যন্ত্র মেলেনি, প্রশিক্ষণ নিয়েও চিন্তায় পশ্চিমের হস্তশিল্পীরা
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশিক্ষণ শেষে প্রয়োজনীয় যন্ত্র দিতে পারেনি প্রশাসন। পারেনি ব্যাঙ্ক ঋণেরও ব্যবস্থা করতে। ফলে গ্রামীণ শিল্পীদের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া অর্থহীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ন্যাশনাল ফাইবার মিশন প্রকল্পের এমনই বেহাল দশা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়।
প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কেন প্রশিক্ষণ দেওয়া হল?
বাঁশ থেকে নানা ধরনের আসবাব তৈরির প্রশিক্ষণ নেওয়া রাধেশ্যাম বেহারার কথায়, “প্রায় এক বছর হতে চলল প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখনও কোনও যন্ত্র পাইনি। তাহলে প্রশিক্ষণ নিয়ে কী লাভ হল। যে সব আধুনিক কাজকর্ম শিখেছিলাম তা তো ভুলেই যাব।” সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে জেলা শিল্প কেন্দ্রের আধিকারিক প্রহ্লাদ হাজরা বলেন, “দ্রুত যন্ত্রপাতি দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে।” প্রশিক্ষণের পর যন্ত্র দিতে দেরি হওয়ায় শিল্পীরা শেখা বিষয়গুলি ভুলে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে প্রশাসনিক কর্তাদেরও। তাই একটি ‘রিফ্রেশার কোর্স’-এর ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রহ্লাদবাবু জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “প্রথমের দিক বলে কিছু সমস্যা থেকে গিয়েছে। পরবর্তীকালে যাতে প্রশিক্ষণ শেষেই যন্ত্র দেওয়া যায় ও ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা করা যায় সে ব্যাপারে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশিক্ষণের সময় শিল্পীদের তৈরি করা আসবাবপত্র। —নিজস্ব চিত্র।
ন্যাশনাল ফাইবার মিশন প্রকল্পে যাঁরা পুরুষানুক্রমে বাঁশ, মাদুর, সাবাই-সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান থেকে প্রথাগত পদ্ধতিতে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করে থাকেন, সেই সমস্ত গ্রামীণ শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা। শিল্পের প্রথাগত পদ্ধতিকে আধুনিক করে তুলতেই এই প্রশিক্ষণ। এছাড়া উৎপাদিত শিল্পদ্রব্যগুলি শহরের শৌখিন মানুষের কাছেও আরও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষও ছিল। চার বছরের প্রকল্পটি ২০১২-১৩ অর্থবর্ষ থেকে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া ১১টি জেলায় (বিআরজিএফ জেলা) শুরু হয়েছিল। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই প্রকল্পে ২৯ হাজার পরিবারের ২৯ হাজার শিল্পীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তার জন্য ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। দু’বছর শেষ হতে চলল, কাজ কতটা এগিয়েছে? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ১ হাজার শিল্পীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। ৩০ জন বাদে অবশ্য সকলকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে ১৬৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছর শেষ হতে আর এক মাস বাকি। তবে এখনও পর্যন্ত সকলের প্রশিক্ষণ শুরুই করা যায়নি।
জেলার সবং, পিংলা, নারায়ণগড়, দাঁতন ১ ও ২, বিনপুর ১ ও ২ এবং জামবনি ব্লকের মূলত, মাদুর, বাঁশ ও সাবাইয়ের উপরেই গ্রামীণ শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। যাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষে সেই সমস্ত যন্ত্রও দেওয়ার কথা। যাতে কাঁচামাল পেতে অসুবিধে না হয় সে জন্য ব্যাঙ্ক ঋ
ণের ব্যবস্থা করে দেওয়াও প্রকল্পের অঙ্গ। প্রশিক্ষণ নিয়ে শিল্পীরা নিজের বাড়িতে বসে কাজ করতে পারেন। এছাড়াও তাঁরা যাতে দলবদ্ধভাবে এক জায়গায় কাজ করতে পারে সে জন্য প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় (যে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে) ‘কমিউনিটি প্রোডাকশন’ তৈরি করা, তার উপরে কয়েকটি ব্লক নিয়ে কমিউনিটি ফেসিলিটেশন সেন্টার তৈরি করা ও ১১টি ব্লকের জন্য ন্যাচারাল পার্কও তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়। পার্কটি হওয়ার কথা খড়্গপুরে বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে। তার জন্য ২৫ একর জমি দেখা রয়েছে। সরকার ২৫ কোটি টাকাও মঞ্জুরও করেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। এমনকী পঞ্চায়েত স্তরেও পরিকাঠামো তৈরি করা যায়নি। সবে মাত্র ৬টি পঞ্চায়েত এলাকায় জমি পাওয়া গিয়েছে। কাজের এই ধীর গতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিল্পীরা। সবংয়ের মাদুর শিল্পী পার্থ মাইতি, দাঁতনের বাঁশশিল্পী রাম টুডুরা বলেন, “বুঝতে পারছি না সব পরিকাঠামো তৈরি করতে কতদিন লাগবে। তা হলে প্রশিক্ষণ নিয়ে লাভ কী?”
প্রশিক্ষণ অবশ্য ভাল হয়েছে। গুয়াহাটি থেকে শিল্পী নিয়ে এসে বাঁশ দিয়ে আসবাব তৈরি করা হয়েছে। তার জন্য খড়্গপুর আইআইটি-র কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতির সাহায্যে বাঁশ দিয়ে তৈরি খাট, টি-টেবিল, চেয়ার-সহ যে ধরনের আসবাব তৈরি হয়েছে তা এক কথায় চোখ ধাঁধানো। কিন্তু শুধু আসবাবপত্র তৈরি করলেই তো হবে না। তা বিপনণের ব্যবস্থাও করতে হবে। জেলা শিল্প কেন্দ্র আধিকারিক বলেন, “এ বার দ্রুত গতিতে প্রশিক্ষণের কাজ শেষ করার পাশাপাশি পরিকাঠামো তৈরি ও যন্ত্রপাতি দেওয়ারও পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বিপণনের ব্যাপারেও জেলা কেন্দ্রে যাতে একটি দোকান খোলা যায় সে ব্যাপারেও পরিকল্পনা রয়েছে।” তবে প্রকল্পের কাজ যে ভাবে ঢিমেতালে চলছে, তাতে শিল্পীরা হতাশ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.