খবর এক মুঠো
মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন নসিপুর রাজবাড়ি বর্তমানে অবহেলিত ও ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে। যে রাজবাড়ির ঝুলনযাত্রা ও রথযাত্রাকে ঘিরে মুর্শিদাবাদ এবং আশপাশের জেলার সংস্কৃতির পাশাপাশি সামাজিক মেলবন্ধন তৈরি হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের এ রকম একটি ঐতিহাসিক রাজবাড়ি অবহেলার শিকার। অবিলম্বে ওই পুরাকীর্তির সংস্কার করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

পশ্চিমবঙ্গে বহু টেরাকোটার অলঙ্করণ সমৃদ্ধ প্রাচীন নবরত্ন মন্দির রয়েছে। বাংলার আর্দ্র আবহাওয়া এবং সামুদ্রিক লবণাক্ত বায়ুর প্রভাবে পোড়া ইটের তৈরি এই সব মন্দির ক্রমশ ক্ষয় হচ্ছে। মূল মন্দিরও প্রাচীনত্বের কারণে জরাগ্রস্ত। দেখভালের অভাবে মন্দিরের গায়ে অজস্র আগাছার দাপট। দু’শো বছরের প্রাচীন এ রকমই নবরত্ন মন্দির টেরাকোটা ভাস্কর্য সমৃদ্ধ হয়ে টিকে রয়েছে এগরার কাছে আলংগিরি গ্রামে। টেরাকোটা ফলকে রাম-রাবণের যুদ্ধ, কৃষ্ণলীলা, চণ্ডীমঙ্গল-সহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এগরা থেকে প্রায় ১২-১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং দিঘা সমুদ্র সৈকত থেকে এর দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। এটি পারিবারিক মন্দির। কিন্তু এখানে বছরভর অনুষ্ঠানে ২৫-৩০ টি গ্রামের মানুষ যোগ দেন। মন্দিরটি এগরা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার গর্ব। মন্দিরটি দেখে গিয়েছেন ডেভিড ম্যাক্কাচ্চন, তারাপদ সাঁতরা, হিতেশরঞ্জন সান্যালের মতো বহু পুরাতত্ত্বপ্রেমী ও মন্দির গবেষক।

ভারতের রেল মানচিত্রে জলপাইগুড়ি ও ময়নাগুড়ির মধ্যবর্তী ছোট শহর দোমহানি ছিল অন্যতম। রেলের ইঞ্জিন তৈরি করতে সাহায্য করতো এখানকার রেলইঞ্জিন কারখানা। রেলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দফতরও ছিল এখানে। ১৯৬৮-র বিধ্বংসী বন্যায় দোমহানির সেই ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ এখানে পুনরায় কোনও দফতর বা কারখানা চালু করার চেষ্টা করেনি। উল্টে রেলের যাবতীয় দফতর এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে দোমহানি আজ অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। এখানকার আর পি এফ ট্রেনিং সেন্টারটি প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে আছে। আগে অন্য রাজ্য থেকে রেলকর্মীরা এসে প্রশিক্ষণ নিতেন। রেলকর্মচারী আবাসন আজ বেদখল। ছিল রেলওয়ে হাসপাতাল। যেখানে এলাকাবাসীও চিকিৎসা পরিষেবা পেতেন। রেলের কারখানাকে ঘিরে দোমহানি এবং সংলগ্ন শহরগুলির ব্যবসাবাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসার উন্নতি হয়েছিল। বন্যা ধ্বংস না করলে আজও হয়তো দোমহানি ভারতীয় রেলের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হিসেবে গণ্য হত। সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা করলে দোমহানি অতীত ঐতিহ্য ফিরে পাবে।

