গাড়ি নিয়ে নয়া নির্দেশিকা ভুটানের
সরকারের দ্বারস্থ ট্যুর অপারেটররা
দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সামান্য কিছু নিয়মাবলী মেনে বহুদিন ধরেই দুই পারেই বাসিন্দাদের অবাধে দুইপারে যাতায়াত করছেন। কিন্তু ভুটান সরকারের অভিবাসন দফতরের সাম্প্রতিক নির্দেশের জেরে সমস্যায় পড়েছেন গিয়েছেন ভারতীয় ছোট গাড়ির চালক এবং পরিবহণ ব্যবসায়ীরা। ওই নির্দেশে জানানো হয়েছে, প্রতি মাসে ভারতীয় কোনও ছোট গাড়ির চালক বা নির্দিষ্ট গাড়ি তিনবারের বেশি সেদেশে ঢুকতে পারবে না। এতে ভরা পর্যটন মরশুমে বিপাকে পড়েছেন পরিবহণ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি পর্যটন সংস্থাগুলি। গত সপ্তাহেই ভারতীয় পরিবহণ এবং পর্যটন সংস্থার সংগঠনের প্রতিনিধিরা ভুটানে গিয়ে অভিবাসন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু নিয়মের কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় সমস্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে বলে সংগঠনগুলির দাবি। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হচ্ছে সংগঠনগুলি। গৌতমবাবু বলেন, “আমি শুনেছি। তবে এটা রাজ্যের আভ্যন্তরীণ বা জেলার বিষয় নয়। দুটি দেশের মধ্যে বিষয়। পরিবহণ ব্যবসায়ী বা পর্যটনের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলি লিখিতভাবে সমস্যার কথা জানানোর পরেই তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।” ইস্টার্ণ হিমালয়্যান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “ভুটানে ভারতীয় পর্যটকদের ভিড় গত কয়েক বছরে বেড়েই চলছে। অনেক সময় তা সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। নয়া নিয়মে গাড়ি পাওয়া নিয়ে প্রচন্ড সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভুটানে গিয়ে আমরা ওই দেশের আধিকারিকদের সঙ্গে কথাও বলেছি। কিছু হয়নি। এবার তাই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছি।”
ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই সেতু পেরিয়েই যেতে হয় দার্জিলিঙের ছোট্ট পাহাড়ি শহর লোধামায়।
স্রেফ শহরটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতি বছর বহু পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। ছবি তুলেছেন রবিন রাই।

ভারতীয়দের ভুটানে যাওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম বরাবরই মানতে হয়। গাড়িতে ওই দেশে ঢোকার আগে ফুন্টশেলিং-এর ভুটানের অভিবাসন দফতর থেকে নির্দিষ্ট দিন, এলাকা উল্লেখ করে পারমিট নিতে হয়। সেই ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়া অন্য কিছু প্রমাণ হিসাবে জমা দিলে তা আবার জয়গাঁয় ভারতীয় অভিবাসন দফতরে দেখিয়ে অনুমতি নিতে হয়। গাড়ি এবং চালকদের জন্য আলাদা পারমিট, অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। ভারতীয়দের পারমিট কেবলমাত্র থিম্পু এবং পারোর জন্য দেওয়া হয়। পুনাখা-সহ অন্যত্র কোথাও যেতে হলে থিম্পু অভিবাসন দফতর থেকে আবার পারমিট নিতে হয়। শুধু তাই নয়, সেদেশের কয়েকটি ধর্মীয় জায়গা দেখার জন্য ভুটানের সংস্কৃতি মন্ত্রক থেকে স্পেশাল পারমিট করতে হয়। বিশেষ অনুমতিক্রমে অবশ্য অনেক সময় কলকাতায় ভুটান দূতাবাস থেকে পারমিট দেওয়া হয়। সরকারি সূত্রের খবর, ব্যবসা এবং কাজকর্ম ছাড়া কেবলমাত্র প্রতিদিন সড়কপথে ৬০০ থেকে ৭০০ ভারতীয় ভুটান যাচ্ছেন। বিমানে যাতায়াতকারীর সংখ্যাও আছে। সে জন্য মূলত জয়গাঁ থেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করা হয়। ওই গাড়ির চালকেরা ভুটানের এলাকাগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এই ধরনের ১৩০টি গাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া ভুটানে যাওয়ার জন্য শিলিগুড়িতে হাতে গোনা কিছু গাড়ি রয়েছে। ওই নতুন নিয়মের জেরে গাড়ি পাওয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে পরিবহণ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন। জয়গাঁর পরিবহণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সভাপতি সুরেশ ঠাকুরি বলেন, “বহু গাড়ি চালক এবং গাড়ির মালিক ভুটানের উপর নির্ভরশীল। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ‘পারমিট’ তৈরি করে যে কোনও সময় ভুটানে যাতায়াত করা যেত। নয়া নিয়মে সমস্যা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া শনিবার ও রবিবার ভারতীয় অভিবাসন দফতর বন্ধ থাকাতেও সমস্যা হচ্ছে।” এই ব্যাপারে ভুটানের ফুন্টশেলিং অভিবাসন দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সাঙে তেনজিং অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

First Page Bidesh Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.