স্বামীকে মারধর করে অন্তঃসত্ত্বাকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার রাতে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের মঙ্গলদা গ্রাম থেকে পুলিশ মেঘনাদ ধীবর নামে বছর পঁচিশের ওই যুবককে ধরে। এ দিনই অভিযোগকারিণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে।
কাজের খোঁজে স্বামীর সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিলেন পুরুলিয়ার পাড়া থানার বামুনবাদ গ্রামের ওই মহিলা। অভিযোগ, ট্রেনে আলাপ হয় তিন যুবকের সঙ্গে। তারা কাজ খুঁজে দেওয়ার নামে তাঁদের বর্ধমানের কাঁকসার রাজবাঁধে নিয়ে আসে। স্টেশনে নেমে অটোয় খানিকটা যাওয়ার পরে এক জায়গায় দম্পতিকে নামায় তারা। তার পরে স্বামীকে মারধর করে তাঁকে গণধর্ষণ করে বলে কাঁকসা থানায় অভিযোগ করেন মহিলা। শনিবার দুর্গাপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তিনি ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে রাজি হননি। রবিবার অবশ্য সেই পরীক্ষা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। |
|
|
ধৃত মেঘনাদ ধীবর। |
চলছে ঘটনার পুনর্গঠন। |
|
পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের খোঁজে নেমে রাজবাঁধ স্টেশন থেকে জাতীয় সড়ক পর্যন্ত রাস্তার পাশের ব্যবসায়ী ও অটো চালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সূত্র মেলেনি। যেহেতু ওই যুবকেরা দম্পতির সঙ্গে জয়চণ্ডী পাহাড় স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেছিল, তাই তারা সেই এলাকার বাসিন্দা হতে পারে বলেও অনুমান করে পুলিশ। এর পরে পুলিশ বর্ধমানের এই সব এলাকায় নানা দুষ্কর্মে যে সব অভিযুক্তের বাড়ি পুরুলিয়ায়, তাদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়। পুরুলিয়ার পুলিশের সহযোগিতায় তাদের ছবি সংগ্রহ করে অভিযোগকারিণী ও তাঁর স্বামীকে দেখানো হলে তাঁরা এক জনকে চিহ্নিত করেন। এর পরেই রঘুনাথপুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে শনিবার রাতেই মঙ্গলদা গ্রাম থেকে মেঘনাদকে ধরে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। এ দিন সকালে রাজবাঁধে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠন করা হয়। ছিলেন ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা-সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে ধৃতের দশ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, অন্য দুই অভিযুক্তের পরিচয়ও জানা গিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই পুলিশ তা জানাতে চায়নি।
মেয়ের উপরে নির্যাতনের খবর পাওয়ার পরে পুরুলিয়ার বামুনবাদ গ্রামেই শ্বশুরবাড়ি ও বাপেরবাড়ি নির্যাতিতা মহিলার। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে তিনি বাপের বাড়িতেই ছিলেন বলে জানান তাঁর মা। বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “বৃহস্পতিবার জামাই এসে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার শুনি, জামাই কাজ খুঁজতে মেয়েকে নিয়ে বাইরে গিয়েছে। শরীরের এই অবস্থায় বাইরে গিয়েছে শুনে চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু স্বপ্নেও ভাবিনি, ওর সাথে এমন ঘটনা ঘটবে।” অভিযোগকারিণীর শাশুড়ি বলেন, “দিনমজুরের কাজ করি আমরা সবাই। কিন্তু প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায় না। কয়েক দিন ধরেই ছেলে বলছিল, বাইরে যাবে কাজ খুঁজতে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যেতে বারণ করেছিলাম। কথা শুনলে এমন হত না।” খবর পেয়ে শনিবারই দুর্গাপুরে পৌঁছন নির্যাতিতার শ্বশুর-সহ কয়েক জন আত্মীয়।
এ দিন বামুনবাদ গ্রামে যান কংগ্রেসের দুবড়া অঞ্চল সভাপতি রিজওয়ান আহমেদ। তিনি বলেন “দু’টি পরিবারের সঙ্গেই কথা বলেছি। আমরা ওদের পাশে আছি।” |