লন্ডনে নিলাম করা হল গুলিবিদ্ধ মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর রক্তমাখা ঘাস-মাটি-সহ বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন। সব মিলিয়ে দাম উঠেছে এক লক্ষ পাউন্ড। উত্তর লন্ডনের একটি নিলাম কেন্দ্রে আজ এই নিলাম হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর যে মাটিতে গাঁধী লুটিয়ে পড়েছিলেন, রক্তের ছিটে লাগা সেই ঘাস-মাটি ১০,০০০ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে। নিলাম কেন্দ্রের কর্ণধার রিচার্ড ওয়েস্টউড ব্রুক্স বলেন, পৃথিবী জুড়ে গাঁধীর অনুরাগীরা রয়েছেন। তাঁদের কাছে ওই মাটি খুবই পবিত্র। ১৯৩০ সালে লন্ডনে আইন পড়ার সময় যে চশমা গাঁধী ব্যবহার করতেন, ৩৪ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে সেই চশমা, তার খাপ ও চশমা পরিষ্কার করার রুমাল। চশমাটি গাঁধীকে তাঁর এক গ্লস্টার নিবাসী বন্ধু উপহার দিয়েছিলেন। ২৭ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে একটি ফোল্ডিং চরকা যা গাঁধী ১৯৩০ সালে লন্ডনে নিয়ে এসেছিলেন। এ ছাড়া কিছু পোস্ট কার্ড ও চিঠিও নিলাম হয়।

১২ ও ১৩ মে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালন করল দুবাই মিউনিসিপ্যালিটির পরিবেশ দফতর। এ বছরের থিম ছিল ‘মাইগ্রেটরি বার্ডস অ্যান্ড পিপল: টুগেদার থ্রু টাইম’। ২০০৬ সালে এই বিশেষ দিনটি প্রথম পালন করা হয়। সারা বিশ্বে পরিযায়ী পাখিদের সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই এই দিনটি পালন করা হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ সংস্থার অধীনে আফ্রিকান-ইউরেশিয়ান মাইগ্রেটরি ওয়াটার বার্ড এগ্রিমেন্ট (এইডব্লিউএ) ও কনভেনশন অন মাইগ্রেটরি স্পিসিস(সিএমএস)-এর উদ্যোগে প্রতি বছর পালন করা হয় এই দিনটি।

নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন তিমিকুল। সমুদ্রে যাতায়াতকারী জাহাজের প্রপেলারের শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে তিমিদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সমান হওয়ায় তারা যোগাযোগ সমস্যায় পড়েছে বলে দাবি জানালেন একদল বিজ্ঞানী। সম্প্রতি কানাডার বে অফ ফান্ডিতে তিমিদের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, জাহাজ চলাচলের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এদের ‘স্ট্রেস হরমোন’ ক্ষরণের পরিমাণ। এর ফলে তিমির সংখ্যার উপর কোনও প্রভাব পড়ছে কি না তাও খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

গত তিন বছরে অসমে ৩০৪টি গন্ডার বেড়েছে। রাজ্য জুড়ে গন্ডার সুমারি সম্প্রতি শেষ হয়েছে। ২০০ জন বনকর্মী ও পশুপ্রেমী এই গন্ডার গণনার কাজে জড়িয়ে ছিলেন। এ কাজে লাগানো হয় ৩৪টি হাতি। নেতৃত্ব দেন রাজ্যের মুখ্য বনপাল এস পি সিংহ। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মোতাবেক কাজিরাঙায় গন্ডারের সংখ্যা দাঁড়াল ২২৯০টি। ওরাংয়ে ১০০টি, পবিতরায় ৯৩টি ও মানসে ২২টি গন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে মানসের গন্ডারগুলি কাজিরাঙা ও পবিতরা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে বাইসনের সংখ্যা কমাতে ভিন্ রাজ্যে ওই বন্যপ্রাণীদের স্থানান্তরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া, বক্সা, গরুমারা সহ বিভিন্ন বনাঞ্চলে বাইসনের সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এতে মাঝেমধ্যেই জঙ্গল থেকে বাইসন লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ভিন্ রাজ্যের বনাঞ্চলে বাইসন পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন বন কর্তারা। কোচবিহার নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার স্টাডি গ্রুপের সম্পাদক অরুপ গুহ বলেন, “বাইসনের হৃদযন্ত্র দুর্বল। এতে তাদের বাইরে পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ। এর বদলে জঙ্গলে মাংসাসী প্রাণীদের সংখ্যা বাড়াতে পারলে বাইসনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।” উত্তরবঙ্গের গরুমারায় সাত শতাধিক এবং জলদাপাড়ায় প্রায় দেড় হাজার বাইসন রয়েছে। অন্য বনাঞ্চল মিলিয়ে ওই সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। বছর পাঁচেক আগেও সংখ্যাটি ছিল অর্ধেক। বনমন্ত্রী জানান, বাইসনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জঙ্গলে সমস্যা হচ্ছে। ঘাসের রক্ষনাবেক্ষণে বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) সীতাংশু বিকাশ মণ্ডল বলেন, “গত ৫ বছরে উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে বাইসন সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে।”

