কপিলকে মঞ্চেই তোলা হল না বিশ্বজয়ের সংবর্ধনা সভায়
য়াংখেড়েকে বরণ করার এমন বিরল রাত। কোথায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে, তা না বিতর্কিত হয়ে থাকল। যেহেতু ২৫ জুন, লর্ডস-কে ঠিক মতো সম্মান জানানো হল না। যেহেতু কপিল দেবকে ডেকে এনেও তাঁকে মঞ্চে তোলাই হল না।
প্রাথমিক ভাষণে তিরাশির বিশ্বকাপ জয়ের কথা বলা হলেও বোর্ডের পুরস্কার মঞ্চে কার্যত উপেক্ষিত থেকে গেলেন কপিলের দৈত্যরা। তাঁদের পুরো দলকে এমনিতেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কপিলকে জানানো হয়েছিল প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক হিসেবে। আইসিএল নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে পড়ার পর থেকে এই প্রথম বোর্ডের কোনও মঞ্চে তাঁকে দেখা গেল।
বোর্ডের অনুষ্ঠানে অঞ্জলি তেন্ডুলকর ও সাক্ষী ধোনি।
কিন্তু সেই অভিজ্ঞতাও খুব মধুর হয়ে থাকল বলা যাচ্ছে না। কপিলকে বরং দেখতে হল, তিরাশিতে বিশ্বকাপ জিতে ভারতীয় ক্রিকেটের স্রোতটাকেই পাল্টে দেওয়া তিনি ঘণ্টাখানেকের অনুষ্ঠানে সারাক্ষণ চেয়ারে বসে রইলেন। আর তাঁর সামনে বিশেষ পুরস্কার তুলে দেওয়া হল নতুন কোচ ডানকান ফ্লেচারকে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, কপিল যখন তিরাশিতে তাঁর সেই অবিস্মরণীয় ১৭৫ নট আউটের ইনিংস খেলছেন, তখন এই ফ্লেচার ছিলেন প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ের ক্যাপ্টেন। ক্রিকেটীয় ইতিহাস রচনায় তিনি, কপিল দেব কোথায় আর ডানকান ফ্লেচার কোথায়? আরব সাগরের পারে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতীয় বোর্ড তবু নতুন কোচকে অনেক বেশি সম্মান দেখিয়ে বরণ করে নিল। অতীতে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখানো হরিয়ানা হারিকেন-কে নয়।
কপিল যেমন উপেক্ষিত থাকলেন, তেমনই মঞ্চে ডাকা হল না আইসিসি প্রধান শরদ পওয়ারকেও। বিশ্বকাপ সফল ভাবে করার পরও পওয়ারের কথা বলা হল না। যা নিয়ে কেউ কেউ বেশ ক্ষুব্ধ। এ দিন যেন বুঝিয়ে দেওয়া হল, বোর্ডের মধ্যে পওয়ার কতটা ব্রাত্য।
মঞ্চে যেমন এ দিন বাংলা ক্রিকেটের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না, তেমনই ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী (বুধবার ভোরেই রওনা হচ্ছে) ভারতীয় দলের সদস্যদের মধ্যে শিখর ধাওয়ান, ইশান্ত শর্মাদের দেখা গেলেও বাংলার দুই প্রতিনিধি-- মনোজ তিওয়ারি, ঋদ্ধিমান সাহাকে দেখা যায়নি।
কপিল অবশ্য অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেন। হেসে বললেন, “এ সব ছেড়ে দিন, এ নিয়ে বলে কী হবে? আমাদের টিম বিশ্বকাপ জিতেছে। ওদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি, ওদের অভিনন্দন জানাতে পারলাম এটাই আমার কাছে আসল।” অনুষ্ঠানে এসে প্রথমে নিজে থেকেই ধোনির টিম যে টেবিলটায় বসেছিল সে দিকে এগিয়ে গেলেন কপিল। নিজে গিয়ে সকলকে অভিনন্দন জানালেন। হাত মেলালেন। অনেকক্ষণ কথা বললেন সচিনের সঙ্গে। এর পর গিয়ে বসলেন এ দিন ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরস্কার পাওয়া সেলিম দুরানির পাশে। অনুষ্ঠানের পর দেখা গেল সুনীল গাওস্করের সঙ্গেও আড্ডা দিচ্ছেন।
দুরানিকে অভিনন্দন সচিনের।
শুধু বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলতে গিয়েও কোথাও যেন থমকে গেল। অথচ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কপিলকে মঞ্চে ডাকা হচ্ছে না দেখে অনেকে মনে করেছিলেন, নিশ্চয়ই তাঁকে দিয়ে ধোনির টিমকে পুরস্কার দেওয়ানো হবে। আদতে ধোনির টিমের প্রত্যেকের হাতে দু’কোটি টাকার চেক তুলে দিলেন মনোহর এবং শ্রীনিবাসন। সেটা যদিও বা না হল, কপিলকে মঞ্চে তুলে তো এমনিও জিজ্ঞেস করা যেত, তাঁর কী মনে হয়েছিল ২৫ জুনের রাতে? আর কী অনুভূতি হচ্ছিল ২ এপ্রিল রাতে?
তার উপর বিশ্বকাপজয়ী দল কোনও সরকারি পোশাকেও মঞ্চে এল না। সচিন, দ্রাবিড়, ধোনিরা ঠিকই ব্লেজার পরে এসেছিলেন। মুনাফ পটেল এলেন একটা এমনি জামা পরে। সহবাগ এলেন সবুজ টি-শার্ট গায়ে। গৌতম গম্ভীর আবার অন্য একটা রংয়ের জামা পরে। প্রশ্ন উঠছে, এ রকম একটা অনুষ্ঠানের জন্য বোর্ড কি ‘ড্রেস কোড’ রাখারও প্রয়োজন মনে করেনি? আশিস নেহরা একেবারে শেষ মুহূর্তে ছুটতে ছুটতে এলেন। তাঁরও পরনে জিন্স আর জামা। বলা হল, নেহরা নাকি ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে পড়েছিলেন।
সচিন এই নিয়ে দ্বিতীয় বার বোর্ডের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতলেন। বললেন, “টিমের প্রত্যেকের সমর্থন ছাড়া এই পুরস্কার আমার পক্ষে জেতা সম্ভব ছিল না। আমি সবথেকে খুশি যে আমাদের টিম প্রত্যেক ভারতীয়কে বিশ্বকাপ জয়ের জাদুকরি মুহূর্ত উপহার দিতে পেরেছে।”
বোর্ডের মঞ্চে দাঁড়িয়ে খোলাখুলি অধিনায়ক ধোনির অবদানের কথা বললেন। এক নম্বর টেস্ট টিম হওয়ার গর্বের কথা উল্লেখ করলেন। সেলিম দুরানি তেমনই বার বার বললেন সি কে নাইডুর ক্রিকেটীয় কীর্তির কথা। এবং ধোনিদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি কপিলের দৈত্যদের সম্মান জানাতে ভুললেন না। ভুললেন না বর্তমান বোর্ডকর্তাদের পাশাপাশি শরদ পওয়ারকেও ধন্যবাদ দিতে। বললেন, টানব্রিজ ওয়েলসে কপিলের সেই ১৭৫ নট আউটের কথা। তখন কে আর জানত সে দিন হরিয়ানভির হাতে পরাভূত জিম্বাবোয়ে অধিনায়ক পুরস্কৃত হবেন আর উপেক্ষিত থেকে যাবেন দেশের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক?

ছবি: পিটিআই

First Page Khela Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.