নিখোঁজ স্রোত ৩...
বর্ষার আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে মজা নদী
তিন দশক আগে নদীর জলই ছিল একমাত্র ভরসা। যে জল সেচের কাজে ব্যবহার করার পাশাপাশি গৃহস্থের ব্যবহারেও কাজে লাগত। কিন্তু বর্তমানে নদীগুলিতে সারা বছর জল না-থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা করতে হয়েছে কান্দি মহকুমার বাসিন্দাদের। আবার মহকুমার নদীবাঁধগুলি বালিমাটি দিয়ে তৈরি হওয়ায় বর্ষা আসতেই বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটায় এলাকার বাসিন্দারা।
ওই মহকুমার মধ্যে ময়ূরাক্ষী ও দ্বারকা দুটি নদী বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। বাদ যায় না ওই মহকুমার মধ্যে অবস্থান করা কুঁয়ের কোপায়, কানা ময়ূরাক্ষী, দাউকী, বাবলার মতো মাঝারি ধারার নদীগুলিও। বর্ষায় সব নদী ফুলেফেঁপে ওঠে। কিন্তু ওই সব নদীগুলি বর্ষা ছাড়া সারা বছর শুকিয়ে থাকে আর তাতেই এলাকায় সেচের ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়। যদিও এলাকার বাসিন্দারা আগে নদীগুলিতে বাঁধ দিয়ে জল জমা করে (অস্থায়ী জলাধার) পাম্পের সাহায্যে চাষের কাজে জল ব্যবহার করত। কিন্তু সেটাও বন্ধ। বর্তমানে এলাকার বাসিন্দারা সেচের জন্য বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প করে ভূগর্ভ থেকে জল তুলে সেচের কাজে ব্যবহার করছে।
ছবি: গৌতম প্রামাণিক
ময়ূরাক্ষীর উৎপত্তি ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনায়। বীরভূম হয়ে ওই নদী মুর্শিদাবাদে ঢুকেছে। কান্দির ভরতপুর ব্লকের আঙারপুর নদীটি মিশছে বেলে নদীর কাছে। সেই দু’টি নদীর স্রোত ত্রিমোহিনীতে গিয়ে মিশছে ভাগীরথীতে। দ্বারকাও ঝাড়খণ্ড থেকে বয়ে আসছে। সেই নদীও কান্দি ব্লকেই মিশছে বাবলা নদীতেই। এই নদীগুলির জন্যই কান্দিকে মুর্শিদাবাদের শস্যগোলা বলা হয়।
এদিকে নদীবাঁধগুলি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা থেকেই যায়। নদীবাঁধগুলি মেরামত সময়ে হয় না বলেও অভিযোগ। ২০০২ সালে ময়ূরাক্ষীর বাঁধ ভেঙে কান্দি মহকুমায় বন্যা হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে সেচ দফতর ওই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলি যুদ্ধকালীন তৎপরতার সাথে কাজ করলেও তার পর প্রায় দশ বছর পেরিয়ে গেলেও বাঁধগুলি মেরামতি করা না-হওয়ায় এ বার বন্যার আশঙ্কা করছে এলাকার বাসিন্দারা। যেমন ময়ূরাক্ষী নদীর ওপর পাঁচথুপী এলাকায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার নদীবাঁধের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সে কথা স্বীকার করেছেন সেচ দফতরের কর্তারা। ওই নদীর বাঁধ ভেঙে বড়ঞা, কান্দি, ভরতপুর ১নং ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পাঁচথুপী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কেরীরা বিবি বলেন, “এলাকার বাসিন্দারা বাঁধ মেরামত করার দাবি জানিয়ে আসছে। আমরা বহুবার সেচ দফতরে দাবি জানাচ্ছি, কোনও কাজ হয় না।”
এলাকার বাসিন্দা অপরেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নদীগুলির হাল খুবই খারাপ। নদীগুলির খননকার্য কোনও দিন হয় না। সারা বছর নদীতে জলই থাকে না। বর্ষায় একটু বৃষ্টিতেই নদীর বাঁধ আলগা হয়ে গিয়ে বন্যা হয়। এলাকার নদীগুলিকে সংস্কার করা জরুরি।” এলাকার নদীগুলির বাঁধ যে মাটির তৈরি এবং খননকাজ না-হওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন সেচ দফতরের কান্দি মহকুমা আধিকারিক স্বপন বিশ্বাস। তিনি বলেন, “দফতরের অর্থের অভাব থাকায় ইচ্ছা থাকলেও উপায় থাকে না। এ বার ময়ূরাক্ষী ও দ্বারকা নদীর বাঁধে বোল্ডার দিয়ে মেরামত করার কথা ছিল। কিন্তু এমন সময় ওই কাজ করার অনুমোদন মিলল যে বর্ষা চলে আসছে, কাজ শুরু করলেও শেষ করা যাবে কি না সন্দেহ আছে। তবে চেষ্টা চলছে।”

ময়ূরের চোখের মতো এই নদীর জল ছিল, তাই তার নাম ময়ূরাক্ষী। ময়ূরাক্ষীর একটি শাখা নদী
কানা ময়ূরাক্ষী মজে গিয়েছে, মানচিত্রে তার অস্তিত্ব আর মেলে না। ঝাড়খণ্ডের মালভূমি
এলাকা থেকে ময়ূরাক্ষী নদীর উৎপত্তি। মালভূমি থেকে উৎস বলে বৃষ্টির জলই এই
নদীর ভরসা। কিন্তু প্রচুর গাছ কেটে ফেলায় মাটি এসে নদীতে পড়ছে।
ছোট ছোট বাঁধ তৈরি করাতেও নদীর স্রোত ব্যাহত হচ্ছে। ময়ূরাক্ষীর
শাখা ব্রাহ্মণী, দ্বারকারও একই অবস্থা।

কল্যাণ রুদ্র, নদী বিশেষজ্ঞ
First Page Murshidabad Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.