প্রাচীন কালে উত্তর দিনাজপুর জেলার বাহারাইল বরেন্দ্রভূমির অন্তর্গত ছিল। সেই সময় বরেন্দ্রভূমির অধিবাসীরা বিষ্ণু, গণেশ, সূর্য, শিব ও শক্তির উপাসনা করতেন। বাহারাইলে বর্তমানে পূজিত গণেশ মূর্তিটি সেই সময়ের। ও পার বাংলার পীরগঞ্জ থেকেও বহু মানুষ এসে এই গণেশকে পুজো দিতেন। স্থানীয় লোকদের কাছে ইনি ‘বাবা’ নামে পরিচিত ছিলেন। কিংবদন্তি, পঞ্চদশ শতাব্দীতে কালাপাহাড় এই মূর্তিটির হাত, কান, নাক ভেঙে দিয়ে এঁর পুজো বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। গ্রামবাসীরা ভয় পেয়ে যায়। সকলে মিলে মূর্তিটি পুকুরের জলে ফেলে দেন। তখন তাঁদের মধ্যে অনেকে ‘বাবা হারাইল’ বলে হাহাকার করতেন। সম্ভবত সে কারণে গ্রামটি বাহারাইল বলে পরিচিত হয়। এর বহু পরে ডালিম গাঁয়ের এক মাড়োয়ারি ভদ্রলোক স্বপ্নাদেশ পান। তিনি ওই গণেশ মূর্তিটি হাতিডোবা পুকুর থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে বাধা পান। স্থানীয় লোকজন কিছুতেই মূর্তিটি নিয়ে যেতে দেবে না। অনেক বাকবিতণ্ডার পরে ঠিক হয় মূর্তিটিকে বাহারাইল দুর্গামন্দিরে এনে প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই মতো কাজ হয়। স্থানীয় অধিবাসীদের ধারণা, গণেশ সকল কার্যের সিদ্ধিদাতা। তাঁকে মনেপ্রাণে ডাকলে মনোবাসনা পূর্ণ হবে। তাই গ্রামবাসীদের উদ্যোগে প্রতি বছর দুর্গোৎসব ও মাঘ মাসের বরোদা চতুর্থীতে এই গণেশের পুজো মহা ধুমধামের সঙ্গে করা হয়।

সীমান্তের দু’পারেই বাঙালি। একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে পেরে যারপরনাই খুশি তাঁরা। নববর্ষের প্রথম দিনে প্রতি বছর এই দৃশ্যেরই সাক্ষী থাকে পঞ্চগড়ের অমরখানায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। দেশ বিভাগের পরে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন সীমান্তের দু’পাশের অনেকেই। টাকার অভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করাতে পারেন না অনেকে। অমরখানা সীমান্তে নববর্ষের দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন তাঁরা। বাংলাদেশের আয়ুব আলি, জহিরুল ইসলাম, ভারতের তাঞ্জিনা বেগম, চঞ্চলা রানিরা ও-পারের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান সে দিনই। মিলন মেলা চালু রাখতে বিএসএফ ও বিজিবিকে অনুরোধ জানায় স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলিও।