শেয়ার বাজার চাঙ্গা, কৃষি উৎপাদন বাড়ল ৭.৫%
আর্থিক বৃদ্ধি কমে ৭.৮%
ড়া মূল্যবৃদ্ধির হার এবং তা রুখতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্রমাগত সুদ বাড়ানোর প্রভাবই বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে দিল অর্থনীতির চাকা। আর্থিক বৃদ্ধির হার এক ধাক্কায় নেমে এল ৯.৪% থেকে ৭.৮ শতাংশে। এর পিছনে সাধারণ ভাবে ওই কারণটিই চিহ্নিত করেছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ব্যাঙ্কিং ও শিল্পমহল এবং অর্থনীতিবিদরা।
গত ২০০৯-’১০ অর্থবর্ষের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত ২০১০-’১১ সালের শেষ তিন মাস, জানুয়ারি থেকে মার্চে বৃদ্ধির হার এতটা কমায় উদ্বিগ্ন যোজনা কমিশনও। মঙ্গলবার প্রকাশিত এই সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার মন্তব্য: চলতি অর্থবর্ষেও বৃদ্ধি কিছুটা কমতে পারে। তবে তা ৮-৮.৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। শেষ ত্রৈমাসিকে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ ছোঁয়াকে ভাল লক্ষণ বলে তকমা দিয়েছেন প্রণববাবু। গোটা বছরের হিসেবে তা ৬.৬ শতাংশ। খরার প্রকোপে আগের বছরের হার ছিল মাত্র ০.৪ শতাংশ।
গত ১৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম আর্থিক বৃদ্ধির এই হার। ঠিক আগের ত্রৈমাসিক, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরেও তা ছিল ৮.৩%। সার্বিক ভাবে ২০১০-’১১ অর্থবর্ষের হিসেব ধরলে অবশ্য তা ৮.৫% ছুঁয়েছে। আগের পূর্বাভাস ৮.৬ শতাংশের চেয়ে যা সামান্য কম। তবে বৃদ্ধির হার নিয়ে শিল্পমহল কিছুটা হতাশ হলেও তা এ দিন প্রভাব ফেলেনি ভারতের শেয়ার বাজারে। দ্রুত ওঠা-পড়ার বাজারে মঙ্গলবার সেনসেক্স বেড়েছে ২৭১ পয়েন্ট। এ দিন বিশ্ব বাজার চাঙ্গা থাকায় পড়তি বাজারের সুযোগ নিয়ে লগ্নিকারীরা শেয়ার কিনতে থাকেন। তার জেরেই সূচক বেড়েছে বলে শেয়ার বাজার মহলের খবর। দিনের শেষে সেনসেক্স ছিল ১৮,৫০৩.২৮ অঙ্কে। এই বৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্য বলে বিশেষজ্ঞরা আখ্যা দিয়েছেন। কারণ, ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির হার আশানুরূপ হয়নি। পাশাপাশি ফের পেট্রোলের দাম বাড়তে চলেছে বলে খবর। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূচকের ঊর্ধ্বগতি লগ্নিকারীদের উৎসাহ বাড়িয়েছে বলে বাজার মহলের খবর।
অন্য দিকে, এপ্রিলের হিসেবে সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছে ৮.৬৬ শতাংশে। গত ১৪ মে শেষ হওয়া সপ্তাহের জন্য খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৮.৫৫ শতাংশে। মুদ্রাস্ফীতিকে বাগে আনতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ বৃদ্ধির জের যে ভাবে টেনে নামিয়েছে আর্থিক বৃদ্ধির হারকে, এ দিন তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন শিল্পমহল ও ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞরা:
l ঋণে চড়া সুদের ফলে শিল্পের হাতে তহবিল কমা। ফলে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধি গত বছরের শেষ ত্রৈমাসিকের ১৫.২% থেকে কমে ৫.৫%
l
খনি ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি ৮.৯% থেকে কমে ১.৭%
l
চাহিদা কমায় বাণিজ্য, হোটেল, পরিবহণ শিল্পে বৃদ্ধি ১৩.৭% থেকে কমে ৯.৩%

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে অর্থনীতির যে সব ক্ষেত্রে কিছুটা আশার আলো দেখা গিয়েছে, সেগুলি হল:
lত্রৈমাসিকে কৃষি উৎপাদন ১.১% থেকে বেড়ে ৭.৫%
lব্যাঙ্ক-বিমা ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ৬.৩% থেকে বেড়ে ৯%

অর্থনীতির শ্লথগতির জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতিকেই দায়ী করেছেন বণিকসভা ফিকি-র সেক্রেটারি জেনারেল রাজীব কুমার। প্রসঙ্গত, গত ২০১০ সালের মার্চ থেকে ৯ বার সুদ বাড়িয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। যার জেরে ঋণ নেওয়ার খরচ বহুগুণ বেড়েছে। অ্যাসোচ্যাম প্রেসিডেন্ট দিলীপ মোদীও একই কারণের উল্লেখ করে বলেন, চড়া সুদের ফলে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সঙ্কুচিত হয়েছে লগ্নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে সিআইআই প্রেসিডেন্ট বি মুথুরামন ভূমি ও শ্রম আইনে ব্যাপক সংস্কারের দাবি তুলেছেন। যাতে উৎপাদন শিল্পে দ্রুত বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে শিল্পোৎপাদন বাড়লে সার্বিক ভাবে আর্থিক বৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে তাঁর আশা।

First Page Business Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.