শো-কজ বিষ্ণুপুরের চিকিৎসককেও
‘গাফিলতিতে’ রোগী-মৃত্যু বাঁকুড়ায়

বিষ্ণুপুরের পরে বাঁকুড়া। ফের চিকিৎসার ‘অবহেলায়’ রোগী-মৃত্যুর অভিযোগ।
সোমবার বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে শিশু মৃত্যুকে ঘিরে ধুন্ধুমার বাধে। মঙ্গলবার ‘কাঠগড়ায়’ বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বাঁকুড়া শহরের গোপীনাথপুরের মাঠপাড়ার বাসিন্দা অরুন গুঁই (৪৫) এ দিন সকালে বাঁকুড়া মেডিক্যালে মারা যান। তাঁর অবস্থার অবনতি হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখতে আসেননি এবং কর্তব্যরত নার্সরা দুর্ব্যবহার করেছেন, এই অভিযোগ তুলে মৃতের আত্মীয়েরা হাসপাতাল সুপারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। মৃতের স্ত্রী রুমা গুঁই অভিযুক্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার দাবিতে লিখিতভাবে সুপারের কাছে অভিযোগও জানান। সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ দিকে, বিষ্ণুপুর হাসপাতালের ‘গাফিলতিতে’ শিশু মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসককে এ দিনই ‘শো-কজ’ করেছেন ওই হাসপাতালের সুপার রবীন্দ্রনাথ প্রধান। সোমবার সুপারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মী এবং মৃত শিশুর পরিজনেরা। মঙ্গলবার রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্দেশে অভিযোগের তদন্ত চলছে। তার আগে আমি ওই চিকিৎসককে ‘শো-কজ’ করেছি। যদিও তিনি এখনও উত্তর দেননি।” যে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে এ দিনও চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুপারের ঘরে বিক্ষোভ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

বাঁকুড়া মেডিক্যাল মৃত রোগী অরুণবাবু ছিলেন পেশায় দিমজুর। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে অরুণবাবুর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবারও একই সমস্যা থাকায় তাঁকে সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, “চিকিৎসকেরা ইঞ্জেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই স্বামীর শরীর নেতিয়ে পড়ে। দেহ ঠান্ডা হতে থাকে। জিভ উল্টে যাচ্ছিল। ওয়ার্ডে তখন বড় চিকিৎসক ছিলেন না। হাউসস্টাফদের ডাকি। কিন্তু যে হাউসস্টাফেরা স্বামীর ভর্তির সময় ছিলেন, তখন তাঁদের ‘ডিউটি’ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাঁদের বদলে আসা হাউসস্টাফেরা স্বামীকে দেখতে আসেননি। বড় চিকিৎসককে ডাকার জন্য অনুরোধ করায় নার্সরা উল্টে আমাকে ধমক দিয়ে স্বামীর কাছে ফিরে যেতে বলেন। এর পরে বিনা চিকিৎসায় স্বামী চোখের সামনে মারা গেল।” তাঁর দাবি, ‘দোষী’ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় অরুণবাবুর পড়শি ও আত্মীয়েরা হাসপাতাল চত্বরে ভিড় করেন। তাঁরা সুপারকে তাঁর অফিসে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। অরুণবাবুর আত্মীয় নয়ন লোহ, লক্ষণ দে বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তিনি হেঁটে সিঁড়ি ভেঙে তিন তলার ওয়ার্ডে উঠলেন। এর ঘণ্টা চারেক পরে সেই মানুষটা মারা গেল, এটা যাচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার জন্যই তাঁর মৃত্যু হল।”
হাসপাতালের সুপার অবশ্য চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ মানতে চাননি। পঞ্চাননবাবুর দাবি, “ওই রোগীর যন্ত্রণা কমানোর জন্য ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। এর বেশ কিছুক্ষণ পরে তাঁর শরীরে অস্বস্তি শুরু হয়। ভিজিটিং প্রোফেসর তাঁকে দেখতে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ জানতে দেহের ময়নাতদন্ত হবে। অভিযোগেরও তদন্ত করা হবে। তদন্তে কারও দোষ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হবে।”

এর আগেও চিকিৎসায় গাফিলতির অনেক অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম করে তদন্তও হয়েছে। কিন্তু শাস্তি দেওয়ার নজির নেই কেন? এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে সুপার বলেন, “খুব শীঘ্রই নানা কারণে একজন চিকিৎসক এবং একাধিক স্বাস্থ্যকর্মীকে বদলি করা হবে।”

First Page Swasth Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.