ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সারানোর আশ্বাস বৈঠকে
ন্ধ্যা সওয়া সাতটা নাগাদ পরপর তিনটে গাড়ি এসে থামল কাটোয়া ২ ব্লকের মাখালতোড় স্কুল মাঠে। গাড়ি থেকে নেমে এলেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন, অতিরিক্ত জেলাশাসক অমিত দত্ত, কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার ও স্থানীয় বিডিও শিবাশিস সরকার। স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা আগে থেকেই হাজির ছিলেন মাঠে। হাতের কাছে এতজন আধিকারিককে পেয়ে একের পর এক সমস্যা, প্রশ্নে তাঁদের জর্জরিত করে তুললেন গ্রামবাসীরা। কর্তারাও হাসিমুখেই সমাধান বাতলে দিলেন।
সন্ধ্যায় চলছে বৈঠক।—নিজস্ব চিত্র।
প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক সমস্যা জানতে ও তাঁদের জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটাতে পুজোর আগে থেকেই বিভিন্ন গ্রামে রাত কাটাচ্ছেন বর্ধমানের প্রশাসনিক কর্তারা। দিনে কাজের অসুবিধা না করে রাতেই মানুষের সঙ্গে কথা বলচেন তাঁরা। শুক্রবার রাতে কাটোয়ার মাখালতোড় উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ভাঙন-বিধ্বস্ত অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ শোনেন কর্তারা। সভার শুরুতেই এলাকার পরিস্থিতি জানতে চান জেলাশাসক। ম্যারাপের তলায় বসে থাকা গ্রামবাসীরা প্রথমে একটু থমকে গেলেও পরে অভয় পেয়ে মুখ খোলেন। জনপ্রতিনিধিরাও তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
২০০৫ সালে ভাগীরথীর ভাঙনে অগ্রদ্বীপ-বেথুয়াডহরী রাজ্য সড়কের একটা বড় অংশ তলিয়ে যায়। ওই রাস্তা তৈরির জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত চাষিদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি এক লক্ষ টাকা দামে জমি কিনে নেয়। বিষয়টি জানিয়ে ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নিতাই মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের পক্ষে ওই রাস্তা তৈরি করা সম্ভব নয়। আমরা চাই পূর্ত দফতর ওই রাস্তা করুক। সে জন্য আমরা ওই জমি পূর্ত দফতরের হাতে তুলে দিতে চাই।” জেলাশাসক সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ত দফতরের কাটোয়ার আধিকারিকদের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে কথা বলার জন্য মহকুমাশাসককে দায়িত্ব দেন। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, ভাগীরথীতে তলিয়ে যাওয়ার মুখে রয়েছে এমন জমি, কিংবা জমিতে বালি পড়ে রয়েছে, সেই সব জমি বাস্তবে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ হাজার টাকায়, অথচ রেজিস্ট্রি করার সময়ে ওই জমির সরকারি দাম হচ্ছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। ফলে বেশিরভাগ জমিই মৌখিক ভাবে কেনা-বেচা চলছে, রেজিস্ট্রি হচ্ছে না। ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অভিযোগ শোনার পরেই এসডিও ফোন করেন মহকুমার নিবন্ধকরণ আধিকারিককে। মহকুমাশাসক গ্রামবাসীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মাখালতোড় গ্রামের আকবর খান আবার অভিযোগে জানান, পাঁচ মাস ধরে সমাজকল্যাণ দফতরের বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না তিনি। অতিরিক্ত জেলাশাসক অমিত দত্ত বলেন, “আগামী মার্চ মাসে ওই টাকা পাওয়া যাবে।” বাসিন্দারাই জানান, অগ্রদ্বীপ ঘাট থেকে বর্ধমান বা কাটোয়া পর্যন্ত একসময় বেশ কয়েকটি বাস চলত। এখন সেখানে একটি বাসই ভরসা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির দাবি জানান তাঁরা। এ ছাড়াও রাস্তা, পানীয় জল, সেচের জলের সমস্যা, বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে পাঁচিল, বিদ্যুত্‌ সংযোগ না থাকাক কথা সভায় ওঠে। সমাধানের উপায়ও মোটামুটি বাতলে দেন আধিকারিকেরা।
সভায় এসেছিলেন কালিকাপুর গ্রামের অলিপ কুমার দাঁ। তাঁর আড়াই বছরের ছেলে অর্ক থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। প্রতি সপ্তাহে ‘এ পজিটিভ’ রক্তর প্রয়োজন তাঁর। হাতের কাছে জেলাশাসককে পেয়ে অলিপবাবু বলেন, “স্যার আর পেরে উঠছি না। কলকাতা-বর্ধমান-কাটোয়াতে রক্ত জোগাড় করতে খুব সমস্যা হচ্ছে।” সমস্যা শুনেই মহকুমাশাসককে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন জেলাশাসক। কোনও সমস্যা হলে তাঁকেও জানাতে বলেন। এছাড়া স্থানীয় একটি পাঠাগারের সমস্যা শুনে বিডিওকে পাঁচ হাজার টাকার বই কিনে দেওয়ার নির্দেশ দেন। গ্রামেই রাত কাটান এসডিও, বিডিও ও অন্যান্য প্রশাসনের আধিকারিকেরা। যাওয়ার আগে জেলাশাসক আশ্বাস দিয়ে যান, “অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। বাকি সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.