সংঘাতেই থমকে গিয়েছে কয়েকশো কোটির প্রকল্প

ল নেই। তবে বিবাদ আছে।
আর সেই বিবাদের জেরে আজও ভুগছেন সাধারণ মানুষ।
কুলটি ও আসানসোলে বড় দু’টি জলপ্রকল্পের জন্য অনুমোদন দিয়েছে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। এক-আধ বছর নয়। এই অনুমোদন মিলেছে প্রায় বছর পাঁচেক হল। কিন্তু প্রকল্প কে বানাবে সেই টানাপোড়েনই এখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকল্পের অগ্রগতিতে।
কুলটির প্রকল্প ১৩৩ কোটি টাকার। এডিডিএ এবং পুরসভা উভয়েই চায়, প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ থাকুক তাদের হাতে। এডিডিএ প্রকল্পের নোডাল এজেন্ট। তাই তাদের দাবি, প্রকল্প তারা বানাবে। আবার কুলটি পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রকল্পটি তাঁদের। তাই বানাবেন তাঁরাই। অনুমোদনের পরে পরেই হাইকোর্ট ঘুরে এই ঝগড়া গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। তাই এর রূপায়ণে হাতই পড়েনি।
একই হাল আসানসোল পুরসভার ১০০ কোটির প্রকল্পেরও। এখানেও নোডাল এজেন্ট এডিডিএ। বছর তিনেক আগে প্রকল্প তৈরির কাজে হাত দেয় এডিডিএ। ইতিমধ্যেই বানানো হয়েছে একাধিক জালাধার। সেই সময় আসানসোল পুরসভার ক্ষমতায় ছিল সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। প্রথম দিকে তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু
২০০৯-এ পুরসভা নির্বাচনে ক্ষমতার হাত বদল হয় সেখানে। ক্ষমতায় আসে তৃণমূল জোট। অন্য দিকে, বিধানসভা নির্বাচনে সাম্প্রতিক পট-পরিবর্তনের আগে পর্যন্ত এডিডিএ ছিল সিপিএমের হাতেই। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের ঝগড়া। টানাপোড়েনে থমকে যায় পাইপ লাইন বিছানোর কাজও। মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “রাজ্যে এখন ক্ষমতায় আমাদের দল। এডিডিএ-র কর্তৃত্বও আমাদেরই হাতে। ফলে কাজে আর দেরি হবে না।”
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আসানসোল ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার অশোক রায় জানিয়েছেন, প্রকল্প দু’টি চালু হলে কল্যাণেশ্বরী ও কালাঝড়িয়ার উপরে চাপ অনেকটাই কমবে। কল্যাণেশ্বরীর জল তখন কেবল সালানপুর, বারাবনি ও পাঁচগাছিয়ায় যাবে। আর কালাঝড়িয়ার জল পৌঁছবে রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়ায়। ফলে মানুষও পর্যাপ্ত জল পাবেন।
কী হাল বারাবনি আর সালানপুরের?
জানা গিয়েছে, দু’টি এলাকার জন্যই প্রকল্প তৈরি করেছে দফতর। ইসিএলের বহু পুরনো জলভর্তি খোলামুখ খনির জল পরিশোধন করে এলাকায় সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। সালানপুরের আলকুশা প্রকল্পটি চালু হয় ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। ১৪টি মৌজার প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দার উপকৃত হওয়ার কথা। খরচ হয় প্রায় দেড় কোটি। অশোকবাবুর দাবি, “আমরা এই প্রকল্পের জন্য ৮৪টি কল লাগিয়ে দিয়েছি।” কিন্তু বাস্তব কী বলছে? বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকল্পের জল মেরেকেটে ৪টি মৌজায় যায়। বাকি ১০টি মৌজা থাকে নির্জলাই। দফতরের পাল্টা অভিযোগ, বাসিন্দারা প্রধান পাইপ ফাটিয়ে অবৈধ সংযোগ জুড়ে নিচ্ছেন। তাই জল পাচ্ছেন না সবাই।
বারাবনির ইটাপাড়াতেও এ রকম একটি জলভর্তি খোলামুখ খনির জল পরিশোধন করে সরবরাহ করার প্রকল্প চালু হয় গত বছরের ৯ এপ্রিল। ৭টি মৌজার ১৫ হাজার বাসিন্দার এতে উপকৃত হওয়ার কথা। খরচ হয়েছে, প্রায় আড়াই কোটি। কল বসেছে ৬১টি। পিএইচই’র দাবি, ভালই চলছে এই প্রকল্প। বাসিন্দাদের কিন্তু অভিযোগ, তাঁরা নিয়মিত জল পাচ্ছেন না। কারণ? নাম প্রকাশ না করার শর্তে দফতরের ইঞ্জিনিয়াররাই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পাইপ বিছানোর কাজেই থেকে গিয়েছে গলদ। আর তারই ফল ভুগতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বারাবনি ও জামুড়িয়ার বেশ কয়েকটি এলাকায় অজয় নদে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে প্রকল্প করা হয়েছে। কিন্তু মানুষজনের জলের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না এতেও।
জানা গিয়েছে, জেলার কৃষি অঞ্চলের মতো খনি ও শিল্পাঞ্চলেও ছোট ছোট এলাকা ভাগ করে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল তুলে সেই জল জলাধারে সঞ্চয় করে এলাকায় সরবরাহের পরিকল্পনা করেছিল দফতর। কিন্তু তা সফল হয়নি। আবার নদীবক্ষেও পাথরের স্তর কাটিয়ে গভীর নলকূপ বসানো যাচ্ছে না। তার উপরে ভূগর্ভস্থ জলস্তর অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখন নদীর উপরিভাগের জল আর পরিত্যক্ত খোলামুখ খনির জল পরিশোধন করে সরবরাহ করার প্রকল্পই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ বলে মনে হচ্ছে।”
এই অবস্থায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ভরসা নতুন প্রকল্পগুলিই। বানানো হয়েছে একাধিক প্রকল্পের খসড়া। তবে দরকার যথাযথ প্রকল্প আর তার যথাযথ রূপায়ণ।
মানুষ অবশ্য ভরসা করতেও ভয় পান এখন। আসানসোলের বহু বাসিন্দাই শুধু বলছেন, “দেখা যাক কী হয়।” আশাতেই তো বাঁচে মানুষ।
Previous Story Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.