ক্লাবের পোশাক-বিতর্ক
বিধি ভাঙার ডাক দিয়ে পথে ‘মমতা-ঘনিষ্ঠেরা’
হরের বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে ঢোকার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পোশাক-বিধি নিয়ে আরও এক বার বিতর্ক দানা বাঁধল। এই ধরনের ক্লাবগুলি যে সর্বসাধারণের অবাধ যাতায়াতের জায়গা নয়, বরং সদস্যদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তৈরি করা নিয়ম অনুযায়ী ক্লাবগুলি চলে সেটা স্বীকার না করেই বারবার ক্লাবের পোশাক-বিধি নিয়ে বিতর্ক সামনে আসে।
এ নিয়ে সাম্প্রতিকতম ঘটনাটির কেন্দ্রে চিত্রকর শুভাপ্রসন্ন।
অভিজাত ক্লাবগুলিতে সাধারণ ভাবে যে পোশাক-বিধি মানা হয়, তা হল: পুরুষদের ক্ষেত্রে ট্রাউজার্স, কলারওয়ালা শার্ট এবং জুতো (স্নিকার্স, স্ট্র্যাপ-শু জাতীয় খোলা জুতো বা চপ্পল নয়)। এ ছাড়া, প্রথাসিদ্ধ ভারতীয় পোশাক ধুতি-পাঞ্জাবি বা শেরওয়ানি-চুড়িদার ইত্যাদি। গোলগলা জামা, জিন্স, পাজামা পরে এলে ক্লাবে প্রবেশাধিকার পাওয়া যায় না।
কিছু ক্লাবের ক্ষেত্রে অবশ্য লনের কিছুটা অংশ (শামিয়ানা) পর্যন্ত ‘পাবলিক প্লেস’। শামিয়ানায় বিয়ে, জন্মদিনের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেন ক্লাব-সদস্যেরা। ওই পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষেত্রে পোশাক-বিধি প্রযোজ্য হয় না। আমন্ত্রিতেরা নিজেদের পছন্দের পোশাকেই যেতে পারেন। তার বাইরে ক্লাবের রেস্তোরাঁ, বার, বাতানুকূল হল, খেলার জায়গা ইত্যাদি জায়গায় পোশাক-বিধি মানাটা বাধ্যতামূলক।
একটি অভিজাত ক্লাবের সামনে পোশাক-বিধি নিয়ে শুভাপ্রসন্নের
সঙ্গে বিক্ষোভে সামিল বিদ্বজ্জনেরা। সোমবার শহরে। নিজস্ব চিত্র
কিন্তু সচরাচর যেমন পোশাকে তাঁকে দেখা যায়, সেই ঢোলা পাঞ্জাবি এবং ট্রাউজার্স পরেই সম্প্রতি শুভাপ্রসন্ন গিয়েছিলেন ক্যালকাটা ক্লাবে। তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ওই ক্লাবের সদস্য, বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ চুনী গোস্বামী। শুভাপ্রসন্নের পোশাক ক্লাবের বিধিসম্মত না হওয়ায় তাঁকে বেরিয়ে আসতে হয়। তখনই তিনি ওখানে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। ক্লাব-কর্তৃপক্ষ দুঃখপ্রকাশও করেন।
তবু সোমবার ফের ওই ক্লাবের সামনে প্রতিবাদী জমায়েত হয়। অংশ নেন শহরের নাগরিক সমাজের একাংশ। একাধিক বিদ্বজ্জনের নামে খোলা চিঠি দেওয়া হয় ক্লাবের সদস্যদের উদ্দেশে। তাতে বলা হয়, রাজ্য জুড়ে ‘পরিবর্তনের’ হাওয়ায় এই ‘ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি’ টিকিয়ে রাখার যুক্তি নেই। পোশাক-বিধি উঠে যাক। ‘মমতা-ঘনিষ্ঠ বিদ্বজ্জন’ বলে পরিচিত মহাশ্বেতা দেবী, যোগেন চৌধুরী, সমীর আইচ, অর্পিতা ঘোষদের সঙ্গেই চিঠিতে নাম আছে পরিচিত বামপন্থী বাদশা মৈত্রেরও।
বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত সমাজের বিশিষ্টেরা অবশ্য ক্লাবে পোশাক-বিধি রাখায় কোনও ভুল দেখছেন না। তাঁরা সকলেই একটি ব্যাপারে একমত, তা হল শহরের অভিজাত ক্লাবগুলি সর্বসাধারণের জন্য নয়। এগুলিকে ‘প্রাইভেট প্লেস’ (ব্যক্তি মালিকানাধীন এলাকা) বলা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্লাবগুলির সিদ্ধান্তের উপরে অন্য কারও হস্তক্ষেপ চলে না।
যাঁর আমন্ত্রণে ক্যালকাটা ক্লাবে যাওয়ার পরে শুভাপ্রসন্নকে ঘিরে এই পোশাক-বিতর্ক, সেই চুনী গোস্বামী বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। তবু ক্লাবের যা নিয়ম, তা মানতেই হবে বলে আমি মনে করি। কারণ, এই নিয়ম সদস্যেরা সর্বসম্মত ভাবে ঠিক করেছেন।” বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহও বলেন, “এই ধরনের ক্লাবের পোশাক বা অন্যান্য বিধি তৈরি হয় সদস্যদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। প্রাইভেট ক্লাবে তাই কিছু বদলাতে হলে সেই সিদ্ধান্তও সদস্যদেরই নিতে হবে। এখানে অন্য কোনও ‘গণতন্ত্র’ বা জোরাজুরি চলে না।”
আইনজীবী অভিজিৎ দেবেরও বক্তব্য, “সদস্যেরা না চাইলে পোশাক-বিধি বদলাবে না। এর মধ্যে আলাদা করে কিছু ভাবা বা বলার কোনও অবকাশই নেই। কোনও সদস্য কাউকে আমন্ত্রণ জানালেও যিনি আমন্ত্রিত, তাঁকে পোশাক-বিধি মেনেই ক্লাবে ঢুকতে হবে। এটাই নিয়ম।” চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রের মতে, “শুভাপ্রসন্নের মতো বিশিষ্ট লোককে বেরিয়ে যেতে হলে তা দুঃখজনক ঠিকই। কিন্তু সবাইকেই বুঝতে হবে, প্রাইভেট ক্লাবের নিয়ম তার নিজের মতো চলবে। যাঁরা সদস্য হন, তাঁরাও সেই নিয়মবিধি মেনে চলবেন বলেই স্বাক্ষর করে দেন। তাই সেই নিয়ম ভঙ্গ করা সমর্থন করা যায় না।”
শুভাপ্রসন্নের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাঁরা এ দিন প্রতিবাদ-জমায়েত করেছেন, তাঁরা অবশ্য ‘নিয়ম বদলের’ আহ্বান ছুড়ে দিয়েছেন সদস্যদের দিকেই।
First Page Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.