গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • পোলবা |
নাবালিকার ধর্ষণ ঘিরে রাজনীতির জল আরও ঘোলা হল। মঙ্গলবার কামদেবপুর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক এবং পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে হুমকি এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জড়ো হওয়ার অভিযোগ দায়ের করলেন। বিধায়কের পাল্টা অভিযোগ, কংগ্রেস নেতাদের উস্কানিতে গ্রামবাসী মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। গত শুক্রবার পোলবার একটি পানশালার কাছে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরদিন গ্রামবাসীদের অনেকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করা চলবে না। রবিবার কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে বাধাও দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। তারপর ক্রমশ বদলে যায় পরিস্থিতি। সোমবার অধীর চৌধুরী-সহ বেশ কিছু কংগ্রেস নেতা-সমর্থক গ্রামে ঢুকলে গ্রামবাসী আর বাধা দেননি।
মঙ্গলবার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আর পাঁচটা ধর্ষণের ঘটনার মতোই কামদেবপুরের ঘটনা নিয়ে নেতাদের মধ্যে পুরোদস্তুর চাপানউতোর চলছে। গ্রামেরই এক তরুণ বলেন, “আমরা যা চাইনি, এখানে তাই হচ্ছে। কাদা ছোড়াছুড়ি করছে দলগুলো।” গ্রামবাসীদের অনেকের বক্তব্য, তাঁরা চাইছিলেন নির্যাতিতা মেয়েটি তার বাড়িতে বাবা-মায়ের কাছে শান্তিতে থাক। মাসখানেক পরে ফের স্কুলে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করতেন গ্রামের বাসিন্দারাই। “কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে মেয়েটিকে আত্মীয়দের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই,” আক্ষেপ ওই তরুণের। পোলবার ঘটনার পর থেকে পরপর ক’দিন কামদেবপুরে গিয়ে দেখা গেল, নেতাদের দাপটের সামনে ‘আমাদের গ্রামের মেয়ের সমস্যা আমরাই মেটাব’ এই অবস্থান থেকে অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছেন গ্রামবাসীরা। শনিবার যে মাটির দাওয়া থেকে রাজনীতির লোকেদের গ্রামে ঢুকতে না দেওয়ার জেদ দেখিয়ে ছিলেন গ্রামবাসীরা। সেই উঠোনেই সোমবার বিকেলে কংগ্রেস নেতাদের জন্য চেয়ার বিছানো ছিল। সোমবার সকালেও গ্রামের কংগ্রেস সমর্থকরা রাজনৈতিক দলের পতাকা টাঙাতে গেলে আপত্তি জানিয়েছিলেন মহিলারা। তাঁদেরই কারও কারও পরিবারের সদস্যরা তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআরে সই করলেন। পোলবা থানায় দায়ের-করা অভিযোগে তাঁদের বক্তব্য, রবিবার বিধায়ক অসিত মজুমদার-সহ বেশ কিছু তৃণমূল নেতা পোলবা থানার পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেন এবং মারধর করেন। পুলিশের কাছে নিরাপত্তার দাবি করেছেন তাঁরা।
রাজনৈতিক চাপান-উতোরের চাইতে গ্রামবাসীরা চাইছেন, স্কুলের পথে দু’দুটো পানশালা বন্ধ হোক। কামদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা মানা সিংহ, শ্যামলী সাউ, মমতা ওরাওঁদের প্রশ্ন, “পঞ্চায়েত কী ভাবে স্কুলের কাছাকাছি ওই দু’টি পানশালার লাইসেন্স দিল?” নির্যাতিতা ছাত্রীর স্কুলের দিদিমনিরাও জানান, তাঁরা আগেই এ বিষয়ে বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। এখন তাঁদের আর্জি, সকাল এবং বিকেলে পড়ুয়ারা ওই পথে ফেরার সময়ে যেন পুলিশের একটি টহলদারি ভ্যান ওই রাস্তায় থাকে। বিধায়ক অসিত মজুমদার বলেন, “আমরা জেলাশাসককে বলে ওই পানশালা বন্ধ করে দিয়েছি।”
বিধায়কের বিরুদ্ধে ৩৩জন গ্রামবাসীর ওই অভিযোগ বিষয়ে হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “ওই ঘটনার মামলা আগেই পুলিশ শুরু করেছে। তদন্ত চলছে। সব অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ নাথ বলেন,“গ্রাম না-চাইলে নারী নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজনীতির লোকেদের মাথা না গলানোই ভাল।” বিজেপি জেলা সহ-সভাপতি আইনজীবী স্বপন পাল বলেন, “নেতারা গেলে শাসকদলের উপর চাপ তৈরি হয়। ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত করতে বাধ্য হয় শাসকদল।” |