হাওড়া ব্রিজের দক্ষিণে গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যায়ন প্রায় শেষের দিকে। এ বার উত্তরে বাগবাজার, নিমতলা, আহিরীটোলা ও কাশীপুর ঘাট বরাবর গঙ্গার পাড় সাজানোর পরিকল্পনা শুরু করল সরকার।
দক্ষিণের মতো উত্তর কলকাতার গঙ্গাপাড় মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রিন্সেপ ঘাট থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার গঙ্গাপাড় ইতিমধ্যেই সেজে উঠেছে নব কলেবরে। সম্প্রতি তার একটা বড় অংশের উদ্বোধনও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তখনই সরকারি অফিসারদের তিনি জানিয়ে দেন, এ বার উত্তর কলকাতার গঙ্গাপাড় সাজিয়ে তোলার কাজে হাত দিতে হবে। |
মমতার নির্দেশ পেয়েই কেএমডিএ, পুরসভা ও পর্যটন দফতরের পদস্থ অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। সেখানেই ওই পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। কেএমডিএ-র এক পদস্থ অফিসার জানান, হাওড়া ব্রিজের উত্তরে গঙ্গাপাড়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ কিলোমিটার। ওই পথে অন্তত ১০টি ঘাট নতুন ভাবে সাজিয়ে তুলতে হবে। তা ছাড়া সংস্কার দরকার কাশীমিত্র শ্মশান ঘাটেরও। একই সঙ্গে গঙ্গাপাড়ে যে রাস্তা রয়েছে তা-ও নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। এ সবের জন্য প্রাথমিক ভাবে প্রায় ১৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
কেএমডিএ-র এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, গঙ্গাপাড় জুড়ে তৈরি হবে ১৫ মিটার চওড়া ডেকস্ল্যাব বা ভাসমান চাতাল। যেমনটি হয়েছে আর্মেনিয়ান ঘাটে। পরে তা সাজানো হবে রকমারি আলোয়। চাতালের পাশেও থাকবে চলাচলের রাস্তা। পর্যটকদের বসার জন্য থাকবে কংক্রিটের বেঞ্চ। আর গোটা এলাকা ভরা থাকবে গাছগাছালিতে। ঠিক যেমনটি এখন হয়েছে প্রিন্সেপ ঘাট, বাজেকদমতলা, বাবুঘাট থেকে মিলেনিয়াম পার্ক ও আর্মেনিয়ান ঘাট চত্বর জুড়ে। এই মূহুর্তে যা কলকাতার অন্যতম এক আকর্ষণীয় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। |
তবে কলকাতা পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানান, উত্তর কলকাতার গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যায়নের কাজটা খুব সহজ নয়। কারণ ওই এলাকা দখল করে বসে রয়েছেন অনেকেই। তাঁদের সরিয়ে ওই পথ খালি করে কাজ শুরু করতে হবে। এ ছাড়া, গঙ্গার স্রোতে বেশ কিছু পাড় এলাকা ভেঙে গিয়েছে। ক্রমাগত নোংরা-আবর্জনা জমে রীতিমতো ভয়ঙ্কর অবস্থায় রয়েছে এলাকাগুলি। সম্প্রতি পুরসভায় এ নিয়ে ফের একটি বৈঠক হয়েছে। পুরো পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে। প্রকল্পের দেখভালে একটি কমিটিও গড়া হয়েছে।
ওই অফিসার জানিয়েছেন, আপাতত ঠিক হয়েছে জাতীয় গঙ্গা নদী অববাহিকা সংস্থার (ন্যাশনাল গঙ্গা রিভার বেসিন অথরিটি) কাছে প্রকল্পের পূর্ণ রিপোর্ট (ডিপিআর) পাঠানো হবে। ওদের অনুমোদন মিললেই কাজে হাত দেওয়া হবে। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৭০ শতাংশ টাকা বরাদ্দের জন্য এনজিআরবিএ-র সাহায্য নেওয়া হবে। বাকি ৩০ শতাংশ দেবে রাজ্য সরকার। কোন সংস্থার হাতে ডিপিআর বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হবে, টেন্ডারের মাধ্যমেই তা বাছা হবে বলে জানা গিয়েছে। মাস তিনেকের মধ্যে সেই কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ওই কমিটির এক সদস্য।
|