|
|
|
|
সক্রিয় কারাট নিজেও |
বুদ্ধের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ ঘোচাতে চায় পলিটব্যুরো |
সন্দীপন চক্রবর্তী • হায়দরাবাদ |
নির্বাচনী বিপর্যয়ের জন্য নেতৃত্ব বদলের প্রশ্ন খারিজ করে দেওয়ার পরে এ বার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ মেটাতে চাইছে সিপিএম পলিটব্যুরো। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক মিটে যাওয়ার পরে সোমবার থেকেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও তাতে সামিল।
বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের যে কোনও বিরোধ নেই, তা বোঝাতে কেন্দ্রীয় কমিটিতেই যথেষ্ট সক্রিয় হয়েছিলেন কারাট। কেন বারবার দলের কেন্দ্রীয় স্তরের বৈঠকে বুদ্ধবাবু অনুপস্থিত থাকবেন, তা-ই নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের কড়া প্রশ্নের মুখে কারাটই তাঁর পলিটব্যুরোর ‘সতীর্থ’কে আড়াল করেছেন। তিনি নিজে এবং পলিটব্যুরোর আরও কিছু সদস্য বুদ্ধবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে নিয়ে দলে উদ্ভূত সঙ্কট কাটানোর চেষ্টা করবেন বলে ঠিক হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা হারানোর পর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের দলের কাজে আরও বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হবে। বুদ্ধবাবু ঠিক কোন ভূমিকায় কাজ করতে পছন্দ করবেন, সেই বিষয়ে কারাট নিজেই তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন। পলিটব্যুরো সূত্রের খবর, বুদ্ধবাবুকে দলীয় মুখপত্র এবং বিভিন্ন প্রকাশনার কাজ দেখভাল করার প্রাথমিক দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তিনি ‘উৎসাহী’ হলে আরও কিছু দায়িত্ব নিতে পারেন। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পরে বুদ্ধবাবুর মনোভাব ঠিক কী, সেটাই আগে বুঝে নিতে চাইছেন সাধারণ সম্পাদক। |
|
সিপিএম পলিটব্যুরোর তিন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কারাট স্বয়ং, বৃন্দা কারাট এবং সীতারাম ইয়েচুরি আজ রয়ে গিয়েছেন হায়দরাবাদেই। অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য কমিটির দু’দিনের বর্ধিত বৈঠক হচ্ছে সুন্দরাইয়া বিজ্ঞান কেন্দ্রমে। তেলেঙ্গানা-সহ অন্ধ্রের বেশ কিছু জরুরি সমস্যা নিয়ে সেখানে আলোচনা হচ্ছে। কারাট নিজে তাতে অংশ নিচ্ছেন। তারই মধ্যে তিনি আলিমুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ইয়েচুরিও এক প্রস্ত কথা বলেছেন বুদ্ধবাবুর সঙ্গে।
সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় কমিটি যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গে দলের বিপর্যয়ের জন্য সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ‘ভুল’কেই দায়ী করেছে, আপাতদৃষ্টিতে তা বুদ্ধবাবুর ভাল লাগার কথা নয়। এমনিতেই তিনি রাজ্যে পরাজয়ের দায় ‘ব্যক্তিগত স্তরে’ নিজের উপরে নিয়েছেন। এর পরে তাঁর মনে হতেই পারে, কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকেই কাঠগড়ায় তুলল! তা যাতে না-হয়, সেই জন্যই ‘সক্রিয়’ হয়েছেন কারাট। কেন্দ্রীয় কমিটিতে জবাবি বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, জমি অধিগ্রহণের বিষয়টিকে সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করতে হবে। কোনও একটি সরকারের এক জন বা কয়েক জন শীর্ষ ব্যক্তির পদক্ষেপ হিসেবে নয়। পলিটব্যুরোর এক সদস্যের ব্যাখ্যায়, “শিল্পায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণে পশ্চিমবঙ্গে বুদ্ধবাবুর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি কিন্তু প্রশ্ন তোলেনি। তারা জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতিতে ভুলের কথা বলেছে। সেই ভুলের কথা স্বয়ং বুদ্ধবাবুও ইতিমধ্যে মেনে নিয়েছেন।” দলীয় সূত্রের খবর, জমি অধিগ্রহণের ভুলের বিশ্লেষণই হোক বা পশ্চিমবঙ্গে ‘সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়ানোর কর্তব্য গোটা রাজনৈতিক পরিস্থিতিই সকলে মিলে মোকাবিলা করতে হবে বলে কারাট জবাবি বক্তৃতায় ‘বার্তা’ দিয়েছেন।
হায়দরাবাদে বুদ্ধবাবুর অনুপস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল কারাটকেও। রাজস্থান, দিল্লি, অন্ধ্র, তামিলনাড়ু, বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যের প্রতিনিধিরা বুদ্ধবাবুর বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। কয়েক জন এমন কথাও বলেন যে, তাঁরা বুদ্ধবাবুর না-আসার ‘আসল কারণ’ জানেন! দলের তরফে সরকারি ভাবে বলা হয়েছে, বুদ্ধবাবুর না-আসার কারণ শারীরিক অসুস্থতা। কিন্তু ওই নেতাদের মতে, বুদ্ধবাবাবু হায়দরাবাদ আসেননি স্রেফ আসবেন না বলেই। অন্য কোনও কারণে নয়। ‘সংবেদনশীল’ মানসিকতার হওয়ায় দলের তাঁর পাশে না-দাঁড়ানোর বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি। সেটাই তাঁর সফর বাতিলের ‘আসল কারণ’। সাধারণ সম্পাদক আর কত দিন ‘সঠিক কারণ’টা লুকিয়ে রাখবেন? কারাট কিন্তু তার পরেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর হায়দরাবাদ-সফর বাতিল হওয়ার কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতা ছাড়া অন্য কিছু বলেননি।
বুদ্ধবাবুকে বোঝাতে কারাট সক্রিয় কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে দলের একাংশের বক্তব্য, তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে সিপিএম তৈরি হওয়ার পরে ১৯৬৭ সালে প্রথম নির্বাচন লড়ে লোকসভা ও বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা মিলে দলের যত জনপ্রতিনিধি ছিলেন, এখন মোট সংখ্যাটা তার চেয়েও কম! কারাট জানেন, বুদ্ধবাবু যদি ‘ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী’ হিসেবে দলের ইতিহাসে চিহ্নিত হন, তা হলে তাঁর নামেও ‘ব্যর্থ সাধারণ সম্পাদক’-এর তকমা লাগবে! তাই নিজের স্বার্থেই আপাতত তাঁর এই ‘সন্ধি-প্রয়াস’! |
|
|
|
|
|