|
|
|
|
১৮ বিধায়ককে নিয়ে পথে নেমে লড়াই লালুর |
স্বপন সরকার • পটনা
২৫ ফেব্রুয়ারি |
নীতীশকুমারের সৌজন্যে লালুপ্রসাদ আজ ফের রাস্তায়। তাঁর দলের ২২ জন বিধায়কের মধ্যে ১৩ জনকে ভাঙিয়ে নেওয়ার অভিযোগকে হাতিয়ার করে ভোটের আগে আরজেডি-প্রধান বিহার জুড়ে নীতীশের বিরুদ্ধে নতুন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হলেন। দল ত্যাগ করতে চাওয়া ১৩ বিধায়কের মধ্যে ৯ জনকে সঙ্গে নিয়ে লালুপ্রসাদ আজ বিধানসভা অভিযান করেন। যান রাজ্যপালের কাছেও। তবে অনমনীয় নীতীশও। লালুর অভিযোগ প্রসঙ্গে আজ দিল্লিতে নীতীশ বলেন, “আমি দল ভাঙাইনি। তবে আরজেডি বিধায়করা দল ছেড়ে জেডিইউ-এ আসতে চাইলে তাঁদের স্বাগতই জানাব।”
আরজেডি পরিষদীয় দলে ভাঙনের খবর পেয়ে আজ সকালে দিল্লি থেকে পটনায় এসে পৌঁছন লালুপ্রসাদ। অ্যানে মার্গের বাড়িতে দলের ২২ জন বিধায়ককে আগেই ডেকে পাঠানো হয়েছিল। একে একে হাজির হন ১৮ জন বিধায়ক। এর মধ্যে ছিলেন ‘দল ছেড়ে যাওয়া’ ৯ বিধায়কও। লালুর উদ্দেশ্য ছিল, বিতর্কিত ১৩ জন বিধায়কের মধ্যে প্রকৃত পক্ষে কত জন তাঁর সঙ্গে আছেন তা দেখা ও প্রকাশ্যে সেটা জানানো। ওই ৯ জন বিধায়কই এ দিন বিধানসভার স্পিকারের উদ্দেশে আরজেডি-তে থাকার অঙ্গীকারপত্র জমা দিতে চান। তবে স্পিকারের অনুপস্থিতিতে বিধানসভার সচিবের সামনে সশরীরে হাজির থেকে আলাদা আলাদা ন’টি চিঠি তাঁরা জমা দেন। ওই ৯ বিধায়কই সচিবকে জানান, ‘‘গত কাল দল ছাড়ার কথা জানিয়ে সই করা যে চিঠি বিধানসভার স্পিকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে, তার প্রতিবাদেই এই প্রতিবাদপত্র আমি নিজের হাতে লিখে জমা দিচ্ছি।” |
|
দল ভাঙানোর অভিযোগ নিয়ে বিধানসভা থেকে রাজভবনের পথে লালুপ্রসাদ। পটনায়। —নিজস্ব চিত্র। |
আজ বেলা দুটো নাগাদ লালুপ্রসাদ তাঁর বাড়ি থেকে বিতর্কিত ৯ বিধায়ক এবং দলের অন্য নেতাদের নিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার হেঁটে বিধানসভায় পৌঁছন। মিছিল নিয়ে বিধানসভায় যাওয়ার সময় স্পিকার উদয়নারায়ণ চৌধুরির সরকারি বাসভবনের সামনে গিয়ে স্লোগান দেন দলীয় কর্মীরা। কিছু সমর্থক উত্তেজিত হয়ে স্পিকারের বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও ছোড়ে। জটিলতা না বাড়াতে লালু নিজেই এগিয়ে এসে তাঁদের থামান। আজ যে চার বিধায়ক পরিষদীয় দলের বৈঠকে আসেননি, তাঁদের ব্যাপারে বিরোধী দলনেতা, আরজেডি-র আব্দুল বারি সিদ্দিকি বলেন, “চার জনের সঙ্গে আমি কথা বলব। তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে আমি জানতে চাইব।”
লালুপ্রসাদ আজ অভিযোগ করেন, “বিধানসভার স্পিকার উদয়নারায়ণ চৌধুরি এবং মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমার চক্রান্ত করে তাঁর দলকে বেইজ্জত করতে চাইছেন। নীতীশকুমার দল ভাঙানোর খেলায় নেমেছেন।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “নীতীশের এই চক্রান্তকে জনগণের সামনে নিয়ে আসতে সারা বিহারের মানুষের কাছে যাব। গণতন্ত্রকে কী ভাবে গলা টিপে মারতে চাইছে নীতীশ তা তুলে ধরব।” তাঁর অভিযোগ, “নীতীশ মাকড়শার জাল বিছিয়েছে। লড়াই এখান থেকে শুরু হল। এত সহজে আমি ছাড়ব না।” বিধানসভার অধ্যক্ষ উদয়নারায়ণ চৌধুরী এই ঘটনা সম্পর্কে বিশদে কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “বিধায়করা যদি লিখিত দেন, তা হলে সেটি আমি বিচার করব।”
প্রশ্ন উঠেছে, বিধানসভার স্পিকার কাল যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ১৩ জন বিধায়ককে আলাদা গোষ্ঠীর স্বীকৃতি দিয়েছেন, আইন অনুযায়ী তা করা যায় কি?
আব্দুল বারি সিদ্দিকি এ দিন বিধানসভার সচিবকে বলেন, “দুই-তৃতীয়াংশ বিধায়ক আমাদের দল ছাড়েনি। কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। তাঁরা এখনও আমাদের দলের বিধায়ক। ফলে তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট দলের হাতে।” তাঁর অভিযোগ, “এক জন স্পিকার সংশ্লিষ্ট বিধায়কদের সঙ্গে কথা না বলে তড়িঘড়ি এত বড় সিদ্ধান্ত নিলেন! সাংবিধানিক আইন মেনে স্পিকার এটা পারেন না।”
লালুপ্রসাদ আজ রাজ্যপাল ডি ওয়াই পাটিলের সঙ্গেও দেখা করেন। বিধানসভা থেকে লালু রাজভবনে যান রিকশায় চেপে। সেখান রাজ্যপালের সামনে লালু বিতর্কিত ৯ বিধায়ককে হাজির করেন। রাজ্যপাল তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক লালু রাজভবনে ছিলেন। |
|
|
|
|
|