আমাদের স্কুল
প্রতিষ্ঠা: ১৯৬৬ সাল।
ছাত্রসংখ্যা: ১৩০৩ জন।
স্থায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকা: ২০ জন।
পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকা: ৮ জন
২০১১ সালে মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১২৯ জন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০৩ জন। ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৮০ শতাংশ

এক সময়ে ছাত্রছাত্রী সংগ্রহে
অভিযানে নামতে হয়েছিল

নিতাইচন্দ্র হাইত

কৈজুড়ি গ্রামের শীতল চক্রবর্তী, স্থানীয় চিকিৎসক রাধাকান্ত সেনগুপ্ত, ইদ্রিশ মহম্মদ মূলত এইসব শিক্ষাব্রতী গ্রামবাসীর চেষ্টায় ১৯৬৬ সালে পঞ্চম শ্রেণির মাত্র ১৬ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে কৈজুড়ি হাইস্কুলের পথ চলা শুরু। প্রথমে এটি ছিল জুনিয়র হাইস্কুল। প্রথম দিকে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল কম। ফলে শিক্ষাব্রতী ওইসব মানুষগুলি ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহ অভিযানে নামেন। অনেকে এগিয়ে আসেন। অনেক অভিভাবক আবার তাঁদের রীতিমতো তাড়া করেন। কিন্তু স্কুল প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্প নিয়ে যাঁরা পথে নেমেছিলেন তাঁদের থামানো যায়নি। ক্রমাগত ছাত্র-ছাত্রী বেড়ে চলে। ১৯৭৯ সালে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয় স্কুলটি। স্কুলের অন্যতম সহকারী শিক্ষক তথা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ-এর সদস্য তারাপদ কুণ্ডু-সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পরিচালন সমিতির সদস্যদের উদ্যোগে ২০০১-২০০২ শিক্ষাবর্ষে স্কুলটি উন্নীত হয় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে।

আমাদের স্কুলে প্রথম থেকেই শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষকের অভাব রয়েছে। ২০০০ সালের গোড়ায় প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষের অভাবে পর পর তিনটি শিক্ষাবর্ষে পঞ্চম শ্রেণিতে সকালের দিকে পঠন-পাঠন চালাতে হয়। সমস্যার নিরসনে বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সদস্য এবং কয়েকজন অভিভাবক এগিয়ে আসেন। জেলা সর্বশিক্ষা মিশন-এর আর্থিক অনুদান, অভিভাবকদের আর্থিক সহযোগিতায় স্কুলে কয়েকটি অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মিত হয়। স্কুলের মোট ছাত্র-ছাত্রীর প্রায় ৭০ শতাংশ তফসিলি ও সংখ্যালঘু শ্রেণিভুক্ত। তাদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা এই বিদ্যালয়ের অন্যতম ব্রত। সর্বশিক্ষা মিশনের আর্থিক আনুকুল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু আছে। আরও কয়েকটি কম্পিউটার প্রয়োজন। স্কুলের নিজস্ব খেলার মাঠ নেই। অর্থাভাবে জমি থাকা সত্ত্বেও খেলার মাঠ করা যায়নি। স্কুলে বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি করা যায়নি। পঠন-পাঠনের মান আরও উন্নত করার জন্য অতিরিক্ত কয়েকজন শিক্ষক প্রয়োজন। তবে এই সব প্রতিকূলতা সাময়িক।
অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের চাহিদা পূরণে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে পঠন-পাঠন চালুর চেষ্টা হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের সংস্কৃতি চর্চার জন্য একটি অডিটোরিয়ামের নির্মাণের কাজ চলছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দরদী শিক্ষাদানের ফলে বিদ্যালয়ের মান ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সুযোগ্য পরিচালনায় বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নতি প্রবহমান। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এগুলি আশার কথা।


আমার চোখে

রিজিয়া সুলতানা

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী হিসাবে আমি এই স্কুলে প্রথম প্রবেশ করি। প্রথম দিনেই স্কুলের পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক ব্যবহার আমাকে স্কুলমুখী করে তোলে। তখন থেকেই একদিন স্কুলে যেতে না-পারলে আমার মনে হয় কী যেন হারিয়েছি। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমবেত প্রচেষ্টার ফলে স্কুলে শিক্ষার পরিবশ এবং মানের ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। শুধু পঠন-পাঠনই নয়, সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রেও আমাদের স্কুলে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমি নিজে একাধিকবার আবৃত্তি প্রতিযোগিতা এবং নাটকে যোগদান করেছি। তবে আমাদের স্কুলে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অভাবও রয়েছে। বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে প্রচুর বইও আছে। কিন্তু রিডিং রুম নেই। কম্পিউটার প্রশিক্ষণের পরিকাঠামোর আরও উন্নতি চাই। ছাত্র-ছাত্রীদের পানীয় জলের চাহিদা পূরণে আরও একটি নলকূপের প্রয়োজন। খেলার মাঠেরও বড় প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষ এবং শৌচাগার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রয়োজন ঝাড়ুদারের। কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকাও দরকার। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হলে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়। তবে এত কিছু নেই-এর মধ্যেও রয়েছে অনেক কিছুই। আর সে সব মিলিয়েই আমাদের কাছে অতি প্রিয় এই স্কুল।
Previous Story South Next Item




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.