উত্তর কলকাতা
উন্নতি কবে
যেন নরকের পার
ঙ্গাপারের রাস্তা দিয়ে হাঁটলে ভেসে আসে কটু গন্ধ। কোনও কোনও জায়গায় গন্ধটা এতটাই তীব্র যে মনে হয় রাস্তার পাশে বিশাল গঙ্গা নয়, রয়েছে কোনও ভাগাড়। যে রাস্তা পথচলতি মানুষ থেকে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ হতে পারত সেই রাস্তার ধারেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে আবর্জনা। কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে যদিও দাবি করা হয়েছে, ওই রাস্তায় নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার হয়। তবে এলাকার মানুষের অভিযোগ, রাস্তাটি যে হেতু গঙ্গার পারের, তাই এই রাস্তার জঞ্জাল সাফাইয়ের ক্ষেত্রে পুরসভার আরও সচেতন হওয়া উচিত।
আহিরীটোলা ঘাট থেকে গঙ্গার পার ধরে হাঁটা শুরু করে বাঁধা ঘাট, শোভাবাজার ঘাট হয়ে চাঁদপাল ঘাটে পৌঁছলেই মালুম হয় দুর্গন্ধের তীব্রতা। রাস্তার এক দিকে গঙ্গার পার বরাবর আবর্জনার স্তূপের সারি, অন্য পারে ট্রাক থেকে শুরু করে লরি, ছোট গাড়ির পার্কিং। সব মিলিয়ে কোথাও কোথাও রাস্তাটাও খুব ছোট হয়ে গিয়েছে। রাস্তার অন্য পারে গাড়ির পার্কিং থাকায় গঙ্গার পার বরাবর জঞ্জালস্তূপের পাশ দিয়েই হাঁটতে বাধ্য হন মানুষ।
আহিরীটোলা ঘাট থেকে একটু এগোলেই দেখতে পাওয়া যায়, রাস্তার ধারেই পড়ে রয়েছে জঞ্জালের স্তূপ। একই দৃশ্য চোখে পড়বে ওই রাস্তা থেকে একটু এগিয়ে বাঁধা ঘাট আর শোভাবাজার ঘাটের কাছেও। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গঙ্গার পারের ঘাটগুলো এখন আগের তুলনায় অনেক পরিষ্কার। ঘাটে নামার সিঁড়িতে নোংরা বা আবর্জনা দেখতে না পাওয়া গেলেও ঘাট-সংলগ্ন জায়গাগুলির এখনও কার্যত কোনও পরিবর্তন হয়নি। এলাকার দেবেশ রায়ের কথায়: “আগের তুলনায় ঘাটগুলো পরিষ্কার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সব মিলিয়ে পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না।” এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত প্রাতর্ভ্রমণ করতে আসেন এলাকার বাসিন্দা নির্মল চৌধুরী। নির্মলবাবুর মন্তব্য: “ভোরবেলা গঙ্গার নির্মল হাওয়া খেতেই মূলত এই রাস্তা দিয়ে গঙ্গার পার বরাবর হেঁটে যাই। কিন্তু কোনও কোনও জায়গায় এত কটু গন্ধ বের হয় যে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে যেতে হয়।”
একই অভিযোগ এলাকার এক প্রবীণ নাগরিকেরও। তিনি বলেন, “সন্ধ্যায় পাড়ার কিছু সমবয়স্ক লোকের সঙ্গে এই রাস্তায় হাঁটতে বেরোই। সব থেকে খারাপ অবস্থা শোভাবাজার ঘাট ও বাঁধা ঘাটের কাছে।” এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই রাস্তার ধারের ডাস্টবিনগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। ফলে আবর্জনার স্তূপ মানুষের পায়ে পায়ে অনেক সময়েই রাস্তার ওপরেও চলে আসে।
এই রাস্তা ঘেঁষে আবার চলে গিয়েছে চক্ররেলের লাইন। চক্ররেলের লাইন ঘেঁষে পড়ে থাকে আবর্জনা ও নোংরার স্তূপ। অভিযোগ, এক দিকে গঙ্গার পার-সংলগ্ন রাস্তার আবর্জনা, অন্য দিকে চক্ররেলের লাইন বরাবর আবর্জনার স্তূপ। এই দুইয়ের মাঝে গঙ্গার পার বরাবর এই রাস্তা পরিবেশকে দূষিত করে দিচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো যুক্ত হয়েছে রাস্তার পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক, লরি ও ছোট গাড়ি। অভিযোগ উঠেছে, ট্রাক বা লরিচালক ও খালাসিদের অধিকাংশই এলাকার লোক নন। ফলে পরিবেশকে সুন্দর রাখার দায়ও অধিকাংশের থাকে না। বর্জ্য পদার্থ, খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলে দেওয়া হয় ওই রাস্তার ধারেই। এলাকার বাসুদেব মজুমদারের কথায়: “আমরা বার বার অনুরোধ করেছি রাস্তা নোংরা করবেন না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজের কাজ কিছু হয়নি। গঙ্গার পারের যে রাস্তা হতে পারত কলকাতা শহরের সেরা রাস্তাগুলির অন্যতম, অপরিচ্ছন্নতার জন্য সেই রাস্তায় অনেকে আজ হাঁটতে পর্যন্ত চান না।”
যদিও কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “গঙ্গার ধার ও রাস্তা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। রোজ সকালে নিয়মিত ময়লার গাড়ি আসে। তবে ভবিষ্যতে এই রাস্তার জঞ্জাল সাফাইয়ের ক্ষেত্রে আরও নজর দেওয়া হবে। কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো এখন যে রকম দুপুর বা বিকেলের দিকেও এক বার পরিষ্কার করা হয় সে রকম এই রাস্তায়ও দু’বার জঞ্জাল সাফাই করা হবে।” দেবব্রতবাবু বলেন, “এখন ঘাটগুলো আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন। সপ্তাহে এক বার ঘাট পরিষ্কার করা হয়। বিশেষ বিশেষ পার্বণ বা অনুষ্ঠান থাকলে ঘাট-সংলগ্ন জায়গাগুলোও পরিষ্কার করা হয়।”


ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
First Page

Kolkata

Next Story

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.