্গের ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন। শুধু নিজে ছবি তোলাই নয়, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্কুলে স্কুলে স্লাইড শো-ও করেন অভিজিৎ। তাঁর আক্ষেপ, বিভিন্ন কারণে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক পোকামাকড়, এবং এতে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ‘লিভ অ্যান্ড লেট লিভ’ এই বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে চান অভিজিৎ। জৈববৈচিত্র্য রক্ষায় এই কাজ প্রশংসার দাবি রাখে। ছবি: তপন ব্রহ্ম


Previous Story Uttarbanga First Page



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.