|
|
|
|
সংসদে থাকাই কি সব, জোর চর্চা উস্কে দিল রাজ্যের হাজিরা খাতা
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি
২২ ফেব্রুয়ারি |
প্রথম বার সংসদে এসে অনেকেই প্রবল উৎসাহে মাঠে নেমে পড়েছিলেন। প্রশ্ন করেছেন, বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। কেউ অন্য পেশা থেকে এসেছেন বলে সংসদে ঠায় বসে থেকে শেখার চেষ্টা করেছেন। আর কারও ধনুক ভাঙা পণ, গোলমালের জেরে সংসদ মুলতুবি হয়ে গেলে সই করবেন না। দৈনিক ভাতাও নেবেন না।
গত কাল ছিল বর্তমান লোকসভার শেষ অধিবেশন। হাজিরা খাতা বলছে, ৯৯ শতাংশ উপস্থিতির রেকর্ড গড়ে পশ্চিমবঙ্গের সাংসদদের শীর্ষে রইলেন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায় জঙ্গিপুরের সাংসদ পদ ছাড়ার পর সেই কেন্দ্র থেকেই ২০১২-র অক্টোবরে জিতে আসেন পুত্র অভিজিৎ। লোকসভায় খুব কমই গরহাজির থেকেছেন তিনি। দু’বার বিতর্কেও অংশ নিয়েছেন।
অভিজিৎ তা-ও উপনির্বাচনে জিতে এসেছিলেন। পুরো পাঁচ বছর হাজিরার হিসেব করলে রাজ্যের সাংসদদের মধ্যে প্রথম স্থান সিপিএমের শেখ সাইদুল হকের। বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ ছিলেন অধ্যাপক। কলেজেও ক্লাস কামাই হত না। লোকসভায় তাঁর হাজিরার হার ৯৭ শতাংশ। প্রথম বারের সাংসদ প্রথম থেকেই সক্রিয়। ২৫৮টি প্রশ্ন করেছেন। ৯৬ বার বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। সাইদুল বলেন, “আমাদের দলের নির্দেশই হল, সংসদের ভিতর ও বাইরের কাজকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। সংসদীয় রাজনীতি করব কিন্তু সেটাকে ব্যবহার করব না, তা হতে পারে না।”
অভিজিৎ ও সাইদুল যখন এমন দাপটে প্রথম দিকে রয়েছেন, তখন তৃণমূলের শুভেন্দু অধিকারীর স্থান একেবারে পিছনের সারিতে। তাঁর হাজিরা মাত্র ২৭ শতাংশ। কেন, বোঝালেন শুভেন্দু নিজেই। লোকসভায় ঢোকা বা বেরোনোর সময়ে সাংসদদের হাজিরা খাতায় সই করতে হয়। উপস্থিত থাকলে দু’হাজার টাকা দৈনিক ভাতা মেলে। শুভেন্দুর ব্যাখ্যা, তিনি বেরোনোর সময়েই সই করতেন। কারণ আগে তিনি দেখতেন, সে দিন সংসদ চলল কি না। যদি হট্টগোলের জেরে কোনও কাজ ছাড়াই অধিবেশন সারা দিনের জন্য মুলতুবি হয়ে যেত, তা হলে আর হাজিরার সই করতেন না শুভেন্দু। ভাতাও নিতেন না। পঞ্চদশ লোকসভা হট্টগোলে যত বেশি ভণ্ডুল হয়েছে, তেমন নজির আগে প্রায় নেই। তাই খাতায়-কলমে শুভেন্দুর হাজিরাও সবথেকে কম। শুভেন্দু অবশ্য বলছেন, “এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচের হিসেবে আমি কিন্তু প্রথম সারিতে। গোটা বিশেক বিতর্কে অংশ নিয়েছি।”
অনেকেই বলেন, সংসদের বরাবরের রীতি হল, অন্য পেশা, বিশেষত বিনোদনের জগৎ থেকে আসা সাংসদেরা কিছুদিন পরেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। ব্যতিক্রম রাজ্যের দুই চিত্রতারকা সাংসদ তাপস পাল ও শতাব্দী রায়। তাপসের হাজিরা ৭২ শতাংশ, শতাব্দীর ৭৫ শতাংশ। দু’জনেই আধ ডজন করে বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। শতাব্দী বলছেন, “লোকসভায় জেতার পরে সবাই প্রশ্ন করেছিল, সেলেব্রিটিরা সংসদে আসেন না, নির্বাচন কেন্দ্রে যান না। আপনি কী করবেন? বলেছিলাম, পাঁচ বছর পরে উত্তর দিতে পারব।” আর পাঁচ বছর পরে? শতাব্দী বলছেন, “সংসদে আমাকে সবাই চিনতেন। অনেক পোড়খাওয়া সাংসদই আমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছেন। সংসদ থেকে সংসদীয় কেন্দ্র, দু’টোতেই সমান হাজিরা দিয়েছি।” তবে শতাব্দীর দলেরই চৌধুরী মোহন জাটুয়া, নুরুল ইসলামের হাজিরার শতকরা হার চল্লিশেরও নীচে। তৃণমূলের বিদ্রোহী সাংসদ কবীর সুমনের ক্ষেত্রে তা ৩২ শতাংশ। হাজিরায় মহিলা সাংসদদের মধ্যে এগিয়ে সিপিএমের সুস্মিতা বাউড়ি ও তৃণমূলের রত্না দে নাগ।
সব দলের অধিকাংশ নেতা অবশ্য একটা বিষয়ে একমত যে, সংসদে হাজিরাই সব নয়। তাঁদের ব্যাখ্যা, অনেকে সংগঠনের কাজে ব্যস্ত থাকেন। অনেকে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে বেশি নজর দেন। কিন্তু যাঁরা পাঁচ বছর শুধুই লোকসভায় যান অথচ সংগঠন বা নির্বাচনী কেন্দ্রে নজর দেন না, তাঁদের অনেকেই পরের বার হেরে যান। সাংসদ জীবনের দীর্ঘ ইনিংস সদ্য ডিক্লেয়ার করা গুরুদাস দাশগুপ্ত অবশ্য বলছেন, “যাঁরা সংসদে এসেও যে সব বিষয়ে আমজনতার স্বার্থ জড়িত তা নিয়ে সরব হন না, তাঁরা ভোটারদের প্রতিই অন্যায় করেন।”
গুরুদাস, বাসুদেব আচারিয়া, সৌগত রায়দের হাজিরার শতকরা হার কারও ৯০-এর বেশি, কারও ৯০ ছুঁইছুঁই। সৌগত প্রথম সাংসদ হন ১৯৭৭-এ। তার পর আবার ২০০৯। বাসুদেব-গুরুদাসরা আটের দশক থেকে লাগাতার সংসদে। সিপিআইয়ের গুরুদাস, প্রবোধ পণ্ডা, ফরওয়ার্ড ব্লকের নৃপেন্দ্রনাথ রায়, নরহরি মাহাতো, আরএসপির মনোহর তিরকেরা অন্য এক নজিরও গড়েছেন। পাঁচ বছরে সরকারের উদ্দেশে প্রত্যেকে পাঁচশোরও বেশি প্রশ্ন ছুড়েছেন। কাছাকাছির মধ্যেই আছেন আরএসপির প্রশান্ত মজুমদার। সবাই সব বিতর্কে অংশ নিতে পারেননি, কিন্তু প্রশ্ন তুলে সরকারের তথ্য বার করে আনার কাজটি করে গিয়েছেন।
|
রাজ্যের প্রথম পাঁচ |
হাজিরায় |
প্রশ্ন তোলায় |
অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ৯৯%
শেখ সাইদুল হক ৯৭%
সৌগত রায়, মহেন্দ্রকুমার রায় ৯৪%
সুস্মিতা বাউড়ি ৯৩%
পুলিনবিহারী বাস্কে ৯২% |
নরহরি মাহাতো ৬৫০
নৃপেন্দ্রনাথ রায় ৬৩৬
মনোহর তিরকে ৬০২
প্রবোধ পণ্ডা ৫৮১
গুরুদাস দাশগুপ্ত ৫০৫ |
(সূত্র: পিআরএস লেজিসলেটিভ ব্রাঞ্চ,
লোকসভার শেষ অধিবেশনের প্রথমার্ধ পর্যন্ত) |
|
|
|
![](https://archives.anandabazar.com/newimages/blank.gif) |
|
|